ফ্রেড। জয়ের গোল করে।
বিশ্বকাপে কোন অগ্নিপরীক্ষা তাঁর জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে, তা এখন ভাল মতোই টের পাচ্ছেন লুই ফিলিপ স্কোলারি।
প্রস্তুতি ম্যাচেও প্রত্যাশা মতো খেলতে না পারায় গ্যালারির টিটকিরি হজম করতে হল নেইমারদের। গ্যালারির গর্জন উঠল, “ব্রাজিল, ব্রাজিলের মতো খেলো। মাঠে নেমে গোল করো। আমরা গোল দেখতে এসেছি।” সঙ্গে সমালোচকদের তির: ঠিক মতো দল বাছতে পারেননি স্কোলারি। যার জবাবে ব্রাজিলিয়ান কোচ বলেছেন, “কী টিম নামাব, সেটা আমার ব্যাপার। টিম বাছার জন্য আমি টাকা পাই।”
শুরু থেকেই দেশের মানুষের বিক্ষোভ। তার পর হঠাৎ করে নেইমারের ব্যক্তিগত জীবনকে আক্রমণ। এ বার সমর্থকদের রোষ। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপের আগে ব্রাজিলিয়ান টিমের উপর চাপ যেন বেড়েই চলেছে।
বিশ্বকাপের শুরুতেই ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে মাঠে নামতে চলেছে ব্রাজিল। তার আগে ইউরোপীয় ঘরানার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সার্বিয়ার সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সিদ্ধান্ত নেন স্কোলারি। আক্রমণাত্মক দল সাজালেও প্রথমার্ধে কোনও গোল করতে পারেনি ব্রাজিল। ক্ষুব্ধ সমর্থকেরা বিরতির বাশি বাজতেই টিটকিরি দিতে থাকেন নেইমার-হাল্কদের। দ্বিতীয়ার্ধে ফ্রেডের গোলে ১-০ জয় পেল ব্রাজিল। তাতেও অবশ্য পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। ম্যাচ চলাকালীন প্রতি মিনিটেই বাড়তে থাকে ধিক্কারের আওয়াজ। ম্যাচ শেষ হতেই বিদ্রুপের বিস্ফোরণে স্টেডিয়াম ভরে যায়।
এই অবস্থায় স্কোলারিদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন পেলে। কিংবদন্তি এই ফুটবলার বলেছেন, বিশ্বকাপের আগে ব্রাজিল দলের ভর্ৎসনা নয় দরকার সমর্থন। যাঁর মতে ব্রাজিলে চলা প্রতিবাদের জন্যই জাতীয় দলের বিরুদ্ধে সমর্থকদের রাগ বাড়ছে। “ব্রাজিলিয়ান হওয়ার কারণে আমি চাই দেশে আরও হাসপাতাল ও স্কুলের সংখ্যা বাড়ুক। কিন্তু ব্রাজিলে চলা প্রতিবাদের সঙ্গে ফুটবলারদের কোনও সম্পর্ক নেই। ওরা কেউ দায়ী না এই পরিস্থিতির জন্য। তাই ওদেরকে আক্রমণ করা ঠিক নয়,” বলেন পেলে।
তবে ব্রাজিল টিম এই অবস্থাতেও কাউকে দুষতে রাজি নয়। দলের অন্যতম প্রধান ভরসা হাল্ক যেমন বলেছেন, “জাতীয় দলের হয়ে খেললে একশো শতাংশ দিতেই হবে। সমর্থকরা রাগ করতেই পারে। ওদের খুশি রাখার দায়িত্ব কিন্তু আমাদের।” ব্রাজিল অধিনায়ক থিয়াগো সিলভা আবার মনে করছেন, এই মুহূর্তে প্রস্তুতির দিকে নজর দেওয়াটা বেশি জরুরি। বলেন, “প্রথমার্ধে সার্বিয়া আমাদের ভালই চেপে ধরেছিল। তার মানে বোঝাই যাচ্ছে ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গেও সমস্যা হবে। দুই দলের খেলার ধরণ অনেকটাই এক রকম।”
একই দিনে আবার স্কোলারির জন্য অন্য ‘বোমা’ও অপেক্ষা করে ছিল। এক দিকে সমর্থকদের ব্যঙ্গ শোনার পাশাপাশি আবার স্পেনের স্ট্রাইকার দিয়েগো কোস্তা তাঁকে ‘মিথ্যাবাদির’ তকমা দিলেন। কিছু দিন আগেই স্কোলারি জানিয়েছিলেন যে কোস্তাকে ব্রাজিল দলে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। “আমি কোস্তাকে নিতাম দলে। ফোনে বলেওছিলাম তোমাকে ব্রাজিল নিয়ে যাব। জানি না ওর মত বদলালো কী করে,” বলেছিলেন স্কোলারি। কিন্তু ‘বিগ ফিলের’ সমস্ত কথাই মিথ্যা, এমনটাই বলছেন আটলেটিকো স্ট্রাইকার। “সব কিছুই ভুল। স্কোলারির সঙ্গে ফোনে আমার কোনও কথা হয়নি। একমাত্র ভিসেন্তে দেল বস্কির সঙ্গে কথা হয়। যিনি আমাকে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন যে তাঁর ভাবনায় আমি আছি।” শুধু এখানেই থামেননি কোস্তা। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে খেলতে হতে পারে কোস্তাকে। ঘরের মাঠে এই খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য স্কোলারিকে দোষী সাব্যস্ত করলেন স্প্যানিশ স্ট্রাইকার। “আমি ব্রাজিলিয়ান। এই জিনিসটা বদলাবে না। কিন্তু বিশ্বকাপ স্পেনের সঙ্গেই জিততে চাই,” বলেন স্প্যানিশ তারকা।
স্কোলারির মতোই কাঠগরায় উঠেছেন অস্কারও। পানামা ম্যাচের মতোই সার্বিয়ার বিরুদ্ধেও যথেষ্ট সাদামাটা দেখিয়েছে চেলসির তরুণ তারকাকে। শোনা যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই কোচের সতর্কবার্তা চলে এসছে অস্কারের কাছে। স্কোলারি বলে রেখেছেন, উন্নতি করতে না পারলে ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম দলে তাঁর নাম নাও থাকতে পারে। তার উপরে আবার উইলিয়ান ভাল খেলায় অস্কারের পরিবর্ত পেতেও অসুবিধা হবে না ‘বিগ ফিলের’। জবাবে অস্কার বলেন, “দুটো প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে বিচার করা যায় না কে ভাল। সবারই দিন আসে।”