প্রায় ৬০ গজ দূর থেকে একটা ভলি। যা অবিশ্বাস্য ভাবে বাঁক খেয়ে গোলে ঢুকে গেল। এবং আপটন পার্কে ওই একটা গোলের পর ব্রিটিশ প্রচারমাধ্যমে নতুন করে ভেসে উঠল পুরনো একটা প্রবাদ: ‘বেন্ড ইট লাইক বেকহ্যাম’। একই সঙ্গে ডার্বির আগে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে স্বস্তি এনে দিল ওই একটা ভলি।
তাঁর আমলে ম্যান ইউ ভক্তরা এ রকম অনেক গোল দেখেছেন, যখন ডেভিড বেকহ্যামের মারা শট বাঁক খেয়ে ঢুকে যেত গোলে। শনিবার রাতে সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনলেন ওয়েন রুনি।
ওয়েস্ট হ্যামের বিরুদ্ধে শুরুতেই তারকা স্ট্রাইকার অবিশ্বাস্য শটে বল জালে জড়িয়ে দেন। আপটন পার্কে ম্যাচের সাত মিনিটে সেন্টার লাইন টপকেই রুনি লক্ষ্য করেন গোলকিপার আদ্রিয়ান কিছুটা এগিয়ে এসেছেন। দুরত্বটা মেপে নিয়েই সঙ্গে সঙ্গে ভলি করেন ম্যান ইউ তারকা। ওয়েস্ট হ্যাম গোলকিপারও প্রথমে কিছুটা হতভম্ব হয়ে যান। সম্বিত ফিরতেই আদ্রিয়ান গোলের দিকে ফেরার চেষ্টা করেন। কিন্তু ততক্ষণে বল তাঁকে টপকে গোললাইনের সামনে এক বার বাউন্স করে জালে জড়িয়ে যায়। প্রথমার্ধের শেষ দিকে ফের রুনির গোলেই ম্যাচে ২-০ জেতে ম্যান ইউ।
১৮ বছর আগে উইম্বলডনের বিরুদ্ধে এ ভাবেই গোল করে চমকে দিয়েছিলেন বেকহ্যাম। শনিবারের ম্যাচেও স্টেডিয়ামে ছিলেন বেকস্। টিভি ক্যামেরায় বেকহ্যামকে ভিভিআইপি বক্সে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতেও দেখা যায়। এর পরই ফুটবল মহলে জল্পনা শুরু হয়ে যায়, কোনটা ভাল? সে দিনের বেকহ্যামেরটা, না এ দিনের রুনিরটা? সাধারণত নিজের প্রশংসা করতে দেখা যায় না রুনিকে। এ বার কিন্তু বেকহ্যামের গোল নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই তিনি বলে দেন, “অবশ্যই ওই গোলটার থেকে ভাল এটা।” তিনি নিজেও কি চমকে গিয়েছিলেন গোলটা করে? গোটা স্টেডিয়ামের দর্শক চমকে গেলেও রুনি কিন্তু খুব একটা আশ্চর্য হননি। নিজের স্কিল নিয়ে বিশ্বাসটা ছিল। “এটা সহজাত প্রবৃত্তি। দ্রুত এক বার শুধু দেখে নিয়েছিলাম কোথায় শটটা মারতে হবে। প্র্যাকটিসেও এমন শট আগে অনেক বার চেষ্টা করেছি। তবে সব সময়ই যে সফল হয়েছি তা নয়,” বলেন রুনি।
অবিশ্বাস্য সেই গোলের কোলাজ। সবিস্তার...
ছ’দিন আগেই লিভারপুলের কাছে ০-৩ হারতে হয়েছিল। যে ম্যাচের পর রুনি বলেছিলেন, “কেরিয়ারের জঘন্য দিনগুলোর অন্যতম।” দু’গোলে পিছিয়ে থেকেও সেখান থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে ম্যান ইউ। তার পর ওয়েস্ট হ্যাম ম্যাচে তাঁর এই আগুনে ফর্ম। মঙ্গলবার ম্যাঞ্চেস্টার সিটির বিরুদ্ধে ডার্বিতে কি ‘রেড ডেভিলস’রা অন্য কোনও চমক দিতে পারে? ম্যান ইউ তারকা বলে দেন, “গত সপ্তাহের হারের পর এই জয়টা ভীষণ প্রয়োজন ছিল। অলিম্পিয়াকোসের বিরুদ্ধে জয়টা আমাদের অনেকটা চাঙ্গা করতে সাহায্য করেছে। সেটা এখন টিমের আত্মবিশ্বাস দেখলেই পরিষ্কার হবে। জয়ের প্রভাবটা সত্যিই দুরন্ত। এই ম্যাচেও আমরা দারুণ ফুটবল খেলেছি। এ বার সামনে ম্যান সিটির চ্যালেঞ্জ। ক্লাব আর সমর্থকদের কাছে বিরাট ম্যাচ। আমাদের কাছেও বড় চ্যালেঞ্জ।”
রুনির আগুনে ফর্ম দেখে ম্যান ইউ শিবিরে সবচেয়ে স্বস্তিতে বোধহয় কোচ ডেভিড মোয়েস। চলতি মরসুমের টানা ব্যর্থতায় প্রাক্তন টটেনহ্যাম কোচের উপর চাপ ক্রমশ বাড়ছিল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে দল ওঠার পর মোয়েসের কপালে আবার ভাঁজ পড়ে যায় টিমের অন্যতম স্ট্রাইকার রবিন ফান পার্সির চোটে। ডার্বির আগে তাই বোধহয় রুনির ফর্মে স্বস্তিতে মোয়েস। ম্যান ইউ কোচ বলে দেন, “ডার্বিতে আমরা পুরো আত্মবিশ্বাস নিয়েই নামব।” রুনির গোল নিয়ে বলেন, “দারুণ গোল। অসাধারণ স্কিল। যে ভাবে পরিকল্পনাটা করে দেখিয়েছে কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। আমার মনে হয় বেকহ্যামের গোলের কথা মনে পড়ছিল সবারই। দুটো গোলের মধ্যে কিছুটা মিল রয়েছে। একটাই আফশোস, আরও গোল হতে পারত, কিন্তু হল না।”
মোয়েসকে বোধহয় আরও একটা তথ্য কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে। প্রিমিয়ার লিগে চলতি মরসুমে এই প্রথম টানা তিনটে অ্যাওয়ে ম্যাচ জিতল ম্যান ইউ।