ছেলে ভোলানো ‘ঘূর্ণি’তে আটক বাংলার ভাগ্যচক্র

এক ঝাঁক জম্মু-কাশ্মীরি সমর্থক হাজির ইডেনে পরভেজ রসুলদের দেখতে। সারা দিন ধরে গলা ফাটিয়ে ইডেন মাতালেন তাঁরা। বোধহয় তাঁদের বাড়তি আনন্দ দিল ইডেনের বুকে ওই ‘শ্রীনগর-লে হাইওয়ে!’

Advertisement

রাজীব ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৩
Share:

উইকেট পাওয়ার পরে অমিতকে ঋদ্ধিমানের অভিনন্দন। ইডেনে বুধবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

এক ঝাঁক জম্মু-কাশ্মীরি সমর্থক হাজির ইডেনে পরভেজ রসুলদের দেখতে। সারা দিন ধরে গলা ফাটিয়ে ইডেন মাতালেন তাঁরা। বোধহয় তাঁদের বাড়তি আনন্দ দিল ইডেনের বুকে ওই ‘শ্রীনগর-লে হাইওয়ে!’

Advertisement

সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে জম্মু কাশ্মীর দলের এক ক্রিকেটার তো বলেই দিলেন, “পিচটা একদম আমাদের লে হাইওয়ের মতো। ওখানে ব্যাট করার চেয়ে গাড়ি চালানো বোধহয় সোজা।”

কাশ্মীর শিবিরেই যখন ইডেনের বাইশ গজ নিয়ে এমন তুলনা, তখন বাংলা শিবিরে কী হচ্ছে, তা সহজেই অনুমেয়। লক্ষ্মীদের ড্রেসিংরুমে ফের ক্ষোভের আগুন। সিএবি যা ছাইচাপা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে মাত্র। কিন্তু এই আগুন নেভানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি? বোধহয় না।

Advertisement

বুধবার বিকেলে ইডেন থেকে বেরনোর সময় এক নির্বাচককে গজগজ করতে শোনা গেল, “কী উইকেট চাওয়া হয়েছিল। আর কী উইকেট পাওয়া গেল। এটা একটা উইকেট!” মুম্বই ম্যাচের পরই দল বাছাই বৈঠকে বাংলার নির্বাচক, কোচ, ক্যাপ্টেন সবাই মিলে সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়াকে বলেছিলেন জম্মু-কাশ্মীর ম্যাচে ঘূর্ণি উইকেট চাই। যাতে বাংলা এই ম্যাচ থেকে অন্তত ছ’পয়েন্ট তুলতে পারে।

সেই বৈঠক ও এই ম্যাচের মধ্যে ছিল দশ দিন। এই দশ দিনেও বাংলাকে পছন্দের উইকেট প্রস্তুত করে দেওয়া গেল না, এ কথা শুনে অনেকেই হাসছেন। শোনা গেল, এক আম্পায়ার না কি এই উইকেট দেখে বলেছেন, “চার দিন কেন, এই উইকেটে আট দিনেও ফল পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।”

বাংলা অবশ্য ৩৮৭-তে অল আউট হওয়ার পর দ্বিতীয় দিনের শেষে জম্মু-কাশ্মীরকে ১৮২-৫-এ নিয়ে চলে এসেছে। ফলো-অন বাঁচাতে বৃহস্পতিবার রসুলদের আরও ৫৬ রান তুলতেই হবে। লক্ষ্মীবারে বাংলার এই লক্ষ্মীলাভ হবে কি না, আর এক নির্বাচক এই প্রশ্ন শুনে বললেন, “কী করে বলি? না আছে উইকেটের কোনও চরিত্র, না বাংলার বোলারদের কোনও বাড়তি তাগিদ। ওরা ফলো-অন বাঁচিয়ে আরও একশো রান তুলে নিলেও অবাক হব না।” ঘটনা হল, সেটা ঘটার খুব ভাল রকম আশঙ্কা আছে। পিচের যা অবস্থা, তাতে জম্মু-কাশ্মীরের ব্যাটসম্যানরা ‘হারাকিরি’ না করলে এই ম্যাচ থেকে বাংলার পুরো পয়েন্ট তোলার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

উইকেট নিয়ে অভিযোগের আঙুল আসলে যাঁর দিকে, সেই সদাবিতর্কিত কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায় বলছেন, “যেমন উইকেট চেয়েছিল, তেমনই দিয়েছি।” তা হলে দু’দিন হয়ে যাওয়ার পরও উইকেটে বল ঘুরতে দেখা যাচ্ছে না কেন? এই প্রশ্ন শুনে ক্ষিপ্ত প্রবীরবাবু বললেন, “বল ঘোরাতে হয়। এমনি এমনি ঘোরে না। বল ঘোরানোর ক্ষমতা থাকা দরকার। যা বোধহয় আমাদের স্পিনারদের নেই।”

সকালে ঋদ্ধিমান সাহা তাঁর ১৬৬ রানের মাথায় পরভেজ রসুলের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান। তার আগেই সাত সকালে মাঠে এসে তাঁকে উৎসাহ জুগিয়ে যান সিএবি যুগ্মসচিব সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ব্যাটসম্যানদের যে মেজাজে দিন শুরু হয়েছিল, দিন্দা-লক্ষ্মীরা সেই মেজাজ ধরে রাখলেন প্রথম দশ ওভারের মধ্যে বিপক্ষের দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে। প্রথম চল্লিশ রানে প্রথম দুই শিকার, তো পরের ৪৮-এ আরও দুই। ১৭তম ওভারে বল হাতে পেয়ে এ বার উইকেট তুললেন প্রথম রঞ্জিতে নামা অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়। উইকেটে জমতে দেওয়ার আগেই রসুলকে মাত্র এক রানে ফেরান তিনি। সারা বছর মুম্বইয়ের ক্লাবের হয়ে খেলা ইয়ানদেব সিংহ যখন ৭২ করে দলের স্কোরবোর্ডে গতি আনার চেষ্টা করছিলেন, তখনই সৌরাশিস লাহিড়ী তাঁকে ফিরিয়ে দেন। ইয়ানদেবের ক্যাচ নিতে গিয়ে মনোজ তিওয়ারি বাঁহাতের আঙুলে চোট পেলেও সন্ধ্যায় জানালেন তেমন গুরুতর নয়।

কিন্তু দিনের শেষ তিরিশ ওভারে ইডেনের বাইশ গজে উইকেটের খরা। বোলারদের হতাশ করে দেওয়ার স্ট্র্যাটেজিতে সফল রসুলের ব্যাটসম্যানরা। সৌজন্যে ‘হাইওয়ে’ উইকেট। তিন স্পিনার নাগাড়ে বল করেও পান্ডির-বনদীপদের টলাতে পারলেন না। সৌরাশিস ১২ ওভারে মাত্র ১৫ রান দিলেও একটার বেশি শিকার পেলেন না। অমিত ১৯ ওভারে ৫১ রান দিয়ে জোড়া উইকেট পেলেন। আর ইরেশ ন’ওভারে ২৫ রান দিয়ে শিকারহীন। মনোজও দু’ওভার হাত ঘুরিয়ে চার রান দেন।

লক্ষ্মীবারে দুই কাশ্মীরি সৈন্যই লক্ষ্মীর দলের প্রধান শত্রু হয়ে উঠবেন না তো? সত্যিই ইডেনের বাইশ গজকে লে হাইওয়ে ভেবে বসলেই মুশকিল। কানে এল, দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যানই না কি লং ড্রাইভে যেতে ভালবাসেন!

সংক্ষিপ্ত স্কোর


বাংলা ৩৮৭ (ঋদ্ধিমান ১৬৬, লক্ষ্মী ৭২, রামদয়াল ৪-১১৫, রসুল ৩-৭০)
জম্মু-কাশ্মীর ১৮৩-৫ (ইয়ানদেব ৭২, অমিত ২-৫১)।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement