মিশন-পুণের আগের সকালে ‘খারুস’ এটিকে কোচ। ছবি: উৎপল সরকার।
আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের সামনে একই ম্যাচে জোড়া হার্ডল টপকানোর লড়াই।
এক, ফুটবলের মক্কা হতে পারে। কিন্তু পাক্কা দু’মরসুমে আইএসএলে এখনও পর্যন্ত পুণেকে হারাতে পারেনি তাঁর কলকাতা!
দুই, শুক্রবার ডেভিড প্ল্যাটের টিমকে হারাতে পারলেই শেষ চারের পাসপোর্ট হাতে চলে আসবে তাঁর।
শুক্রবার কি ঘরের মাঠে এই দু’টো মাইলস্টোনই পেরিয়ে যাওয়ার ম্যাচ আপনার? মানে রথ দেখা এবং কলা বেচা একই সঙ্গে! প্রশ্ন শুনে চোখ বড় বড় হয়ে যায় রাফায়েল বেনিতেজের একদা সহকারী হাবাসের। ‘‘অন্য কিছু নয়। দু’ম্যাচ পরে কত পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবলে কে কোথায় দাঁড়িয়ে থাকব সেই অঙ্ক কষছি। তা অনুযায়ী, ম্যাজিক নম্বর তিন। যেটা পুণে আর মুম্বই দু’ম্যাচ থেকেই চাই। সে ভাবেই ছেলেদের মোটিভেট করছি।’’
লক্ষ্মীবারের বিকেলে রহিম নবিকে নিয়ে সল্টলেক সিটি সেন্টারের অভিজাত রেস্তোরাঁতে গিয়েছিলেন কলকাতার কানাডিয়ান গোল ইঞ্জিন ইয়ান হিউম। তাঁকে ঘিরে ধরে কলকাতার জয়ের জন্য উদগ্র সই শিকারিদের জিজ্ঞাসা—কলকাতা শেষ চারে যাবে কি?
বারো ম্যাচে কলকাতার পয়েন্ট ২০। শেষ চারে যেতে কলকাতা কোচের অঙ্ক দু’ম্যাচ থেকে একটা জয় চাই-ই চাই। ড্র চলবে না কোনও মতেই। মোটামুটি ২৩ পয়েন্ট হলেই শেষ চারের টিকিট কনফার্মড। আর যদি দু’টো জয় পর পর চলে আসে তা হলে তো ‘সোনে পে সুহাগা’। পুণে আবার অ্যাওয়ে জার্সি না আনায়, সন্ধেয় ম্যানেজার্স মিটিংয়ে ঠিক হয়েছে, শুক্রবার কলকাতা লাল-সাদা জার্সিতে মাঠে নেই। তিন নম্বর রিজার্ভ জার্সিতেই এ দিন মাঠে নামবেন অর্ণব মণ্ডলরা।
ভারতীয় ফুটবলে শেষ চারে যাওয়ার জন্য. এ রকম সাপ-লুডো খেলায় পাকা মাথা যাঁরা, তাঁদের একজন প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় নবদ্বীপে রাস উৎসবে হাজির। বিসর্জনের ভিড় আর শব্দব্রহ্মে জর্জরিত। কিছু বলতে পারলেন না। জ্যাংড়ার বাড়ি থেকে বরং অমল দত্ত অনেক সোজাসাপটা। প্রথমেই তার স্নেহসুলভ ধমক, ‘‘শেষ চার মানে? কলকাতার কোনও টিম টুর্নামেন্টে মানে ফাইনাল ধরে এগোতে হবে। কলকাতা সেমিফাইনাল চলে গিয়েছে গোয়াকে হারিয়েই। চিন্তা করবেন না।’’ পিকে-অমলের পরের প্রজন্মের মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য কোচিং জীবনে এ রকম পরিস্থিতিতে পড়েছেন বহুবার। তিনি বললেন, ‘‘এই ধরনের পরিস্থিতিতে বাড়তি ঝুঁকি না নিয়ে গোলটা যেমন তুলে নিতে হয়। তেমনই গোল না খাওয়ার জন্য রক্ষণও সুরক্ষিত করতে হয়। হাবাস সেটাই করবে কাল। প্রতি-আক্রমণটাই ওর রণকৌশল হয়ে উঠতে পারে পুণে ম্যাচে।
মহালয়ার পর এই ম্যাচটা খেলতে গিয়েই বালেওয়াড়িতে জ্যাকিচন্দের গোলে হেরে ফিরেছিল কলকাতা। তার পর উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যখন হাবাস ফের তাঁর টিমকে ছন্দে নিয়ে এসেছেন, তখনই তাঁর আকাশে কালোমেঘের আনাগোনা। অফিসের হয়ে খেলতে গিয়েছেন মহম্মদ রফিক। আর রিনো অ্যান্টোর গোড়ালিতে চোট। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় তাই গত দু’দিনে ডেঞ্জিল, বলজিৎ, জুয়েল, আরাতাদের তৈরি রাখছেন কলকাতা কোচ। রক্ষণ মজবুত রেখে যেনতেন প্রকারে তিন পয়েন্ট তুলে শেষ চারের স্বস্তিসূচক বাড়িয়ে রাখাটাই শুক্রবার তাঁর চাঁদমারি।
প্রতিপক্ষ পুণে ১১ ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে আবার প্রীতম কোটাল, লিংডোর মতো জাতীয় তারকার সঙ্গে নিকি শোরে, আদ্রিয়ান মুতুর সোনালি চতুর্ভুজ ধরে শেষ চারের রোডম্যাপ আঁকিঝুঁকি করছে নিরন্তর। হাবাস সেটা জানেন। আর তাই সাংবাদিক সম্মেলনে বলে গেলেন, ‘‘আমাদের হোম ফ্যাক্টর কাজে লাগাতে হবে।’’ বেরিয়েই স্প্যানিশ কোচ পুণে কোচ ডেভিড প্ল্যাটকে দেখেই বলতে শুরু করলেন, ‘‘এই মাঠটা না...।’’
কিন্তু হাবাস যদি জার্মান বার্নার্ড সুস্টারের মন্ত্রশিষ্য হয়ে থাকেন, প্ল্যাটও ববি রবসন স্কুল অব ফুটবলের ছাত্র। কলকাতা কোচ তাঁকে যতই আতঙ্কের জ্যাকেট পরাতে যান না কেন, ১৯৯০ বিশ্বকাপের শেষ আটের ম্যাচে গোল করে এনজো শিফোর বেলজিয়ামকে বাড়ি পাঠানোর নায়ক প্ল্যাট তা পরলে তো। উল্টে তাঁর পাল্টা, ‘‘ম্যাচটা কঠিন মানছি। প্রচুর ওঠা-নামা চলছে। দর্শকরা কলকাতার জন্য চিৎকার তো করবেই! তা না হলে আমার ফুটবলাররা লড়ার প্রেরণা পাবে কী ভাবে?’’ তার পর বললেন, ‘‘আর মাঠ? সকালে তো অনুশীলন করে এলাম। স্টেডিয়াম পেলাম কি না, এ সব নিয়ে ভাবার চেয়ে ম্যাচ নিয়ে বরং চিন্তাভাবনা করি।’’
হৃতিক রোশনের টিম লিগে যতই দাপট দেখাক অ্যাওয়ে ম্যাচে এখনও কোনও জয় পায়নি। তবে তাতে প্ল্যাটের জোশ ছিটেফোটাও কমছে না। ‘‘আট দিন আগে শেষ ম্যাচ খেলায় কলকাতাকে টিভির বদলে স্বচক্ষে দেখে গিয়েছি আগের ম্যাচে। ওদের কিছু ভুলভ্রান্তি আমার চোখে পড়েছে।’’
কলকাতায় জিতে প্লে অপের রাস্তা প্রশস্ত করতে তাই পুণে শিবিরের অঙ্ক, অ্যাটাকিং থার্ডে হিউমকে থামাও। বোরহাকে মাঝমাঠে সেকেন্ড বল ধরতে দিও না। আর সামিগ দ্যুতিকে নজর ছাড়া করা যাবে না কোনও মতেই।
রথ দেখা কলাবেচার ম্যাচে তিরি-মুতু, দ্যুতি-লিংডো, হিউম-জনসন ডুয়েলের মাঝেও তাই ব্রিটিশ প্ল্যাটের কৌশলকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখানোও তাই আজ আরও একটা চ্যালেঞ্জ হাবাসের কলকাতার কাছে।