মিশন ক্রিস গেইলের চব্বিশ ঘণ্টা আগে। ছবি: এএফপি
উত্তপ্ত কড়াই থেকে এ বার অত্যাধুনিক মাইক্রোওয়েভ ওভেন! শাহিদ আফ্রিদি থেকে কুড়ি ওভার সংসারের চেঙ্গিজ খান— অত্যাচারী ক্রিস গেইল-এ!
ভারতের রবিবাসরীয় প্রতিদ্বন্দ্বীরাই এই ফর্ম্যাটে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। তা, তাদের অধিনায়ক ডারেন স্যামিকে এ দিন অদ্ভুত একটা প্রশ্ন করা হল— আচ্ছা গেইলের মানসিক গঠন এই মুহূর্তে ঠিক কী? বোধহয় জানতে চাওয়া হচ্ছিল গেইল এ বার দেশের হয়ে ট্রফি জিততে কতটা মারকাটারি হয়ে আছেন? কিন্তু এমন ভাবে প্রশ্নটা হল যে স্যামি বলে ফেললেন, “আমি তো যিশু খ্রিস্ট নই যে, মানুষের মনের মধ্যে কী হচ্ছে জানতে পারব। আশা করি গেইল মানসিক দিক থেকে তাগড়াই হয়েই আছে।”
আসলে যত দিন যাচ্ছে, গেইল ততই ‘ক্রিকেটের লিওনেল মেসি’ হয়ে দেখা দিচ্ছেন। বার্সার মেসি যেমন কখনওই পূর্ণচন্দ্র হয়ে আর্জেন্তিনার জন্য ফোটেন না, এটাও অবিকল তাই! আইপিএল বা গোটা বিশ্বের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে গেইলের যা রমরমা, সেটা দেশের হয়ে খেলার সময় কেমন ধেবড়ে যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সাঁইত্রিশটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচে তাঁর সেঞ্চুরি মাত্র একটা। গড় ৩৩। মোট যা রান, সেটা এক মরসুমে আইপিএল খেলে মোটামুটি করেন। পাকিস্তানজয়ী উদ্দীপ্ত ভারতের সামনে তিনি কী করেন দেখার জন্য গোটা ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ তাকিয়ে রয়েছে। গেইল-ভক্তরা চান, এই টুর্নামেন্ট তাঁর শাপমুক্তি ঘটাক ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য!
তা, গেইল সামলাতে ধোনির স্ট্র্যাটেজিই বা কী হবে? সিএসকে বনাম আরসিবি, ঘরের মাঠে হলে চিদম্বরম স্টেডিয়ামেই সব সময় অশ্বিনকে দিয়ে প্রথম ওভার করান ধোনি। এ বার? সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় মনে করেন, “এ বারও তাই হবে। অশ্বিনকে দিয়েই গেইলকে থামানোর চেষ্টা হবে।” পাকিস্তান ম্যাচে বল যেমন দেরি করে ব্যাটে এসেছে, নিচু বাউন্স-সহ ঘুরেছে। সেই চটচটে টার্ফে তো চলা উচিত নয় গেইলের তাণ্ডব? অমিত মিশ্র কাল যেমন বল ঘুরিয়েছেন, তাঁকে সামলাতে পারবেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ছক্কামারিয়ে-রা? গেইলের চিন্নাস্বামী তো এটা নয় যে, পড়ে বল ব্যাটে আসবে!
যুক্তি তাই বলে এবং মিরপুর মাঠের রেকর্ড মোটেও বলে না।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে এ মাঠে ছ’টা ম্যাচ খেলেছেন গেইল। তেন্ডুলকরের কাছে মিরপুর উইকেট শততম সেঞ্চুরিপ্রাপ্তির মন্দিরদ্বার হিসেবে চিরস্মরণীয় থেকে গেলেও এ মাঠে গেইলের মতো চূড়ান্ত সফল সচিনও নন। গেইল শুধু বিপিএলে ছক্কাই মেরেছেন আটত্রিশখানা! শনিবার মাঠ ছাড়ার আগেও তিনি বলে গেলেন, “দেখুন না কী করি। ভারতকে উড়িয়ে দিয়ে গ্যাংনাম নাচব।”
ধোনির টিম ইন্ডিয়াকে শনিবার দেখে কিন্তু মনে হল গেইল-ঠকঠকানি একদমই নেই। গ্যাংনামের দুঃস্বপ্ন দেখছে না। বরং পাক-বিজয়ে এক রাত্তিরে টিমটা রূপান্তরিত। ফুর্তির নেশাতেই যেন এক ঘণ্টা ধরে ফুটবল খেলল। যুবরাজকে একমাত্র অন্যমনস্ক দেখাল। নেটে অনেকক্ষণ পড়ে থাকলেন। পেশাদার সার্কিট একটা ক্ষমাহীন অ্যাম্ফিথিয়েটার। কেউ কোনও ব্যাখ্যা-ট্যাখ্যা জানতে চাইবে না যে, আমি শেষ যখন ইন্ডিয়ার হয়ে বল করেছি তখন কলমডী তিহাড়ে ছিলেন! ডলারের দাম ছিল আটচল্লিশ টাকা। ধোনির রাজত্বে কপাল ভাল থাকলে এক ওভার পাওয়া যাবে আর সেটাই কাজে লাগাতে হবে।
পাকিস্তান টিমে এই মুহূর্তে এগারো জনই যুবরাজ। ভারতের কাছে ওই রকম প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন হেরে এক রাত্তিরেই এশিয়া কাপের যাবতীয় হর্ষ উধাও। এখন এমন অবস্থা, রোববার ওয়াটসনদের কাছে হেরে গেলে আফ্রিদিদের লাহোরের বিমানবন্দরে ডিম-টম্যাটোয় হোলি খেলার জন্য তৈরি থাকতে হবে। সকাল থেকে তাই পাক শিবিরে রব পড়ে গ্যাছে। এ দিন প্র্যাকটিস বাধ্যতামূলক ছিল না। অথচ গোটা টিম সুড়সুড় করে নীচে নেমে এল। এমনিতে পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে ভারত-পাক ম্যাচের পর সমর্থকেরা দলে-দলে ভিড় করেন। এক দল যায় হাততালি দিতে। আর এক দল টিটকিরি দেওয়ার বন্য সুখে। শেষ সব ক’টা সাক্ষাৎ— বার্মিংহ্যাম থেকে কলম্বো, কোথাও ব্যতিক্রম হয়নি। অথচ কাল মাঝরাত্তিরে সোনারগাঁও হোটেলের বাইরে-ভেতরে জনশূন্য।
অনেকেই নাকি আসছিলেন। হোটেল থেকে কিছু দূরে নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদের আটকে দিয়েছে। আজও কাউকে আসতে দেওয়া হল না। আইসিসির নির্দেশেই যে, ফ্যান সেজে যদি বুকিরা ঢুকে পড়ে আর পাক-ভারত প্লেয়ারের কাছাকাছি চলে যায়। ফাঁকা লবিতে মাঝরাত্তিরে সৌরভকে পাওয়া গেল। যিনি শুধু টিম নয়, তাঁর ছাত্রের সাফল্যে বেজায় খুশি। ছাত্রের নাম সুরেশ রায়না। ফুটওয়ার্কে যে সব বুদ্ধিদীপ্ত বদলের কথা সৌরভ সুপারিশ করেছিলেন, সেটা যে ছাত্র দুটো ওয়ার্ম আপ ম্যাচ-সহ পরপর তিন বার সফল ভাবে করলেন, দেখে সৌরভ দারুণ তৃপ্ত। কোনও এক দিন ভারতীয় দলকে কোচ করবেন, তাঁর চিন্তার এই মাল্টিস্টোরিড নির্মাণের প্রথম ইঁট-সিমেন্ট-বালি কিন্তু দৃশ্যতই রায়না। শুনলাম ঢাকার কাহিনি শেষ হতেই রায়না আসছেন কলকাতায় সশরীরে কোচিং নিতে। হয় যাদবপুর মাঠে। নইলে সৌরভের নিজস্ব অ্যাকাডেমির মাঠে শিগগিরই দুই বাঁ-হাতিকে একান্তে পাওয়া যাবে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলা পর্যন্ত একান্তে থাকার সময় অবশ্য এমএসডি এবং তাঁর এক নম্বর লেগস্পিনারের। ধোনি তিনটে বিশ্বকাপ জিতেছেন। কিন্তু কখনও কোনও লেগস্পিনারকে মদত দিয়ে তুলে আনেননি। যা সেরা ক্যাপ্টেনের অন্যতম শর্ত হিসেবে স্বীকৃত। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিং লাইন আপে একাধিক বাঁ-হাতি। কাগজেকলমে অফস্পিনারের সেখানে বেশি প্রয়োজন। কিন্তু কে বলতে পারে অধিনায়কের শর্তহীন সমর্থন পেলে সেই কাগজকলমের হিসেব বদলে যাবে না! লেগস্পিনার দিনের শেষে তাঁর অধিনায়কের কাছে একটাই জিনিস চায়— ভরসা।
ভরসা কোনও তাবিজ বা আংটি নয়। কিন্তু তাতে একটা কাজ হতেই পারে। গ্যাংনাম বন্ধ করে নাচ শুরু করাতে পারে নিজের জয়ী ড্রেসিংরুমে!
ভারতের বিরুদ্ধে ক্রিস গেইল
ম্যাচ ২ ইনিংস ২ রান ১২০ সর্বোচ্চ ৯৮
গড় ৬০ স্ট্রাইক রেট ১২৭.৬৫
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে রবিচন্দ্রন অশ্বিন
ম্যাচ ১ ওভার ৪ রান ৩০ উইকেট ১
ইকনমি ৭.৫০
আইপিএলে গেইল বনাম অশ্বিন
বল ৩৩ রান ৩৪ আউট ৩
কী ভাবে আউট
• অফব্রেকে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ
• অফব্রেকে কাট করতে গিয়ে উইকেটকিপারকে ক্যাচ
• ক্রিজ ছেড়ে এগিয়ে এসে বলের ফ্লাইট বুঝতে না পেরে স্টাম্পড
আইপিএলে মিশ্র বনাম গেইল
বল ১৭ রান ২৯ আউট করেননি
সচিত্র, মালিঙ্গাদের দাপটে হার দক্ষিণ আফ্রিকার
নিজস্ব প্রতিবেদন
জয়ের দোরগোড়ায় এসেও শ্রীলঙ্কাকে হারাতে পারল না দক্ষিণ আফ্রিকা। পাঁচ রানে হারল তারা। শনিবার চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার ১৬৫ তাড়া করে আট উইকেটে ১৬০-এ পৌঁছেও শেষ রক্ষা হল না তাদের। শেষ ওভারে ১৫ রান দরকার ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। সেই ওভারে বল করতে আসেন লাসিথ মালিঙ্গা। প্রথম দুই বলেই স্টেইন ও মিলার রান আউট হয়ে ফিরে যান। ইমরান তাহির শেষ বলে ছয় মারলেও জয়ের জন্য তা যথেষ্ট ছিল না। দশ ওভারে ৭৫ রান তোলে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৩০ বলে যখন জয়ের জন্য ৫১ রান দরকার, তখনও সাত উইকেট হাতে তাদের। এখান থেকেও ম্যাচ বের করে নেন মালিঙ্গা (১-২৯), সচিত্র (২-২২), কুলশেখরা (১-২৩), ম্যাথিউজ (১-২১), মেন্ডিসরা (১-৪৪)। ওপেনার কুশল পেরেরা ৪০ বলে ৬১ ও ক্যাপ্টেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথেউজ ৩২ বলে ৪৩ করে জয়ের ভিত তৈরি করেন।
এ দিন দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ড ইংল্যান্ডকে ডাকওয়ার্থ-লিউইস নিয়মে ন’রানে হারাল। ইংল্যান্ড টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ১৭২-৬ তোলার পর নিউজিল্যান্ড যখন ৫.২ ওভারে ৫২-১, তখন বৃষ্টি নামে।
আজ টি-২০ বিশ্বকাপে
• ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ (স্টার স্পোর্টস ১, স্টার স্পোর্টস ৩ সন্ধ্যা ৭-০০)
• পাকিস্তান বনাম অস্ট্রেলিয়া (স্টার স্পোর্টস ১, দুপুর ৩-০০)