বাষট্টির অপ্রত্যাশিত নায়ক ভরসা দিচ্ছেন ব্রাজিলকে

আমার মনে হচ্ছে নেইমার না থাকাটা জার্মানিকে অসুবিধেয় ফেলতে পারে

নেইমার দ্য সিলভার অবর্তমানে জার্মানির সামনে কম্পিত ব্রাজিল নানা ভাবে উৎসাহ-তরঙ্গ খুঁজছে। রোববার রাতে যেমন গোটা টিমকে স্কোলারি লাস ভেগাসে হওয়া আলটিমেট ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপ দেখালেন। তার মিডলওয়েট ফাইনালে ব্রাজিলীয় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রচণ্ড লড়েও উইম্বলডনে ফেডেরারের মতোই পাঁচ রাউন্ডে হেরে গেলেন। কিন্তু গোটা টিম বড় স্ক্রিনের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁকে সুদূর তেরেসোপলিস বেসক্যাম্প থেকে উৎসাহ দিয়ে গেল। জুলিও সিজার তো এক বার প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে বড় স্ক্রিনে ঘুঁষি মেরে বসেন। রাতে পুরনো বিশ্বকাপ ভিডিও-ও দেখানো হল দলকে।

Advertisement

গৌতম ভট্টাচার্য

বেলো হরাইজন্তে শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৪ ০২:৪৬
Share:

নেইমার দ্য সিলভার অবর্তমানে জার্মানির সামনে কম্পিত ব্রাজিল নানা ভাবে উৎসাহ-তরঙ্গ খুঁজছে। রোববার রাতে যেমন গোটা টিমকে স্কোলারি লাস ভেগাসে হওয়া আলটিমেট ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপ দেখালেন। তার মিডলওয়েট ফাইনালে ব্রাজিলীয় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রচণ্ড লড়েও উইম্বলডনে ফেডেরারের মতোই পাঁচ রাউন্ডে হেরে গেলেন। কিন্তু গোটা টিম বড় স্ক্রিনের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁকে সুদূর তেরেসোপলিস বেসক্যাম্প থেকে উৎসাহ দিয়ে গেল। জুলিও সিজার তো এক বার প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে বড় স্ক্রিনে ঘুঁষি মেরে বসেন। রাতে পুরনো বিশ্বকাপ ভিডিও-ও দেখানো হল দলকে। আশ্চর্য লাগছে ব্রাজিলীয় কোচ উদ্দীপনার সবচেয়ে সহজ তরঙ্গ হাতের কাছে থেকেও ব্যবহার করলেন না দেখে! তিনি আমারিল্ডো তাবারেজ দ্য সিলভেরা তো থাকেন রিওতেই। এই পঁচাত্তর বছর বয়সেও যখন মারাকানায় ফ্রান্স-জার্মানি ম্যাচ দেখতে গিয়েছেন, তখন বেসক্যাম্প অবধি আসতেই পারতেন! তেরেসোপলিস তো রিও থেকে খুব দূরে নয়!

Advertisement

বহু কাঠখড় পুড়িয়ে ফোনে তো তাঁকে ধরা গেল। কথা বলার সময়ও রয়েছে। কিন্তু বাষট্টির বিশ্বকাপে পেলের অবর্তমানে তাঁর বদলি হিসেবে নায়ক বনে যাওয়া আমারিল্ডো যে ইংরেজি বলতে পারেন না। মিলানে খেলতেন বলে ইতালিয়ান জানেন। ভাঙা ভাঙা স্প্যানিশও। কিন্তু নো ইংলিশ। বিস্মিত লাগল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কিছু দিন কোচিং করিয়েও তিনি ইংরেজি জানেন না দেখে! ফোন রেখে আবার নতুন করে দোভাষী খুঁজতে হল। সাও পাওলোর নামী ব্রাজিলীয় সাংবাদিক লুইস অগাস্টা সহৃদয় ভাবে অনুবাদকের কাজ করতে রাজি হলেন ল্যাপটপে নিজের কপি কম্পোজ করা ছেড়ে।

একটা করে প্রশ্ন তাঁকে ইংরেজিতে লিখে দিচ্ছি আর তিনি ফোনে ও-প্রান্তের জবাব শুনে তর্জমা করছেন। এবিপি-কে ফোনে অনেকটাই সময় দিলেন আমারিল্ডো। ভাষা সমস্যায় তার পুরো ফায়দা তোলা গেল না। কিন্তু মর্মার্থ খুব পরিষ্কার— ব্রাজিল এত ভয় পেও না...ইতিহাস থেকে উদ্দীপনা নাও...

Advertisement

প্রশ্ন: অদ্ভুত মিল বাষট্টির সঙ্গে। সে বার পেলে ছিলেন না। এ বার নেইমার নেই। আপনি মিল পাচ্ছেন?
আমারিল্ডো: অসম্ভব মিল পাচ্ছি। অবাক হয়ে ভাবছি নিজের জীবদ্দশাতেই যে কী করে দু’টো জিনিস আগের আর পরের এ রকম মিলে যেতে পারে! এ বার যেমন জার্মানিটা মরণ-বাঁচন ম্যাচ, সে বার তেমনই ছিল স্পেন! স্পেন তখনকার দারুণ টিম। আমাদের অবস্থা ভাবুন, বিশ্বের এক নম্বর প্লেয়ার পেলে টিমের বাইরে। আর স্পেনকে হারাতে না পারলে আমরা আউট। সেই ম্যাচটা ব্রাজিল তার পর ফাটিয়ে খেলে। আমরা জিতেছিলাম ৩-০। দু’টো গোল ছিল আমার! পেলের বদলি হিসেবে খুব একটা ঝোলাইনি।

প্র: ঝোলানোর কথা কী বলছেন! বাষট্টির রিপোর্ট খুললে এখনও দেখা যায় আপনি বাকি টুর্নামেন্টে পেলের অভাব বুঝতেই দেননি। এমনকী ফাইনালে ব্রাজিল ০-১ পিছিয়ে পড়ার পর আপনি গোল শোধ করেছিলেন!
আমারিল্ডো: অবশ্যই করেছিলাম। টুর্নামেন্টে সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট তিনটে গোলই আমার। তাই এরাও কেন এত মুষড়ে পড়ছে জানি না। আমি তো মাঠে বসে সে দিন জার্মানি-ফ্রান্স ম্যাচ দেখেছি। আমার মোটেই এই জার্মানিকে অতীতের সুপার-জার্মান টিমগুলোর মতো লাগেনি। এদের অনেক ফাঁক-ঢাক আছে। আমার তো মনে হয় আমরা যদি পেলে ছাড়া কাপ জিততে পারি, এরাও নেইমার ছাড়া ফাইনাল ওঠার ক্ষমতা রাখে।

প্র: নেইমার এখনও জেদ করছেন ব্রাজিল ফাইনাল গেলে একটা অসম্ভব চেষ্টা করবেন। তাঁর শিরদাঁড়ার ব্যথা নাকি ওষুধে খানিকটা কমেছে।
আমারিল্ডো: পাগলামি হচ্ছে নাকি? ও নামলে তিরিশ সেকেন্ডের মধ্যে আবার একটা মারবে। বিশ্বকাপে দ্রুততম প্লেয়ার হিসেবে মাঠ থেকে উঠে আসতে হবে।

প্র: তা হলে টিম কী ভাবে পরিকল্পনা করবে?
আমারিল্ডো: প্রথমত উইলিয়ান যদি নেইমারের পরিবর্ত খেলে বা যে-ই খেলুক, তাকে আমি বলব, তোমার সবচেয়ে সুবিধে হবে জার্মানি জানে না তুমি কী! ওরা পুরোটাই নেইমার ভেবে এত দিনকার ব্রাজিলকে দেখেছে। এই বিশ্বকাপে সব ক’টা টিমই জেনে এসেছে নেইমারকে আটকে দিলেই ব্রাজিল ফরোয়ার্ড লাইন শেষ! কালকে সেটা হঠাৎই বদলাচ্ছে। বিপক্ষ জানেই না ব্রাজিল কী ভাবে আক্রমণে যাবে। এটা একটা বড় সুবিধে। উইলিয়ান, মনের জোর রাখো! জার্মানি এমন কিছু নয়। এদের চেয়ে ঢের ভাল জার্মান টিম আমি আগে দেখেছি।

প্র: সে বার পেলে বসে যাওয়াটা আপনারা মানসিক ভাবে সামলেছিলেন কী ভাবে? কোচ কোনও ভাষণ-টাষণ দিয়েছিলেন? সে যুগে তো মনোবিদ-টিদেরও চল ছিল না?
আমারিল্ডো: না, না ও সব ছিল না। তবে আমাদের টিমটা অনেক বেটার ছিল। কী কী সব প্লেয়ার ছিল। ডিডি, ভাভা, গ্যারিঞ্চা। উফ্ গ্যারিঞ্চা! বোতাফোগোয় আমরা একসঙ্গে খেলতাম বলে ওর সঙ্গে আমার বোঝাপড়াটাও দারুণ ছিল!

প্র: স্পেন ম্যাচের সকালটা মনে পড়ে? বা বাষট্টির ফাইনালের দুপুর? পেলে কোনও ভাবে উদ্দীপ্ত করেছিলেন?
আমারিল্ডো: মনে পড়ে না। পেলে বেচারি খুব মনমরা ছিল। এত বড় প্লেয়ার, গোটা বিশ্ব তাকে দেখবে বলে তাকিয়ে রয়েছে, আর সে-ই কি না খেলতে পারছে না!

প্র: গ্যারিঞ্চা?
আমারিল্ডো: যখন চার দিকে দুর্ভাবনার ঢেউ গ্যারিঞ্চা গিয়ে কোচকে বলেছিল, এত ভাববেন না। খেলার কি বাঁশি এখনও বেজেছে? মাঠে যাইনি তো আমরা এখনও। আর আমাকে ডেকে বলেছিল, এত কথা কীসের রে! যা তো ঘরগুলো দেখে আয়, আমাদের এগারো জন আছে কি না? এগারো থাকলেই চলবে! তার পর কী খেলাটাই না খেলেছিল!

হ্যাঁ এটা আমি স্বীকার করতে বাধ্য সেই যুগের সঙ্গে একটাই তফাত। নেইমারের না থাকা ঢাকতে এই টিমটায় কোনও গ্যারিঞ্চা নেই!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement