প্রশ্ন: ভেবেছিলেন আদালতকে আপনার দেওয়া একটা বন্ধ খাম এই পরিমাণ প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে?
মুদগল: এগুলো তো ও রকম আগে থেকে ভাবা যায় না। তবে আমার মনে হয়েছিল এটা দেওয়া দরকার। এমন সাংঘাতিক সব অভিযোগ ছিল। যা আদালতকে জানানো প্রয়োজন ছিল।
প্র: অভিযোগগুলো নিয়ে আপনার কমিটি তদন্ত করল না কেন?
মুদগল: সব অভিযোগ প্রমাণিত নয়। আমাদের পক্ষে সম্ভবও ছিল না। কিন্তু এত বড় মাপের অভিযোগ যে, অবশ্যই সবিস্তার তদন্ত হওয়া উচিত। তাই আদালতকে বন্ধ খামে জানিয়েছি।
প্র: আপনার কি মনে হয় সিবিআই তদন্ত হওয়া উচিত?
মুদগল: সেটা আদালত যা ঠিক করবে।
প্র: শ্রীনিবাসন সারা দিনে পদত্যাগ করা দূরে থাক, কোনও প্রতিক্রিয়াই দেননি। আপনি কি আশ্চর্য?
মুদগল: আশ্চর্য নই। এমনটাই আশা করেছিলাম।
প্র: কেন?
মুদগল: আমার মনে হয় যা বলার, আদালতে সে দিন ওঁর আইনজীবীর মাধ্যমে বলবেন।
প্র: সবাই বলছে ভারতীয় ক্রিকেটে মোড় ঘুরে গিয়েছে আপনার বন্ধ করা খামে।
মুদগল: মনে রাখবেন, এখনও মোড় ঘোরেনি। এগুলো আদালতের মন্তব্য। এখনও রায় নয়।
প্র: মনে হচ্ছে পরশু দিন রায়ের দিকে কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর মতো আপনিও তাকিয়ে থাকবেন।
মুদগল: (হাসি) আমি ক্রিকেট-সম্পর্কিত যে কোনও বিষয়ই হাঁ করে গিলি। রায়ের দিকেও যে তাকিয়ে থাকব তাতে আর আশ্চর্য কী? যেমন আমি ঢাকায় ভারতের দু’টো ম্যাচ খুব মন দিয়ে দেখেছি। আর আমার মনে হয়েছে ধোনিকে এত ভাল ক্যাপ্টেন্সি করতে খুব কম দেখেছি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ মোটেও স্পিন খারাপ খেলে না। কিন্তু যে ভাবে স্পিনের ফাঁসে ওদের জড়ালো, সেটা খুব প্রশংসনীয়।
প্র: ধোনি যে জি স্পোর্টসের বিরুদ্ধে একশো কোটি টাকার মামলা করে ফেললেন, তাতে কি আপনি আশ্চর্য?
মুদগল: আশ্চর্য নই। ধোনি এক জন শক্তিশালী লোক। আর শক্তিশালী লোকেরা ওকে ব্যাক করে থাকে। আমি শুধু আশ্চর্য যে অন্তর্বর্তিকালীন নির্দেশটা সুপ্রিম কোর্টের অর্ডারের আগেই বেরিয়ে যেতে দেখে। আমার মনে হয় সুপ্রিম কোর্ট কী বলে তার জন্য অপেক্ষা করা যেত।
প্র: সারা দিনে বোর্ড সদস্যরাও যে নিশ্চুপ রইলেন, এতটা কেউ ভাবেনি। তদন্ত করতে গিয়ে বোর্ড সদস্যদের এই আনুগত্য কি আপনি বুঝতে পেরেছিলেন?
মুদগল: সে আর বুঝিনি! এটা বুঝেছিলাম যে শ্রীনি বন্ধু হিসেবে খুব বিশ্বস্ত (হাসি)। হি ইজ আ ভেরি লয়্যাল ফ্রেন্ড।
প্র: বন্ধ খামের নামগুলো প্রকাশ্যে বলতে কী অসুবিধে ছিল?
মুদগল: ছিল। কারণ অভিযোগগুলো প্রমাণিত নয়। প্রকাশ্যে ওই বড় বড় নামগুলো বলা যায় না। একই সঙ্গে অভিযোগের গুরুত্ব এত বেশি যে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়াই উচিত।
প্র: ভারতীয় মিডিয়ায় প্রভূত জল্পনা চলছে, খামের ভেতর কার কার নাম আছে। নামগুলো জানতে চাইছি না। শুধু জিজ্ঞেস করছি, শুধুই কি ক্রিকেটারদের নাম?
মুদগল: ক্রিকেটারও আছে। কর্মকর্তাও আছে।
প্র: এ দিন আদালতে যা হল, তার পর এ বারের আইপিএল কি বন্ধ করে দেওয়া উচিত?
মুদগল: না সেটা মনে হয় বাড়াবাড়ি হবে। বেশি রিঅ্যাকশন হবে। এত প্লেয়ার জড়িত।
প্র: কিন্তু সিএসকে-কে কি খেলতে দেওয়া উচিত?
মুদগল: এটা নির্ভর করছে কোর্ট কী মনোভাব নেয় তার ওপর। গুরুনাথ মইয়াপ্পনের কী শাস্তি হয় তার ওপরে। অনেক কিছু হতে পারে। আগাম পয়েন্ট কেড়ে নেওয়া হতে পারে। কড়া সতর্কতা জারি করা যেতে পারে। আবার একদম বের করেও দেওয়া যেতে পারে।
প্র: সিএসকে-র জয়পুরের সেই ম্যাচে আপনি কী কী গণ্ডগোলের দেখেছিলেন, একটু বলবেন?
মুদগল: আমার খুব অদ্ভুত লেগেছিল যে ১১ ওভারে ১ উইকেটে ৮৯ থেকে কী করে রানটা ২০ ওভারে মাত্র ৪ উইকেটে ১৪১ হল। সিএসকে-তে এত ছক্কা মারার লোক আছে। তারা গোটা ইনিংসে একটাও ছয় মারেনি। শেষ দশ ওভারে রান বাড়ানোরও চেষ্টা করেনি। এর বিপরীত যুক্তিও আছে। অনিল কুম্বলে যেমন আমার সামনে এসে বলেছিল, রাজস্থান রয়্যালস শেষের দিকটায় এত ভাল বোলিং করেছে যে অনেক টিমই জয়পুরে শেষ দিকটায় রান পায়নি। কুম্বলে এটাও বলেছিল যে সিএসকে যেহেতু তখন কোয়ালিফাই করে গিয়েছিল হয়তো ওরা সেই সময়টা রিল্যাক্সড ছিল।
প্র: আপনি কুম্বলেকে ধরছেন প্রাক্তন ক্রিকেটার হিসেবে একজন বিশেষজ্ঞের মতো। কিন্তু কুম্বলে তো মাত্র ক’দিন আগে শ্রীনির একজন ভোটারও ছিলেন। তা হলে তাঁর পর্যবেক্ষণ কী ভাবে নিরপেক্ষ হয়?
মুদগল: হতেই পারে। বেশ কিছু আজব জিনিস ওই ম্যাচটার মধ্যে আমরা লক্ষ্য করেছিলাম। যেমন ঠিক ১১ ওভারেই বিন্দু দারা সিংহের মাধ্যমে মইয়াপ্পন বাজি ধরল, সিএসকে-র রান ১৩৫ থেকে ১৪০-এর মধ্যে থাকবে।
প্র: এটা কি সত্যি যে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আপনার সামনে এসে বলেছিলেন, ম্যাচটায় তিনি পরিষ্কার গন্ধ পাচ্ছেন?
মুদগল: বলে থাকতে পারে। আমার ঠিক মনে নেই। অনেকের সঙ্গেই কথা বলেছিলাম। সৌরভ বলেছিল কিনা, রেকর্ড দেখে বলতে হবে।
প্র: এই তদন্ত করে উঠে এ বার আইপিএলের ম্যাচ দেখতে বসে কি সংশয়হীন থাকতে পারবেন যে, খেলাগুলো ঠিক স্পিরিট মেনে হচ্ছে?
মুদগল: এটা ঠিকই যে জেনুইন ম্যাচেও হয়তো ভুলভাল সন্দেহ হবে। ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে আমার যেটা খারাপ লাগছে, বেশির ভাগ ম্যাচই কিন্তু সৎ ভাবে খেলা হয়। একেবারে স্ট্রেট। তার ভেতরে কোনও ছলচাতুরি থাকে না। কিন্তু দু’একটা পচা মাছ সব পরিবেশ বারোটা বাজিয়ে দেয়।
প্র: পচা মাছ না বড় পচা মাছ?
মুদগল: হুঁ।