হেলিকপ্টারে আহত নেইমার বাড়ি যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রাজিলের কাপ পাওয়ার সম্ভাবনাটাও কি শেষ হয়ে গেল? ব্রাজিল জুড়ে এই প্রশ্নটাই ঘুরছে এখন। এর মধ্যে আবার শেষ চারে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের হুমকি দিয়ে রেখেছে জার্মান শিবির। সব মিলিয়ে মাঠে নামার আগেই ব্যাকফুটে ব্রাজিল।
তবে এমন সংকটেও পাল্টা জবাব তৈরি রাখছে ব্রাজিলের শিবির। যার প্রথম চালই হল জার্মানদের বিরুদ্ধে দলকে তাতাতে সেমিফাইনালে নেইমারকে বেলো হরাইজন্তের রিজার্ভ বেঞ্চ বা গ্যলারিতে হাজির করানো। “যদি সম্ভব হয় তা হলে বেঞ্চে বা গ্যালারিতে থাকবে নেইমার। ইতিমধ্যেই ওকে সেটা বলা হয়েছে। তবে গোটাটাই নির্ভর করছে আগামী ক’দিনে ওর চোট কী রকম থাকে তার উপর,” বলেন লুই ফিলিপ স্কোলারি। সঙ্গে ব্রাজিল কোচ আরও যোগ করেন, “যদি ওর শরীর দেয় তা হলে আমি নিশ্চিত নেইমার সে দিন উৎসাহ দিতে হাজির হবেই।”
দ্বিতীয় চাল, কার্ড সমস্যায় ক্যাপ্টেন থিয়াগো সিলভার সেমিফাইনালে নামতে না পারার বিরুদ্ধে ফিফায় পাল্টা আবেদন। কলম্বিয়া ম্যাচে গোলকিপারকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেছিলেন সিলভা। যেটা টুর্নামেন্টে তাঁর দ্বিতীয় হলুদ কার্ড। তাই জার্মানি ম্যাচে তিনি মাঠে নামতে না পারার নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে যান। ফিফা এ দিন ব্রাজিলের আবেদনের ব্যাপারটা স্বীকার করে নিলেও ব্রাজিল ক্যাপ্টেনের শাস্তি ওঠার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কেননা সাধারণত লাল কার্ডের বিরুদ্ধে আবেদন করার নজির থাকলেও হলুদ কার্ডের ক্ষেত্রে নেই। তার উপর ফিফা থিয়াগো সিলভার শাস্তি তুলে নিলে বিতর্কের ঝড় বয়ে যাবে। ফের আয়োজক দেশকে ‘টেনে’ খেলানোর অভিযোগ উঠতে পারে ফিফার বিরুদ্ধে।
তৃতীয় চাল সতীর্থদের উদ্দেশে নেইমারের ভিডিও বার্তা। যিনি চোট পাওয়ার পর পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন। কোচ স্কোলারিই তা জানান, “চোটটা লাগার পরই নেইমারের কাছে ছুটে যায় মার্সেলো। কতটা চোট লেগেছে জিজ্ঞেস করে নেইমারকে। তখন ও বলে, পায়ে কোনও সাড় পাচ্ছি না।” যদিও এখন সে রকম কোনও ভয় নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন ব্রাজিলের টিম চিকিৎসক। আর সতীর্থদের নিজের ভিডিও বার্তায় আশ্বস্ত করছেন নেইমার স্বয়ং। যাতে তিনি বলেছেন, “ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন এখনও শেষ হয়ে যায়নি। আমার বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে সতীর্থরা যা যা সম্ভব সব করবে।” সঙ্গে নেইমার আরও বলেছেন, “বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলাটা আমার স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন চুরি করা হয়েছে। তবে আমি নিশ্চিত বিশ্বকাপ আমরাই জিতব, ব্রাজিলই চ্যাম্পিয়ন হবে। আমার স্বপ্ন সতীর্থরাই পূরণ করবে।”
সতীর্থরা নেইমারের বার্তার কতটা উদ্দীপ্ত হবেন সেটা জানা নেই। তবে দাভিদ লুইজ, ফ্রেডদের মধ্যে হতাশা কাটিয়ে উঠে দাঁড়ানোর লড়াইটা শুরু হয়ে গিয়েছে, “এমন পরিস্থিতিতে পরিণত হয়ে উঠতে হবে আমাদের। একজন খুব গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ারকে না পাওয়ার দুঃখ রয়েছে ঠিকই, তাও এমন কেউ যে বিশ্বকাপ জিতে নিজের স্বপ্নপূরণের চেষ্টা করছিল,” বলেন দাভিদ লুইজ। টিমের স্ট্রাইকার ফ্রেড বলেন, “এই পর্যায়ে আসতে নেইমার কতটা পরিশ্রম করেছিল সেটা ভাবলেই দুঃখটা আরও বেড়ে যাচ্ছে। জানি ও দলের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তবে ভেঙে পড়লে চলবে না, টিমের সবাইকে বুঝতে হবে এখনও আমাদের দলে লড়াই করার মতো শক্তি রয়েছে।”
কিন্তু নেইমারের জায়গায় কাকে পরিবর্ত হিসেবে নামাতে পারেন স্কোলারি? শোনা যাচ্ছে রিজার্ভ স্ট্রাইকার বার্নার্ড বা জো-এর বদলে উইলিয়ান, হার্নানেস বা রামিরেজের মতো মিডফিল্ডারদের নামাতে পারেন ‘বিগ ফিল’। সেখানেও অবশ্য একটা সমস্যা রয়েছে। শনিবারই প্র্যাকটিসে পিঠে চোট পেয়েছেন উইলিয়ান। প্র্যাকটিসের মাঝপথে তাঁকে বেরিয়ে যেতেও দেখা যায়। আঘাত কতটা গুরুতর সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু জানায়নি ব্রাজিল শিবির।