খোশমেজাজ। অনুশীলনের ফাঁকে এক ভক্তের সঙ্গে স্যামি। ছবি: এএফপি
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে গ্রুপে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়বে ভারত রবিবার খেলা শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত এটাই ছিল জনমত। কিন্তু আরও একটা অসাধারণ পারফরম্যান্সের জোরে সব হিসেব ওলটপালট করে দিল ভারতীয় টিম। টুর্নামেন্টে এখনও পর্যন্ত এটাই ধোনিদের সেরা প্রদর্শন। তবে ম্যাচ থেকে ভারতের সেরা প্রাপ্তি অবশ্যই যুবরাজ সিংহের ফর্মে ফেরা। যুবরাজ রবিবার যে ভাবে ব্যাট করল তাতে গোটা টিম স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়েছে। যুবরাজও রান পেয়ে যাওয়ায় ভারত সেমিফাইনালে নামবে এই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে যে দলের প্রায় প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যান ভাল ছন্দে আছে। এটা গোটা দলকে চাগিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সঙ্গে মিরপুরের উইকেটে অমিত মিশ্র-রবিচন্দ্রন অশ্বিনদের যা দাপট দেখছি, দক্ষিণ আফ্রিকার কাজটা যে অসম্ভব কঠিন হবে সেটা এখনই বলে দেওয়া যায়।
টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্ব এ বার গুটিয়ে আসছে। শেষ চারের চেহারা অবশ্য এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। আজকের ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম পাকিস্তান ম্যাচের পরই বোঝা যাবে। আমার ধারণা, দারুণ আকর্ষণীয় একটা ক্রিকেট যুদ্ধ দেখব আমরা। দু’টো টিমই শুরুতে ভারতের কাছে হারার পর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দুর্দান্ত ঘুরে দাঁড়িয়ে লড়াইয়ে ফিরে এসেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুক্রবারের জয়টা অনেক দিন মনে থাকবে। টি-টোয়েন্টিতে ১৭৮ যথেষ্ট বড় স্কোর। কিন্তু ক্যারিবিয়ানরা যে ভাবে রান তাড়া করল, অসাধারণ! টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে পরে ব্যাট করে এটাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেরা পারফরম্যান্স। শুরুর ক্রিস গেইল-ঝড়ের সঙ্গে অধিনায়ক ড্যারেন স্যামির কথা আলাদা করে বলতে হয়। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শেষ দু’টো ওভার একেবারে বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে দলকে শেষ চারের লড়াইয়ে টিকিয়ে রাখল।
গেইলদের বিজয়োৎসবটাও ভোলার নয়। যদিও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আমরা এত দিন জিতে যে ভাবে আনন্দ করতে দেখে অভ্যস্ত, শুক্রবারের সেলিব্রেশনের ধরনটা তার থেকে আলাদা। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের আগে কখনও মাঠে এমন রাগতে দেখিনি! অ্যামব্রোজ, ওয়ালশের মতো মহাতারকাও যত রক্ত হিম করা দৃষ্টিতে প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রাখুক না কেন মুখে কখনও একটা শব্দ বের করত না। সে জন্যই স্যামি-গেইলদের শুক্রবারের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হল ওরা অনেক কিছু প্রমাণ করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে নেমেছিল। যা খুব ভাল ব্যাপার। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলটা হয়তো সে দিন এটা বুঝেছে যে, কিছু প্রমাণ করার জেদ নিয়ে মাঠে নামলে ওরা নিজেদের ছপিয়ে গিয়ে আরও ভাল খেলে। এবং এই ফরম্যাটে বিশ্বের যে কোনও দলকে হেসেখেলে হারাতে পারে।
আজ পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও স্যামি-বাহিনীর এই মানসিকতাটা দরকার। তবে পাকিস্তান কিন্তু অস্ট্রেলিয়া নয়। বরং মিরপুরের পিচ আর পরিবেশে প্রতিপক্ষ হিসাবে অস্ট্রেলিয়ার থেকে ওরা অনেক বেশি বিপজ্জনক। পাকিস্তানি স্পিনাররা এই পরিবেশে বল করা তারিয়ে উপভোগ করবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলেও অবশ্য বেশ কয়েক জন জাত স্পিনার আছে। তাই ব্যাটিংটা যাদের বেশি ভাল হবে, পাল্লা ঝুঁকবে তাদের দিকেই।
খাতায়-কলমে ব্যাটিং শক্তিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজই এগিয়ে। গেইল আর স্যামি ফর্মে ফেরায় ওদের ব্যাটিংকে আরও মজবুত দেখাচ্ছে। শেহজাদ আবার বাংলাদেশ ম্যাচে সেঞ্চুরি পাওয়ায় কিছুটা স্বস্তিতে পাকিস্তান ব্যাটিং। না হলে রান তোলার জন্য ওরা বড্ড বেশি উমর আকমলের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছিল। শেহজাদের মতো বাকিরা আজ ব্যাটিংয়ের দায়িত্ব আরও ভাগ করে নিলে পাকিস্তানকে হারানো কিন্তু সহজ হবে না।
মঙ্গলবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে
বাংলাদেশ : অস্ট্রেলিয়া (ঢাকা, বিকেল ৩টে)
পাকিস্তান : ওয়েস্ট ইন্ডিজ (ঢাকা, সন্ধে ৭টা)।