ট্রফি নিয়ে পেরেজ
শাখির সার্কিটে রেসে শুরু হতে তখনও চব্বিশ ঘণ্টার কিছু বেশি বাকি। এক সাক্ষাৎকারে ফর্মুলা ওয়ানের নয়া নিয়ম-কানুনকে “একদম ক্লান্তিকর” বলে খুল্লামখুল্লা সমালোচনা করেছিলেন। বাহরিনের প্রথম নৈশ রেসের পোডিয়ামে তৃতীয় সেরার ট্রফিটা হাতে ওঠার পর কিন্তু সেই সের্জিও পেরেজই বলছেন, “নতুন নিয়মে আমি দারুণ খুশি!”
সাফল্যের নিজস্ব জাদু আছেই। তবে হতাশার লম্বা অন্ধগলি পেরিয়ে এসে প্রাপ্তিটা যখন সেরাদের হারিয়ে ঘটে, তখন সেটা আরও মূল্যবান। পেরেজের একশো আশি ডিগ্রি মত বদলের কারণ সম্ভবত এটাই। সোমবার বিকালে বাহরিন থেকে টেলিফোন আলাপচারিতায় ফোর্স ইন্ডিয়ার মেক্সিকান তারকা বলছিলেন, “গত বছর ম্যাকলারেনের হয়ে সময় খুব খারাপ গিয়েছিল। মরসুমের শেষে সামনে কোনও বিকল্প নেই, প্রায় খাদের কিনারায় দাঁড়িয়েএমন সময় ফোর্স ইন্ডিয়ার প্রস্তাব পাই। তখনই ঠিক করেছিলাম, নিজের সমস্ত উজাড় করে দিয়ে চেষ্টা করব।” সেই প্রতিজ্ঞা থেকেই প্রথম যে সুযোগ পেলেন, তাতেই টিমকে পোডিয়ামে পৌঁছে দিতে পেরে এই মুহূর্তে টিমের নয়নের মণি তিনি। বিজয় মাল্য বলেছেন, “মশলা আছে বলেই ম্যাকলারেনের মতো বড় টিমে ডাক পেয়েছিল। ওর পোডিয়ামের জোরেই ফর্মুলা ওয়ানে সেরা রেসটা লড়লাম আমরা।”
ফোর্স ইন্ডিয়ার অন্দরমহলে পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চির পেরেজ সবার কাছে ‘চেকো’। ডাকনামটাই বেশি পছন্দ চব্বিশের তরুণের। স্যবার দলের হয়ে ২০১২-য় তিনটি পোডিয়াম পান। তবু রবিবারের অভিজ্ঞতা শোনানোর সময় উচ্ছ্বসিত গলায় “জীবনের অন্যতম সেরা রেস” কথাগুলো বললেন অন্তত বার চারেক। আত্মবিশ্বাসী যোগ করলেন, “পরের সাংহাই রেস এবং বাকি মরসুমে আরও ভাল করাটাই এখন লক্ষ্য।” আরও ভাল করার জন্য মার্সিডিজ, রেড বুল, ফেরারি-সহ বড় টিমগুলোর চাপ সামলাতে হবে। ফোর্স ইন্ডিয়া কি পারবে? উত্তরে, বাহরিনে রেড বুলের মতো দলের প্রবল চাপ সামলে তাঁরা লড়াইটা জিতেছেন মনে করিয়ে পেরেজ বলছিলেন, “মরসুম শুরুর আগে টেস্টিংয়েই কিন্তু বুঝে গিয়েছিলাম, নতুন নিয়মের সঙ্গে আমাদের গাড়ি ভাল মানিয়ে নিচ্ছে। ইঞ্জিনটা সবচেয়ে বড় অ্যাডভানটেজ। সেরাদের সঙ্গে লড়ার রসদ আমাদের আছে। তা ছাড়া আরও নতুন আপগ্রেড আসছে। গাড়ি আরও উন্নত হবে।”
তিন বছর পর ফর্মুলা ওয়ানে ফের চালু হয়েছে মাঝ-মরসুমের টেস্টিং। ফোর্স ইন্ডিয়ার মতো অন্যরাও টেস্টিং চালাবে এবং উন্নতি করবে। মরসুমের পরের দিকে প্রথম সারির দলগুলোর গতির সঙ্গে পাল্লা দেওয়া যাবে? পেরেজ মনে করছেন যাবে। বলছিলেন, “আমরা যে ইঞ্জিনে চালাচ্ছি, ম্যাকলারেন, উইলিয়ামসও সেটাই ব্যবহার করছে। কিন্তু আমাদের মতো সফল নয়। তার মানে গাড়ির বাদবাকিটায় এবং রেস স্ট্র্যাটেজি গড়ার ক্ষেত্রে আমরা এমন কিছু ঠিক করছি যা অন্যরা পারছে না।” এখানেই ফোর্স ইন্ডিয়া এগিয়ে, দাবি তাঁর।
নিজের সাফল্যে গাড়ির ভূমিকাটা স্বীকার করে নেওয়ার পাশাপাশি, টিমের ভুমিকাও মানছেন পেরেজ। মেক্সিকোর তারকা ফুটবলার জাভিয়ের হার্নান্দেজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ফুটবলের অন্ধ ভক্ত। নিজেও একটা সময় পেশাদার ফুটবলার হতে চেয়েছিলেন। বিশ্বের সেরা টিম স্পোর্টটা শেষ পর্যন্ত খেলা হয়নি। কিন্তু নিজের টিমের স্পিরিট নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন এ দিন। বললেন, “আমাদের টিমটা এই মুহূর্তে দারুণ জমাট। টেকনিশিয়ান থেকে কর্মকর্তা, প্রত্যেকের মধ্যে জেতার খিদেও তীব্র। খিদেটা আছে বলেই ট্র্যাকে নেমে ফের করে দেখাব আমরা!”
সাধে কী ফোর্স ইন্ডিয়ায় এই মুহূর্তের স্লোগানভামোস চেকো!