এটিকের খাতা খুলে দর্শকদের প্রণাম পস্টিগার। ছবি: উৎপল সরকার
আটলেটিকো দে কলকাতা-৩ (পস্তিগা-২, ভালদো)
চেন্নাইয়ান-২ (জেজে, ইলানো)
ম্যাচটা শেষ হতেই আটানব্বই বিশ্বকাপে ব্রাজিলের সাইডব্যাক জে কার্লোসের কথা মনে পড়ে গেল।
ছেলেটাকে নাকি সে বার জিকো টিমে চাইছিলেন না। তখন জিকোর টিডি মারিও জাগালো তাঁকে বলেন, ‘‘নিয়ে নাও। ছেলেটার ভাগ্যটা বেশ। লাক ফ্যাক্টর কাজে লাগে।’’
নিজের জীবন-খাতার পাতাগুলো উল্টেপাল্টে স্মৃতি রোমন্থনের সময় আটলেটিকো দে কলকাতার কোচ আন্তোনিও হাবাসের মুখটা মনে পড়ে যায় এই লাক ফ্যাক্টরের জন্যই।
গত বছরই ওঁর ভাগ্যটা ভাবুন। রাউন্ড রবিন লিগে ড্রয়ের পর ড্র করে নক আউটে উঠে মোক্ষম দু’টো ম্যাচে বাজিমাত। ফাইনালে কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে কোথা থেকে রফিক শেষ মুহূর্তে উদয় হয়ে ট্রফিটাও ওঁর হাতে তুলে দিয়েছিল।
তার মানে এই নয় যে, আমি হাবাসকে কটাক্ষ করছি। রাফায়েল বেনিতেজ বা বার্নার্ড সুস্টারের যিনি সহকারী থেকেছেন, তাঁর ফুটবল-মগজ নিয়ে প্রশ্ন চলে না। কিন্তু ফুটবলে কোচেদের মূল্যায়ন করার সময় যে এক শতাংশ লাক ফ্যাক্টরের কথা বলা হয়, সেটা পুরোপুরি বোধহয় হাবাসের ঝুলিতে ভরে দিয়েছেন ফুটবল দেবতা।
না হলে ভাবুন তো, বিপক্ষ কোচ মাতেরাজ্জি গত বছর তাঁর লালকার্ডের জন্য এ দিন বেঞ্চেই রইলেন না। চিফ কোচ বেঞ্চে না থাকলে একটা টিম কী রকম সিদ্ধান্ত নিতে দোনোমোনো করে তা নিজে একঠু আধটু ফুটবল খেলা বা কোচিং করার সুবাদে জানি। হাবাস সেই সুবিধেটাই পেয়ে গেলেন শুরুতেই।
কিন্তু ওই যে বড় মঞ্চে কাজ করার সুবিধে, সেটা কাজে লাগালেন প্রথম পনেরো মিনিটের পর থেকে। আটলেটিকো তখন হঠাৎ ডিফেন্সিভ। নেপথ্যে সেই হাবাস মন্ত্র— আগে শত্রুকে মেপে নাও। তার পর নিজের ঘর গুছিয়ে আক্রমণ। এরই মধ্যে চেন্নাইয়ান কিপার বেটে হাবাসের ভাগ্যের চাকা আরও ঘুরিয়ে দিল। বোরহার নিরীহ লবটা ধরতে গিয়ে ওই তো সবার পিছনে ছিল। তা হলে সতীর্থ মিলসনকে ওই মুহূর্তে চেঁচিয়ে পজিশন নিয়ে সতর্ক করবে না কেন?
প্রথম পঁয়তাল্লিশ মিনিটে হয়তো কলকাতা কোচ বুঝে গিয়েছিল বিপক্ষের দুই সাইডব্যাক তাঁর টিমের কাছে ‘রসগোল্লা’। দ্বিতীয়ার্ধে খেলা শুরুর সময় সেই ‘রসগোল্লা’য় কামড় দিল স্প্যানিশ কোচ। এতক্ষণ নিষ্প্রভ দেখানো জাভি লারাকে বাঁ দিকে হিউমের সঙ্গে কম্বিনেশন করিয়ে শুরু করলেন আক্রমণ। আর তাতেই কেঁপে গিয়ে ম্যাচ থেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল চেন্নাই। পস্টিগার দ্বিতীয় গোলের সময় ভুল করল আনফিট মেন্ডি আর লেফটব্যাক রালতে। ভালদোর গোলের সময়ও হিউমকে রুখতে পারল না রাইটব্যাক অভিষেক। আর রালতে ওকে হেড নিতে দিল। এর পরে ভাগ্য যে হাবাসের মতো সাহসীর দিকে ঢলবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আর পস্টিগা? আইএসএলে আবির্ভাবেই দু’টো গোল করল ঠিকই। কিন্তু ওকে আমার আনফিট লাগল। মার্কি ফুটবলারের কাছ থেকে সে রকম ড্রিবল, ওয়ান-টু মুভও দেখলাম না। তবে ফুটবলে শেষ কথা গোল। যেটা জোড়া করে ম্যাচের সেরা ও-ই।
আটলেটিকো দু’টো গোল খেয়েছে ঠিকই। কিন্তু দু’টোই খাওয়ার নয়। প্রথম যে গোলটা খেল তাতে অমরিন্দরের দোষ দেখছি আমি। গোলকিপার যদি বোঝে বলটা পাবে না তা হলে সে এগোবে কেন? আর ইলানো যে পেনাল্টি থেকে গোলটা করল সেটা বিতর্কিত। এর বেশি কিছু বলব না। আর জাভি লারা পেনাল্টি মিস না করলে তো আটলেটিকো কলকাতার ৪-২ জেতার কথা!
এ দিন চেন্নাইয়ের টিমে আমার মোহনবাগানের তিন ফুটবলার জেজে, বলবন্ত, ধনচন্দ্র কেমন খেলে তা দেখতে মুখিয়ে ছিলাম। জেজে প্রথম ভারতীয় হিসেবে গোল করল। কিন্তু ইলানো, পস্টিগার মতো নামী বিদেশিরা এত মিস পাস করবে কেন? ডেড বল পেয়েও কাজে লাগাতে পারবে না? তাই খেলাটা উচ্চমানের মনে হয়নি কখনই।
পস্টিগার চোট টিভিতে দেখে মনে হচ্ছে, পরের গোয়া ম্যাচে নেই। ছোটখাটো ভুলভ্রান্তি বেরোল। কিন্তু কলকাতার কোচ যে হাবাস! বুদ্ধি আর ভাগ্য যাঁকে প্রতিকূলতার মধ্যেও অ্যাওয়ে ম্যাচে বারবার মহার্ঘ্য তিন পয়েন্ট পাইয়ে ‘জো জিতা ওহি সিকন্দর’ বানিয়ে দেয়!
আটলেটিকো দে কলকাতা: অমরিন্দর, রিনো, অর্ণব, নাতো, অগাস্টিন, বোরহা, গাভিলান, বলজিৎ (সুশীল), হিউম, লারা (আরাতা), পস্টিগা (ভালদো)।