পাঁচ মাস আগে যিনি বিশ্বনাথন আনন্দকে ‘ওল্ড ম্যান’ বলেছিলেন তিনিই এখন একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছেন। ‘‘আনন্দকে যাঁরা অবসর নেওয়ার কথা বলেছিলেন, তাঁদের লজ্জা হওয়া উচিত,” টুইটগ্যারি কাসপারভের। ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্টে পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের দুরন্ত পারফরম্যান্সে মুগ্ধ প্রাক্তন রাশিয়ান মহাতারকাও।
মঙ্গলবার দশম রাউন্ডে শাখরিয়ার মামেদিয়ারভের বিরুদ্ধে ড্র করে ক্যান্ডিডেটস দাবায় এখন শীর্ষে ভারতীয় তারকা। আনন্দের পয়েন্ট সাড়ে ছয়। দু’নম্বরে থাকা আর্মেনিয়ার লেভন অ্যারোনিয়ানের থেকে এক পয়েন্টে এগিয়ে তিনি। নভেম্বরে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ম্যাগনাস কার্লসেনের কাছে বিশ্রী হারের পর অনেকেই বলেছিলেন ‘আনন্দ যুগ শেষ’। আজ তাঁরাই ঢোক গিলছেন। ৪৪ বছরের ‘তরুণ’ এত দ্রুত কী ভাবে উঠে এলেন ব্যর্থতার চাপ কাটিয়ে? ক্যান্ডিডেটসে জিতলে কার্লসেনকে কি হারাতে পারবেন তিনি? গোটা বিশ্ব উৎসুক জানতে।
আনন্দের পর এশিয়ার সর্বোচ্চ এলো রেটিং যাঁর দখলে অন্ধ্রপ্রদেশের পি হরিকৃষ্ণ আর আনন্দের প্রাক্তন প্র্যাকটিস পার্টনার বাংলার তারকা দাবাড়ু সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায় কী মনে করছেন? কলকাতা গ্র্যান্ড মাস্টার ওপেনে উঠতি দাবাড়ুদের পরামর্শ দিতে হাজির দুই প্লেয়ারকে প্রশ্নটা করতেই হরিকৃষ্ণ বলে দিলেন, “আনন্দ কিন্তু সমালোচকদের ভুল প্রমাণ করলেন। আমার মনে হয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে হারটা একদিক থেকে ওঁর কাছে শাপে বর হয়েছে। বিশ্বসেরা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদটা এতে বেড়ে গিয়েছে।” সঙ্গে হরি যোগ করেন, “কার্লসেনের কাছে হারের পর থেকেই উঠে দাঁড়ানোর পরিকল্পনাটা শুরু করে দিয়েছিলেন আনন্দ। গত মাসে জুরিখ চ্যালেঞ্জারে সেটা প্রয়োগ করেছিলেন কিন্তু সেটা কাজে আসেনি। ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্টে কিন্তু ভুলগুলো শুধরে নিয়ে দুর্দান্ত ভাবে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন। এই ফর্মে থাকলে ফের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের সিংহাসনে বসার সুযোগ রয়েছে আনন্দের।”
আর সূর্য বলে দেন, “নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি আনন্দ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের মুকুট ধরে রাখতে এক একজন চ্যালেঞ্জারদের ধরে প্রস্তুতি নিতেন। ক্যান্ডিডেটসে ওঁর চ্যালেঞ্জার ঠিক হতেই প্রস্তুতির গোটা সময়টাই ওই চ্যালেঞ্জারকে নিয়ে পড়ে থাকতেন। কার্লসেনের কাছে হারের পর সেটা বদলেছে বলেই মনে হয়। এখন নিজের খেলার উপর বেশি নজর দেওয়ায় আমরা আরও আগ্রাসী আনন্দকে দেখতে পাচ্ছি। প্রথম রাউন্ডে অ্যারোনিয়নের মতো শক্ত গাঁটকে হারানোর পরই আনন্দ ছন্দে চলে আসেন। আমার মনে হয় এ বার ক্যান্ডিডেটস জিতলে ওঁর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ ৫০-৫০।”
‘আনন্দের পর ভারতীয় দাবাড়ুদের মধ্যে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না’। ক’দিন আগেই মন্তব্য করেছিলেন ব্রিটিশ গ্র্যান্ড মাস্টার নাইজেল শর্ট। এ ব্যাপারে হরি বলেন, “ওঁর ব্যক্তিগত মত থাকতেই পারে। তবে আমরা কিন্তু চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ক্যান্ডিডেটস দাবায় খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে আমি এর পর ফিডে গ্রাঁ প্রি-কে টার্গেট করছি। প্রস্তুতি চলছে। আমার কোনও কোচ নেই। সূর্যর সঙ্গে প্র্যাকটিস করি। আরও কয়েকজন প্র্যাকটিস পার্টনার রয়েছে।” আর সূর্য বলে দেন, “আসলে ইউরোপে যে রকম সুযোগ সুবিধা রয়েছে সেটা ভারতে পাওয়া যায় না। ভারতে সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্লেয়ারদের জন্য সে রকম কোনও টুর্নামেন্টই আয়োজন হয় না। ইউরোপ তো ছেড়েই দিন, চিন এমন কী বাংলাদেশেও দাবা লিগ হয়। এ দেশে সে রকম টুর্নামেন্ট কোথায়? সর্বোচ্চ মানের ক্লোজড টুর্নামেন্ট হলে সেটা দেশের টপ প্লেয়ারদের রেটিং আর আত্মবিশ্বাস বাড়তে সাহায্য করে। সে দিক থেকে টুর্নামেন্ট আয়োজনে এখন গোটা দেশে কলকাতা তবু মানে অনেকটা এগিয়ে।”
আলেখিন চেস ক্লাবের সচিব সৌমেন মজুমদার আবার এ বিষয়ে কিছুটা আশার আলো দেখালেন। তিনি বলেন, “টুর্নামেন্টে স্পনসর না পাওয়ার সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যেও আমাদের ক্লাবের প্রেসিডেন্ট মদন মিত্র চেষ্টা করছেন। আগামী বছর থেকে আমরা ক্লোজড টুর্নামেন্ট আয়োজন করার উদ্যোগ নিচ্ছি।”