গুয়ার্দিওলার মস্তিষ্ক নিলে ব্রাজিলেও এগিয়ে জার্মানি

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ঠিক এক বছর আগে আর্সেনাল নিজেদের মাঠে পিছিয়ে থেকে মিউনিখে গিয়ে বায়ার্ন মিউনিখের বিরুদ্ধে চোখধাঁধানো ফুটবল খেলেছিল। হারিয়েও দিয়েছিল জার্মানদের। যদিও দু’পর্ব মিলিয়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যেতে হয়েছিল ওয়েঙ্গারের দলকে।

Advertisement

সুব্রত ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৪ ০৪:২১
Share:

গোলের পর সোয়াইনস্টাইগার। ছবি: এএফপি।

বায়ার্ন মিউনিখ-১ (সোয়াইনস্টাইগার)

Advertisement

আর্সেনাল-১ (পোডোলস্কি)

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ঠিক এক বছর আগে আর্সেনাল নিজেদের মাঠে পিছিয়ে থেকে মিউনিখে গিয়ে বায়ার্ন মিউনিখের বিরুদ্ধে চোখধাঁধানো ফুটবল খেলেছিল। হারিয়েও দিয়েছিল জার্মানদের। যদিও দু’পর্ব মিলিয়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যেতে হয়েছিল ওয়েঙ্গারের দলকে।

Advertisement

বলতে দ্বিধা নেই, এমনই বড়সড় একটা যুদ্ধ দেখার আশা নিয়ে মঙ্গলবার রাতে টিভির সামনে বসেছিলাম। কিন্তু কোথায় কী? খেলা শুরুর সঙ্গে-সঙ্গেই গুয়ার্দিওলার বায়ার্ন সেই যে বলের দখল নিয়ে নিল, তা বজায় রইল পুরো প্রথমার্ধ। গোটা ফুটবলদুনিয়া জানে গুয়ার্দিওলা মানেই নতুনত্বের আমদানি। এই বায়ার্নে গুয়ার্দিওলা যেটা আমদানি করেছেন সেটা হল কার্যকরী পাসিং ফুটবল। মেসি-নেইমারদের বার্সেলোনার মতো গাদাগুচ্ছের পাস খেলে না ঠিকই। কিন্তু প্রয়োজনীয় পাস খেলে ঠিক জায়গায় পৌছে যায় রবেন-রিবেরিরা। দ্রুত পৌঁছে যায় বিপক্ষের বক্সে। এই ম্যাচেও তাই হচ্ছিল। লাম থেকে গোটজে। সেখান থেকে রবেন। আবার অন্য প্রান্তে আলাবা থেকে মিডল করিডরে গোটজের পা ঘুরে বল রিবেরির পায়ে। এ রকম কার্যকরী পাস খেলেই মাঝমাঠটা শুরুতেই নিজেদের দখলে নিয়ে ফেলেছিল বায়ার্ন ফুটবলাররা।

দিন কয়েক আগে প্রাক্তন ইংরেজ স্ট্রাইকার গ্যারি লিনেকারের একটা মজার টুইট এই মুহূর্তে মনে পড়ছে। যেখানে লিখেছিলেন, ‘সব খেতাবই এ বার বায়ার্ন মিউনিখের ট্রফি রুমে চলে না যায়।’ মঙ্গলবার রাতে আর্সেনালের বিরুদ্ধে ১-১ ম্যাচের পর সব মিলিয়ে ৩-১ জিতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ আটে চলে গেল বায়ার্ন। গোটা মরসুম জুড়ে কী অনবদ্য ধারাবাহিকতা! লিনেকারের ওই টুইটের সঙ্গেই তাই সুর মিলিয়ে বলছি, এই বায়ার্ন এ বারও কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লিগের অন্যতম দাবিদার। ট্রফিটা এ বারও মনে হচ্ছে মিউনিখে যাওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল।

কেন? সেটা স্রেফ ওই একটা লোকের জন্যপেপ গুয়ার্দিওলা। অঙ্ক কষে ম্যাচ বের করে নিতে যার তুলনা নেই। আর্সেনালের লেফট ব্যাক ভার্মেলেন যে নড়বড়ে তা জানতেন। শুরু থেকেই রবেন-লামরা বাঁ দিক থেকেই ঝড় তুলতে শুরু করল। পাল্টা আক্রমণে যাওয়ার বদলে প্রথম থেকেই রক্ষণ নিয়ে ব্যতিবস্ত থাকতে হল ওয়েঙ্গারকে। পোডোলস্কিরা আক্রমণে যাবে কী! বরং নীচে নেমে এল রক্ষণকে সাহায্য করতে। আর কেবল জিরুকে লক্ষ্য করে সেই চিরাচরিত লং বল খেলতে শুরু করল মার্তেস্যাকাররা। দেখে মনে হল, ঠিক এটাই আর্সেনালকে করাতে চাইছিলেন চার ব্যাকের আগে থিয়াগো আর সোয়াইনস্টাইগারকে ডাবল পিভট রেখে ৪-২-৩-১ ছকে দল সাজানো গুয়ার্দিওলা।

তবে বিপক্ষ কোচের নামও যে আর্সেন ওয়েঙ্গার! ছেড়ে দেওয়ার বান্দা নন, জানে গোটা ফুটবলদুনিয়া। দ্বিতীয়ার্ধে হ্যামস্ট্রিংয় চোটে ওজিল বসে যাওয়ার পরে ৪-৩-৩ ছকে রসিকিকে নামিয়ে আক্রমণে ঝাঁঝ বাড়িয়েছিলেন ওয়েঙ্গার। প্রেসিং ফুটবল খেলে বায়ার্ন রক্ষণে চাপ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছিলেন। তবু এই সময় আর্সেনাল রক্ষণের ফাঁকফোকরের সুযোগ খুঁজে সোয়েনস্টাইগারের গোল। যদিও তা তিন মিনিটের বেশি স্থায়ী হয়নি। তবে গোলটা শোধ করার সময় পোডোলস্কি যে ভাবে লামকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল তা রেফারির চোখ এড়িয়ে গেল কী ভাবে তা বোধগম্য হল না। এত প্রযুক্তির ঝনঝনানির পর শেষে কিনা এই!

এর পরে কার্জোলা-চেম্বারলেনরা ঝলমলে হওয়া শুরু করেছিলেন। তবে এ বারও খোলস ছেড়ে বেরিয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে থাকা আর্সেনালকে জালবন্দি করে ফেলল সেই গুয়ার্দিওলা-মস্তিষ্ক। আগের অ্যাওয়ে ম্যাচের নায়ক টনি ক্রুজকে নামিয়ে ব্লটিং পেপারের মতো শুষে নিলেন আর্সেনালের প্রতিআক্রমণ। অনেকেই হয়তো বলবেন গোটজেকে তুলে নেওয়াটা ভুল। আমি বলব ওটাই গুয়ার্দিওয়ালার মাস্টারস্ট্রোক। এতেই ফের বলের দখল চলে এল বায়ার্নের পায়ে। তাতেই ক্লান্ত হয়ে ম্যাচ থেকে হারিয়ে গেল আর্সেনাল। একদম নিখুঁত অঙ্ক কষে শেষ আটের রাস্তা খুঁজে বের করে নেওয়া।

শুধু চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কেন? এই বায়ার্নের বেশ কয়েক জন ফুটবলারই কিন্তু থাকবেন বিশ্বকাপে জোয়াকিম লো-র স্কোয়াডে। গুয়ার্দিওলা যে ভাবে এই দলটাকে শিখিয়ে দিয়েছেন—পরিশ্রমের ফল সাফল্য নয়, সাফল্য হল পেশাদার ফুটবলারের প্রয়োজনীয় রসদ, তাতে এই মনোভাবটাই বায়ার্ন শিবির থেকে জার্মানির বিশ্বকাপ ক্যাম্পে সংক্রমিত হলে ব্রাজিলেও অ্যাডভান্টেজ জার্মানি।

ম্যাচের খুঁটিনাটি

বল দখল

বায়ার্ন ৬৭ শতাংশ

আর্সেনাল ৩৩ শতাংশ

গোলে শট

বায়ার্ন ৬

আর্সেনাল ৩

কর্নার

বায়ার্ন ৬

আর্সেনাল ৫

ফাউল

বায়ার্ন ১৪

আর্সেনাল ১৫

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement