ততক্ষণে পর্দা নেমে গিয়েছে বীর-জারা মহাকাব্যের ক্রিকেটীয় সংস্করণের উপর। জারা প্রীতি জিন্টার পঞ্জাবকে হারিয়ে বীর শাহরুখ খানের নাইটরা গোটা চিন্নাস্বামী চক্কর দিয়ে ভিকট্রি ল্যাপও সেরে ফেলেছেন। সব শেষে উৎসবে ক্লান্ত, খুশিতে ফুটতে থাকা বলিউড বদশার নাগাল পেল টেলিভিশন ক্যামেরা।
কিন্তু এ কী! গোটা দলের জন্য যিনি এ দিন বিশেষ ‘চ্যাম্পিয়ন’ লেখা টি-শার্ট এনেছেন, তাঁর নিজের গায়ে পঞ্জাবের লাল জার্সি কেন?
প্রশ্নটা শুনেই প্রতিবাদী দ্বিতীয় বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দে হাজার ওয়াটের হাসিতে উদ্ভাসিত নাইট মহানায়ক। বললেন, “মোটেই পঞ্জাবের জার্সি পরিনি। আমি সেই মানুষটার জার্সি পরেছি, যাকে আমি সবচেয়ে বেশি ভালবাসি। প্রীতির মতো বন্ধু আমার কমই আছে।” পঞ্জাব মালকিনের হাত থেকে শেষ মুহূর্তে কাপ ছিনিয়ে নিলেও প্রিয় বন্ধুর ক্ষতে প্রলেপ দিতে ভুল হল না।
বীর বললেন, “ক্ষমা করে দাও জারা। এ বারটা আর আত্মত্যাগ করতে পারলাম না!”
শাহরুখ জানান, ফাইনালে আর যার বিরুদ্ধেই হোক, প্রীতির বিরুদ্ধে খেলতে চাননি। দল গড়া থেকে ব্যক্তিগত জীবনের নানা সমস্যা, একে অপরের সঙ্গে নাকি সব নিয়েই কথা হয় তাঁদের, এতটাই গভীর বন্ধুত্ব। “কিন্তু আজ মাঠে নেমে দু’জনেই জিততে চেয়েছিলাম। আমাদের স্রেফ ভাগ্য ভাল যে, এ বারের আইপিএলের সেরা টিমকে হারিয়ে কাপটা আমাদের হাতে উঠল।”
কলকাতা থেকে মাঠে ডিগবাজির নতুন চল শুরু করেছেন শাহরুখ। এ বারের খেতাবটা ছোট ছেলে আবরাম আর নিজের নাইটদের উৎসর্গ করছেন জানিয়ে টিভি সঞ্চালককে সঙ্গে নিয়ে ফের এক দফা ডিগবাজি সেরে নিলেন। গানও গাইলেন, “জানম দেখ লো মিট গই দুরিয়াঁ...।” এবং বলে দিলেন, “দ্বিতীয় বার চ্যাম্পিয়ন হতে পেরে একটা স্বপ্ন সত্যি হল। তবে কাপটা কলকাতায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারাই আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত।”
দু’বছর আগে আবেগের বিস্ফোরণে অবিশ্বাস্য একটা বিজয়োৎসবের সাক্ষী হয়েছিল কলকাতা। রবিবার রাতের চিন্নাস্বামীতে দাঁড়িয়ে শাহরুখ যে ইঙ্গিত দিলেন, তাতে এ বারের বিজয়োৎসব আগেরটাকে ছাপিয়ে গেলে অবাক হওয়ার থাকছে না। বলে দিলেন, “আমরা হুগলির উপর নাচব, রাস্তায় দারুণ সব কাণ্ড ঘটাব, কথা দিচ্ছি বিনোদনের অভাব রাখব না। একবার খালি কাপটা নিয়ে কলকাতায় ফিরতে দিন! মমতাদি আমরা আসছি!”
শাহরুখ বলছিলেন, “এ বার আমরা জিততে পারি, এটা কেউ ভাবেনি। বরং নিলামের পর আমাদের টিম নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছিল। একমাত্র আমরা নিজেরা নিজেদের ক্ষমতায় বিশ্বাস হারাইনি। আর নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে পারলে অসাধ্য সাধন করা যায়।”
ফাইনালের আগে এই বিশ্বাসটাই তীব্র ছিল। টুইট করেন, “দু’টো হৃদয় পাশাপাশি ছুটছে। কেকেআর আর আমার। লোকে বলে দু’টো হৃদয় যখন রেসে নামে... দু’জনেই জেতে। তাই চলো, আরও একটু বেশির আশা করা যাক, আরও বড় স্বপ্ন দেখি আমরা। আমার ছেলেরা, তোমাদের ভালবাসি।”
তাঁর ছেলেরা তিন বছরে দ্বিতীয় বার আইপিএল ফাইনালে নামার আগের চব্বিশ ঘণ্টা এতটাই নার্ভাস ছিলেন নাইট রাইডার্স মালিক যে, প্রায় বিনিদ্র কাটান সময়টা। “যে ভাবে লাগাতার টুইট করে চলেছি, মনে হচ্ছে এটা নার্ভাসনেস থেকে তৈরি উত্তেজনার লক্ষণ। আঙুলগুলো থামতেই চাইছে না...!!!!” ফাইনাল নিয়ে শাহরুখের প্রস্তুতির লিস্টে এক নম্বরে ছিল পরিবারের নবতম সদস্য, হামাগুড়ি টানা ছোট ছেলে আবরামের জন্য নাম লেখা নাইট জার্সি তৈরি করানো। বিকালে টুইটারে আবরামের জার্সির ছবি দিয়েছিলেন। রাতে ছেলেকে ট্রফি উৎসর্গ করার সময়েও বললেন সে কথা। ফাইনালে মাঠে থাকবেন বলে আগের দিন রাতভর শুটিং করেছেন ফারহা খানের নতুন ছবির জন্য। শাহরুখের নিজের টুইট অনুযায়ী, টানা পনেরো ঘণ্টারও বেশি। যার মধ্যে বারো ঘণ্টা ধরে জলের মধ্যে অ্যাকশন সিকোয়েন্স ক্যামেরাবন্দি করা হয়েছে। কিন্তু কাজের ব্যস্ততাও ফাইনাল নিয়ে তাঁর নার্ভাসনেস ভোলাতে পারেনি। যার প্রকাশ ওই মুহুর্মুহু টুইটে। শাহরুখ লেখেন, “কাল বেঙ্গালুরু। আমার বড় হয়ে ওঠার শহর। বাচ্চাদের ওদের দাদু-দিদার বাড়িটা দেখাতে হবে।”
ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
ফাইনালের স্কোরবোর্ড
কিংস ইলেভেন পঞ্জাব
সহবাগ ক গম্ভীর বো উমেশ ৭
ভোহরা ক ও বো চাওলা ৬৭
বেইলি বো নারিন ১
ঋদ্ধিমান ন.আ. ১১৫
ম্যাক্সওয়েল ক মর্কেল বো চাওলা ০
মিলার ন.আ ১
অতিরিক্ত ৮
মোট ২০ ওভারে ১৯৯-৪
পতন: ২৩, ৩০, ১৫৯, ১৭০
বোলিং: মর্কেল ৪-০-৪০-০, উমেশ ৪-০-৩৯-১,
নারিন ৪-০-৪৬-১, সাকিব ৪-০-২৬-০, চাওলা ৪-০-৪৪-২
কলকাতা নাইট রাইডার্স
উথাপ্পা ক অক্ষর বো জনসন ৫
গম্ভীর ক মিলার বো কর্ণবীর ২৩
মণীশ ক বেইলি বো কর্ণবীর ৯৪
ইউসুফ ক ম্যাক্সওয়েল বো কর্ণবীর ৩৬
সাকিব রান আউট (বেইলি) ১২
দুশখাতে ক মিলার বো কর্ণবীর ৪
সূর্যকুমার ক ভোহরা বো জনসন ৫
চাওলা ন.আ ১৩
নারিন ন.আ ২
অতিরিক্ত ৬
মোট ১৯.৩ ওভারে ২০০-৭
পতন: ১, ৫৯, ১৩০, ১৫৬, ১৬৮, ১৭৯, ১৮৭
বোলিং: জনসন ৪-০-৪১-২, বালাজি ৪-০-৪১-০,
আওয়ানা ৩.৩-০-৪৩-০, কর্ণবীর ৪-০-৫৪-৪, অক্ষর ৪-০-২১-০।