চৌষট্টি খোপের বোর্ডে তাঁর জাদুকরী টাচ ফিরে পাওয়ার পর বিশ্বনাথন আনন্দ এই মুহূর্তে ‘বেশ কিছু নতুন চাল নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা’র কাজে ব্যস্ত। স্বভাবতই পরীক্ষার লক্ষ্যবস্তু ম্যাগনাস কার্লসেন।
যাঁর সামনে গত নভেম্বরে নিজের শহর চেন্নাইয়ে পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারতীয় সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারকে নিজের তাজ খুলে রাখতে হয়েছিল। একটাও গেম না জিতে বিশ্ব খেতাবি লড়াই হেরে। “কার্লসেন নিয়ে আমার চিন্তাভাবনা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। নতুন ধরনের বেশ কিছু চাল নিয়ে আমার ভাবনা আছে। যেগুলো চ্যালেঞ্জার হিসেবে পরের বিশ্ব খেতাবি লড়াইয়ে আমি কার্লসেনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করব। সামনের কয়েক মাস এটাই আমার প্রধান কাজ, খেতাবি লড়াইয়ের প্রস্তুতি হিসেবে নতুন-নতুন চালের ভাবনাগুলোকে বাস্তবে রূপ দেওয়া,” বিশ্ব খেতাবি লড়াইয়ে নামার টিকিট পাওয়ার টুর্নামেন্ট ক্যান্ডিডেটস চ্যাম্পিয়ন হয়ে ঘরে ফিরে আজ বলেছেন চুয়াল্লিশ বছরের আনন্দ।
২০১৪-র শেষের দিকে কার্লসেনের বিরুদ্ধে বদলার খেতাবি লড়াই প্রসঙ্গে আনন্দের আপাতত একটাই মন্তব্য, “আমার দীর্ঘ দাবা কেরিয়ারে ম্যাচটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা সে ধরনের লড়াই নয় যে, আপনি যা চাইলেন, যা পরিকল্পনা করলেন, সব সে ভাবেই চলল! এটুকু বলতে পারি যে, আমার কাছে সব কিছুই আবার ইতিবাচক লাগছে। আগের বার এই পর্যায়ের দাবায় প্রতিপক্ষকে যতটা চ্যালেঞ্জ করা, যত বেশি আক্রমণাত্মক খেলা উচিত ছিল আমার, তার কোনওটাই পারিনি।”
ক্যান্ডিডেটসে সাফল্যের পর প্রতিপক্ষরা এ বার আনন্দকে ফের ভয় পাবেন কি না জানতে চাইলে স্বয়ং আনন্দের জবাব, “আমি মনে করি ধারাবাহিক ভাল খেলা শুরু করলে প্রতিপক্ষের উপর অবশ্যই চাপ তৈরি করা সম্ভব। তা ছাড়া, কোনও বড় টুর্নামেন্টে হারের যে ধাক্কা মানসিক ভাবে পরাজিত প্লেয়ারের উপর পড়ে, সেটার থেকেও বেরিয়ে আসা যায় ধারাবাহিক ভাল খেললে। গত বছর খেতাবি লড়াই হারার পর এই শহরেই আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, আমাকে এই ধাক্কা থেকে মানসিক ভাবে বেরিয়ে আসতেই হবে।”
তার জন্য কিংবদন্তি ভারতীয় দাবাড়ু খানিকটা শ্রেয় দিতে চান বাংলার এক গ্র্যান্ডমাস্টারকে। তিনি সন্দীপন চন্দ, রাশিয়ায় ক্যান্ডিডেটসেও আনন্দের ‘সেকেন্ড’ ছিলেন। “আমার সেকেন্ড হিসেবে সন্দীপন দারুণ পজিটিভ কাজ করেছে। আমি চেয়েছিলাম, এমন এক জনকে সঙ্গে নিয়ে যাব যার সঙ্গে আমি খেলেছি। কী দারুণ সৃষ্টিশীল দাবাড়ু সন্দীপন। আমি ওকে আমার নোটস দিয়ে কখনওসখনও অলস ভাবে বলতাম, কাল সকালে না হয় এগুলো নিয়ে আলোচনায় বসব। কিন্তু মনে আছে, ও খানিক পরেই আমার কাছে ফিরে এসে বলত, এখনই আমরা নোটস নিয়ে আলোচনা করলে কালকের গেমে তুমি কী ভাবে খেলবে তা নিয়ে ভাবার আরও বেশি সময় পাবে। আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম যে, ও আমাকে খুব বেশি না চেনা সত্ত্বেও আমার গেমের ব্যাপারে ওর কী দারুণ ধ্যানধারণা। খুব তাড়াতাড়ি আমার জুতোয় পা গলিয়ে ফেলে ও আমার প্রচুর বোঝা বয়েছে।”