ধোনির আঙুলের রহস্যজনক চোট নিয়ে নতুন বিতর্ক

এটা মোটেও এমএইচ ৩৭০ নিখোঁজ হওয়ার মতো জটিল আন্তর্জাতিক সমস্যা নয় যে তন্নতন্ন খুঁজেও সমাধান মিলবে না। এটা নিতান্তই ছোট একটা জট, দু’মিনিটে যার সমাধান করার জন্য ফেলুদাকেও দরকার নেই। ধাঁধাটা হল, সোমবার রাতে মালিঙ্গার বিরুদ্ধে তাঁর টিম এমন বিপন্ন হয়ে হারের মুখে দেখেও কেন ব্যাট করতে নামলেন না ভারত অধিনায়ক? সত্যিই কি তাঁর হাতে কোনও চোট রয়েছে যা নিয়ে তিনি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলছেন?

Advertisement

গৌতম ভট্টাচার্য

ঢাকা শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৪ ০২:০৯
Share:

প্র্যাকটিসের পথে ধোনি।

এটা মোটেও এমএইচ ৩৭০ নিখোঁজ হওয়ার মতো জটিল আন্তর্জাতিক সমস্যা নয় যে তন্নতন্ন খুঁজেও সমাধান মিলবে না। এটা নিতান্তই ছোট একটা জট, দু’মিনিটে যার সমাধান করার জন্য ফেলুদাকেও দরকার নেই।

Advertisement

ধাঁধাটা হল, সোমবার রাতে মালিঙ্গার বিরুদ্ধে তাঁর টিম এমন বিপন্ন হয়ে হারের মুখে দেখেও কেন ব্যাট করতে নামলেন না ভারত অধিনায়ক? সত্যিই কি তাঁর হাতে কোনও চোট রয়েছে যা নিয়ে তিনি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলছেন?

এমন দিনেই বিতর্কটা উঠল যে দিন মিডিয়া চ্যানেলের বিরুদ্ধে তাঁর একশো কোটি টাকার মানহানির মামলার খবরে সরগরম পড়ে গিয়েছে। মিডিয়ার কাছে ভারত অধিনায়কের আক্রান্ত হওয়া এবং বিপক্ষে নানান অভিযোগ নতুন কিছু নয়। আজহার থেকে কপিল— অনেকেই সহ্য করেছেন। জীবিত এবং মৃত ভারত অধিনায়কদের মধ্যে ধোনিই প্রথম যিনি সরাসরি মিডিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করে বসলেন। আর সেই মামলার খবর জানাজানির দিনেই কি না তাঁকে ঘিরে তৈরি হয়ে গেল নতুন বিতর্ক!

Advertisement

গতকাল ওয়ার্ম আপ ম্যাচের শেষ ওভার যখন হচ্ছে তখনও দর্শকদের ধারণা ছিল এই বোধহয় ধোনি নেমে একটা ছক্কায় জিতিয়ে দেবেন দেশকে। ভারতীয় মিডিয়াও তাই ভেবেছিল। আর কে না জানে, ক্রিকেট সার্কিটে মালিঙ্গাকে সবচেয়ে ভাল খেলেন ধোনি। খেলার আগে প্রেসবক্সে যে টিমলিস্ট দেওয়া হয়েছিল তাতে ছিল ব্যাট করবেন না তিন জন— ধোনি, মোহিত শর্মা আর শামি। কিন্তু এত চাপের মুখে যেখানে টিম হাডল করে নামছে। যেখানে ওই রকম রুদ্ধশ্বাস অবস্থায় ডাগআউটে যুবরাজ, রায়নারা দাঁতে দাঁত চেপে বসা। সেখানে এই সব প্র্যাকটিস ম্যাচে নিয়ম যথেষ্টই শিথিল করা যায়। এগারো জন ব্যাট করলেই হল। তা হলে অমিত মিশ্রর বদলে ধোনি এলেন না কেন?

সাংবাদিক সম্মেলনে বিজিত দলের কাউকে পাঠানো হয়নি। আইসিসি ক্ষুব্ধ ভারতীয় সাংবাদিকদের বোঝায়, ওয়ার্ম আপ ম্যাচে কারও আসা বাধ্যতামূলক নয়। আসতেও পারে, না-ও আসতে পারে। শ্রীলঙ্কা যদিও এসেছিল। তাই ভারতীয় ব্যাখ্যা জানা যায়নি। আর ধোনির কিপিং করেও ব্যাট না করার রহস্য আবিষ্কৃত হয়নি। ম্যাচ শেষে ধোনি অবশ্য স্টার স্পোর্টসে সাক্ষাৎকার দেন। প্রেসবক্সে টিভি সব সময় মিউট করে রাখায় ধোনি কী বললেন, শোনা যায়নি। সকাল থেকে ভারতীয় নিউজ চ্যানেল অবশ্য খবর করা শুরু করে তিনি বলেছেন আঙুলে হালকা চোট রয়েছে। তাই পাক ম্যাচের আগে ঝুঁকি নিলেন না।

এটাই কি ব্যাট করতে না নামার কারণ? শোনামাত্র তীব্র প্রতিবাদ করেন ভারতীয় মিডিয়া ম্যানেজার আর এন বাবা। “একদম বাজে প্রচার। হাতে কোনও চোট নেই ওর। এ রকম কোনও কথা ও স্টার স্পোর্টসকে বলেওনি। কাল ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় ওর কাছেই তো আমি ছিলাম।” বাবা রাগত সুরে বলতে থাকেন, “যারা এ সব প্রচার করছে তাদের কি কোনও বুদ্ধিসুদ্ধি নেই? হাতে চোট থাকলে ও কুড়ি ওভার কিপিং করল কী করে?” ইন্টারভিউটা নিয়েছিলেন হর্ষ ভোগলে। দুপুরে তাঁকে জিজ্ঞেস করায় বললেন, “হ্যাঁ হালকা চোটের কথা বলল তো। বলে বলল, তরুণরা সুযোগ পাক না। আর আমার শুক্রবারের বড় ম্যাচের আগে ঝুঁকি নিয়ে লাভ কী?”

ধাঁধাটাকে আরও জটিল করে দিয়ে এ দিন ভারতীয় অনুশীলনে ধোনি ব্যাট করলেন প্রায় দু’ঘণ্টা। নারায়ণগঞ্জের কাছে ফাতুল্লাহ মাঠের নেটে তাঁর ব্যাট করার প্রতি আগ্রহ দেখে অনেকের সচিনকে মনে পড়ছিল। গত কাল রাতে যে হালকা চোটের জন্য ঝুঁকি নেয়নি, সে আজ ঝুঁকি নিয়ে দু’ঘণ্টা নেটে কেন? নাকি মিডিয়াকে প্রমাণ দিচ্ছিলেন, চোট যে নেই স্বচক্ষে দেখে নে রে! প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার কোনও অবকাশ নেই। নইলে দু’টো প্রশ্ন করার জন্য ভারতীয় সাংবাদিককুল এখুনি তৈরি।

প্রশ্ন নম্বর এক: এশিয়া কাপ থেকে সরে দাঁড়ানোর সময় আপনার হয়ে বোর্ড বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল, কুঁচকিতে চোট রয়েছে। মাঝখানের সময় আপনি বিজয় হাজারে ট্রফিও খেলেননি। তা হলে আঙুলে চোটটা লাগল কী করে?

প্রশ্ন নম্বর দুই: আঙুলে চোট থাকলে কুড়ি ওভার কিপিং এক ওভার ব্যাটিংয়ের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক। চোট থাকলে আবার কিপিং করলেন কেন?

প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া গেলেও ভারতীয় সাংবাদিকদের লাভাস্রোত কিন্তু ক্রমশ বাড়ছে।


প্র্যাকটিসের পথে রায়না।

এমনিতে ধোনি সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে, অন্য জায়গায় যেমনই থাকুন, আইসিসি টুর্নামেন্ট এলেই তাঁর অন্য চেহারা। ইংল্যান্ডে তাঁর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় থেকে ধারণাটা প্রাচীন অরণ্য প্রবাদ হওয়ার দিকে এগোচ্ছে। কিন্তু এ বার টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই যা ভাবগতিক, বুধবার ইংল্যান্ডের সঙ্গে ওয়ার্ম আপ ম্যাচও হেরে বসলে পাকিস্তান ম্যাচের আগে মারাত্মক চাপ তৈরি হবে।

অস্ট্রেলীয়দের ওপেন মিডিয়া সেশনে এ দিন শেন ওয়াটসনদের মনোভাব দেখে মনে হল, এই একটা ট্রফিই ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন অফিসের ক্যাবিনেটে নেই আর সেটা বগলদাবা করার জন্য অ্যাসেজজয়ী অস্ট্রেলিয়ার মনোভাব এখন তুঙ্গে। ওয়াটসন-ক্যামেরন হোয়াইটরা নতুন কোচের জমানায় এই সাফল্যের মধ্যে একেবারে জ্বলজ্বল করছেন। ভারতের গ্রুপেই রয়েছে এখনকার টি-টোয়েন্টি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন গেইল, নারিনদের ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশ মনে হচ্ছে সেই সুপার টেনের লড়াইয়ে পৌঁছবে। দেশের মাঠে এমন উগ্র জনসমর্থনসহ এই ফর্ম্যাটে তারাও ফেলে দেওয়ার মতো হবে না। সব মিলিয়ে ভারতের গ্রুপটাই গ্রুপ অব ডেথ— যেখান থেকে যাবে মাত্র দু’টো টিম।

মৃতদের তালিকায় নাম না লেখানোর জন্য যাঁদের ঝকঝকে থাকা দরকার, তাঁদের একজন সুরেশ রায়নাকে কিন্তু ঝকঝকেই দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে এশিয়া কাপ থেকে বাদ পড়ার সময় নিজের পুল শটটা নিয়ে যথেষ্ট খেটেছেন। তাঁর পা-ও নড়ছে ভাল। যেটা এক মাস আগেও নড়ছিল না। তুলনায় যুবরাজকে তত উজ্জ্বল না দেখালেও রান পেয়েছেন। সম্ভবত সে জন্যই যুবিকে এ দিন টেনশন ফ্রি দেখলাম। যতই হোক প্রস্তুতি ম্যাচ, বকলমে অনেকের কাছে এটাই ছিল বিশ্বকাপের উদ্বোধনী টাই। বরুণ অ্যারন আর একজন। আপাতত গতির সঙ্গে কমন সেন্স যোগ করার ট্রেনিং সরণিতে আছেন। তাঁকেও এশিয়া কাপের তুলনায় স্বচ্ছন্দ দেখাচ্ছে।

কিন্তু মৃতদের গ্রুপ থেকে জীবনে ফিরতে আরও জীবনীশক্তি চাই। বুধবার স্টুয়ার্ট ব্রডদের টিমকে হারালেও সে সম্পর্কে নিশ্চিত থাকা যাবে না। এই ইংল্যান্ড অ্যাসেজে মার খেয়ে যেন অর্ধমৃত। হ্যাংওভার এখনও কাটেনি। মৃত্যু-উপত্যকার জন্য তৈরি হওয়ার আদর্শ প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। ধোনির আঙুল তাই আর এক দিন বিশ্রাম নিয়ে নেট কভার করতে আসা সাংবাদিকদের জন্য তৈরি হতে পারে।

মঙ্গলবার। ছবি: দেবাশিস সেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement