বোর্ডের নয়া দমন-নীতি

ধোনিদের সঙ্গে হাই-হ্যালোও করা যাবে না

বেশ কিছু দিন ধরেই ক্রিকেট সার্কিটে বলাবলি চলছিল, ধোনির টিম ইন্ডিয়ার সঙ্গে ভারতীয় মিডিয়ার সম্পর্ক সর্বকালীন নিকৃষ্ট স্তরে পৌঁছেছে। নেপথ্যে যার আসল উস্কানি জোগাচ্ছে ভারতীয় বোর্ড। মঙ্গলবারের ঢাকা এই বলাবলিকে ভুল প্রমাণ করে দেখাল, সম্পর্ক তলানিতে যাওয়ার আরও কিছু ধাপ অবশিষ্ট ছিল। যার একটা এ দিন সম্পূর্ণ হল।

Advertisement

গৌতম ভট্টাচার্য

ঢাকা শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৪ ০২:১৩
Share:

বেশ কিছু দিন ধরেই ক্রিকেট সার্কিটে বলাবলি চলছিল, ধোনির টিম ইন্ডিয়ার সঙ্গে ভারতীয় মিডিয়ার সম্পর্ক সর্বকালীন নিকৃষ্ট স্তরে পৌঁছেছে। নেপথ্যে যার আসল উস্কানি জোগাচ্ছে ভারতীয় বোর্ড।

Advertisement

মঙ্গলবারের ঢাকা এই বলাবলিকে ভুল প্রমাণ করে দেখাল, সম্পর্ক তলানিতে যাওয়ার আরও কিছু ধাপ অবশিষ্ট ছিল। যার একটা এ দিন সম্পূর্ণ হল। ভারতীয় মিডিয়াকে জানিয়ে দেওয়া হল, প্রেস কনফারেন্স ছাড়া কোথাও, এমনকী হোটেলের লবি বা ড্রেসিংরুমের বাইরে পাবলিক প্লেসেও তাঁরা প্লেয়ারদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। কার্যত আজকের পর যা দাঁড়াল, ভারতীয় ক্রিকেটারের কাছে যাওয়াই নিষিদ্ধ।

ঘটনার সূত্রপাত দুপুরে ভারতীয় দল যখন প্র্যাকটিসে যাওয়ার জন্য একে একে টিম বাসে উঠছে। যদিও অনুশীলন আজ বাধ্যতামূলক ছিল না, তবু গতকাল রাতে পাঁচ রানে হারের পর অশ্বিন বাদে মোটামুটি সবাই গেছিলেন। দু’এক জন বাসে উঠে যাওয়ার পর বিরাট কোহলি একা লবি দিয়ে মৃদুমন্দ হাঁটতে হাঁটতে আসছিলেন। দিল্লিনিবাসী ‘আজ তক’-এর পরিচিত সাংবাদিক তাঁকে দেখতে পেয়ে হাত নেড়ে কথা বলছিলেন। বিরাটও দাঁড়িয়ে যান। কিন্তু ছুটে আসেন ভারতীয় দলের মিডিয়া ম্যানেজার ডক্টর বাবা। তিনি বেশ কিছুটা দূরে ছিলেন। সাংবাদিককে রীতিমতো তিরস্কার করে বলেন, এখানে কোনও কথা নয়। টিম হোটেলে ঢুকলেন কী করে? আর প্লেয়ারের সঙ্গে কথাও বলবেন না। সাংবাদিক তখন প্রতিবাদ করেন, “এটা পাবলিক প্লেস। আমি কথা বলব না কেন?” কোহলি তখন কথা না বাড়িয়ে বাসে উঠে যান।

Advertisement

এর পর একা আসছিলেন ধোনি। আনন্দবাজারের সাংবাদিক তাঁকে দেখতে পেয়ে কুশল বিনিময় করছিলেন। ধোনি গতকালই জি স্পোর্টস গ্রুপের বিরুদ্ধে একশো কোটি টাকার মামলা করেছেন। দেশজ মিডিয়ার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নামতে নামতে যেখানে গেছে, ভাবাই যায় না। অনুশীলনে এ দিন ষাট-সত্তর গজের বড় বড় হিট তিনি করেছেন। উল্টো দিকে দাঁড়িয়েছিল মিডিয়া। তীব্র আলোচনা শুরু হয়, নির্ঘাত আমাদের টিপ করে মারছে! দু’জন সাংবাদিকের মৃদু চোটও লাগে রকেটের মতো ধেয়ে আসা ধোনির সেই সব শটে। ভারতীয় টিম থেকেই তাঁদের শুশ্রূষার ব্যবস্থা হয়।

এবিপি-র সঙ্গে অবশ্য ভারত অধিনায়ক কোনও অভদ্রতা করেননি। দাঁড়িয়ে গেছিলেন কথা বলার জন্য। হঠাৎ মধ্যিখানে এসে দাঁড়িয়ে পড়েন টিমের দক্ষিণ আফ্রিকান নিরাপত্তারক্ষী। বললেন, “আমাদের প্লেয়ারদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। বারণ আছে।” তাঁকে বলি, বারণ তো আছে প্লেয়ারের ঘরে যাওয়ার ব্যাপারে। হোটেলের লবিতে কথা বলা যাবে না কেন? তা-ও যদি প্লেয়ারের সমস্যা না থাকে। তাঁকে বলি, আপনার আরও বেশি করে আপত্তি জানানোর এক্তিয়ার নেই যেখানে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক আর প্লেয়ার একই হোটেলে। লবি ব্যবহার করার দু’জনেরই সমান অধিকার। তা ছাড়া প্লেয়ার তো কোনও বিরক্তি প্রকাশ করেনি।

নিরাপত্তারক্ষী অনড়, “এটাই এখন নিয়ম। কোনও প্লেয়ারের কাছে যাওয়া যাবে না। মিডিয়াও তার মধ্যে পড়ছে।” ধোনি দু’এক মিনিট দাঁড়িয়ে ততক্ষণে বাসের দিকে। স্পষ্টই বোঝা গেল, এই সমস্যার সমাধানে তাঁর কোনও তাড়াহুড়ো নেই।

এর পর ভারতীয় দলের দায়িত্বে থাকা বিদেশি নিরাপত্তারক্ষীরা প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও-এর লবিতে নির্দেশ দেন, আমাদের টিম বার হওয়া বা ফেরার সময় কখনও কেউ যেন কাছাকাছি না আসতে পারে লক্ষ রাখবেন।

কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন বাংলাদেশ বোর্ডের প্রভাবশালী সদস্য। ভারতীয় দলের সঙ্গে নানা ব্যাপারে গত ক’দিন তাঁকে লিয়াজোঁ করতে হচ্ছে। তিনি উত্তেজিত ভাবে বলতে থাকেন, “ইন্ডিয়ান টিমের বায়নাক্কায় আমরা পাগল হয়ে যাচ্ছি। আর কেউ এ সব করে না। এই জন্যই টিমটার এই অবস্থা।” বাংলাদেশ বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ কর্মীটি আরও বলেন, “এ বার তো ইন্ডিয়ান টিমের জন্য কোনও ভিড় নেই। আগে সচিন এলে সোনারগাঁও-এর লবি ভরা থাকত। কই তখন তো কোনও সমস্যা হয়নি। এ বার এত বায়নাক্কা করে পাগল করছে কেন?”

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত ভাল খেলছে না বেশ অনেক বছর হয়ে গেল। কিন্তু এ বারের মতো দমন-নীতি কখনও দেখা যায়নি। ক্রিকেটমহলে অনেকের মনে হচ্ছে, টিম যত চাপের মধ্যে যাচ্ছে। যত আইপিএল বেটিং নিয়ে লেখালিখি, ধোনির বিরুদ্ধে অভিযোগ দিনের আলোয় আনা হচ্ছে। তত বোর্ড এবং ভারত অধিনায়ক মিডিয়াকে আক্রমণে উদ্যত হচ্ছেন। আর একটা তত্ত্ব হল, বেটিং এবং অপরিচিত লোকের সঙ্গে যোগাযোগ নিয়ে এমন অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি যে, টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী পাকিস্তান ম্যাচের আগে বোর্ড সামান্যতম ঝুঁকি নিতে চাইছে না। আবার যদি কোনও তুচ্ছ ঘটনাও হয়— শ্রীনির ওপর চাপ আরও বাড়বে।

মনে হচ্ছে না দ্বিতীয় তত্ত্বটা ঠিক বলে। শুক্রবার পাকিস্তানকে ভারত হারিয়ে দিলেও পারস্পরিক সম্পর্কে কোনও ফুরফুরে ভাব উদিত হবে না। সম্পর্কটা অন্তত শ্রীনি-ধোনির আমলে বহু দিনই আউটবক্সে ছিল।

এ বার সেটা ট্র্যাশে চলে গেল!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement