রাজপুত্রের লক্ষ্যভেদ। শনিবার বেলো হরাইজন্তেতে। ছবি: এএফপি, রয়টার্স
দু’দেশের কোচেদের প্রেস কনফারেন্স শেষ হয়ে গিয়েছে। ফিফার লোক এসে বললেন, এর পর ম্যান অব দ্য ম্যাচ আসবেন। তবে পাঁচ মিনিট দেরি হবে। কে আবার আজ ম্যান অব দ্য ম্যাচ হল? যুগ্ম ভাবে দুই গোলকিপার? ইরানের স্টপার? কে? ফিফা কোনও নাম বলছে না। অনেকেই বেরিয়ে গেলেন। এই সময় বেলো হরাইজন্তের প্রেস কনফারেন্স রুমকে নিথর করে দিয়ে যিনি আচমকা ঢুকে পড়লেন, তিনি লিওনেল মেসি।
মুহূর্তের জন্য মনে হল, এটা পোড়খাওয়া সাংবাদিকদের বিচরণক্ষেত্র নয়। ফিফা ফ্যান ফেস্টিভ্যালের হল বুঝি। যা সব শহরে তারা লাগিয়েছে। রিপোর্টাররা দাঁড়িয়ে উঠে নাগাড়ে ছবি তোলা শুরু করলেন। ওই মায়াবী গোল সাংবাদিকদেরও তো ঘোরে এনে দিয়েছে!
এই মেসির শরীরী ভাষা প্রচুর তৃপ্তির। আর্জেন্তিনার হয়ে ভাল খেলেন না তো দূর অস্ত। তিনি জাতীয় সঙ্গীতটাই গাইতে পারেন না, কত রকম কথা হয়েছিল। আর আজ তিনি কি না ম্যান অব দ্য ম্যাচ নিয়ে গেলেন। বিশ্বকাপে লিওনেল মেসির সর্বশ্রেষ্ঠ দিন তাঁকে না জিজ্ঞেস করেও লিখে ফেলা যায়। বললেন, “প্রচণ্ড রিলিভ্ড। দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার জন্য যে নাইজিরিয়া ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না।”
কিন্তু এই ম্যাচটা জিতল কে? আপনার জিনিয়াস, না আর্জেন্তিনা টিম? এ ভাবে খেললে আর্জেন্তিনার কী ভাবে চলবে?
এ রকমই একটা প্রশ্নে একটু আগে সামান্য বিরক্ত হয়ে সাবেয়া বলে গিয়েছেন, “জিতল গোটা টিম। তবে আমাদের টিমে যদি এক জন জিনিয়াস থাকে, অন্য দলের না থাকে, সেটা তো আর্জেন্তিনারই ভাগ্য।” মেসি নিজের প্রসঙ্গটা এড়িয়ে গিয়ে বললেন, “আমাদের অনেক ভাল খেলতে হবে। আজ ইরান আমাদের জায়গাই তৈরি করতে দেয়নি। আমি নিশ্চিত, যত টুর্নামেন্ট এগোবে আমরা দল হিসেবে তত উন্নতি করব।”
গোলের উল্লাস। শনিবার ইরানের বিরুদ্ধে মাঠে লিওনেল মেসির। (নীচে) গ্যালারিতে আর্জেন্তিনা সমর্থকদের। ছবি: এএফপি
মেনে নিলেন যে, দ্বিতীয়ার্ধে আর্জেন্তিনা মোটেও ভাল খেলেনি। গোলের মুহূর্তে কী মনে হচ্ছিল? “বলটা নেটে যেতেই দেখলাম সমর্থকদের উন্মাদনা। সব নাচছে-গাইছে। মনটা আনন্দে ভরে গেল,” তৃপ্তি ঝরে পড়ছে আজকের মেসির গলায়।
এত কঠিন মার্কিং আপনাকে করা হবে ভেবেছিলেন?
“ওরা তো শুধু আমাকে মার্ক করেনি আলাদা করে। প্রত্যেককেই মার্ক করছিল। জায়গাই দেয়নি। জায়গা তৈরি না হলে আমরা খেলি কী করে...”
মেসি উঠে গেলেন এই বলে যে, যাক, ম্যাচটা জিতে উঠে মানসিক শান্তি পাওয়া গেল। আমরা তা হলে পরের পর্বে।
শুনতে শুনতে ইরানি কোচের পেনাল্টির দাবি বা আর্জেন্তিনার সেকেন্ড রাউন্ডে ওঠা, কিছুই মনে পড়ছিল না। মনে হচ্ছিল এই সপ্তাহখানেক আগের সব মন্তব্য।
নাগাড়ে বমি করে যাচ্ছে। শরীর গ্যাছে।
আর সেই প্যাশন নেই।
দেশের হয়ে সাপোর্টিং প্লেয়ার পায় না।
বিশ্বকাপে বরাবরের ব্যর্থ।
বাঁ পায়ের একটা সোয়ার্ভ যা বলে গেল, তা পঞ্চাশটা প্রেস কনফারেন্সেও বলা যায় না!