কোচিংয়ের কোনও নিয়ম কানুন নয়, ট্যাকটিসের হিসাবনিকাশও না, ব্রাজিলে বাচ্চারা বলে শট মারতে শেখার পর শুধু একটা ব্যাপারই বোঝে যে ভাবেই হোক বলটাকে ধরে কাটিয়ে নিয়ে গিয়ে গোল করে আসতে হবে! ব্রাজিল আর ফুটবল মানেই কেন কালজয়ী রোম্যান্স, কেন রক্তে নাচন ধরায় উত্তাল সাম্বা, সেটা বোঝাতে গিয়ে এ ভাবেই শুরু করেছেন অস্কার।
চেলসি মাঝমাঠের তরুণ তুর্কির কথায়, “আমিও ফুটবলটা এই পদ্ধতিতে শিখেছি। গলিতে, পার্কে সারাটা দিন বলে লাথি মেরে। ট্রায়াল-এরর করে।” কোনও কোচ নেই, ক্লাব নেই, স্থানীয় ‘এসকোলিনহা’ বা মিউনিসিপ্যাল স্কুল দলে খেলেই নিজের মতো করে প্রথম প্রেমকে বুঝতে শেখা। অস্কারের কথায়, “ষোলো বছরে পেশাদার হিসাবে যখন প্রথম ক্লাব সাও পাওলোয় যোগ দিলাম, ততদিনে নিজস্ব স্টাইল তৈরি হয়ে গিয়েছে। ব্রাজিলের বেশিরভাগ ফুটবলারই নিজের চেষ্টায় খেলাটা শেখে।” আর বলছেন, ফুটবল বিশ্বে ব্রাজিলের আধিপত্যের মূলে ফুটসল। “ছোট পরিসরে, ছোট গোলপোস্টে বল মারতে হয় বলেই নিশানা আপনাআপনি নির্ভুল হয়ে যায়।”
বিশ্বকাপ উপলক্ষ্য লিখে ফেলেছেন বই, ‘অস্কারস ব্রাজিল’। যার লভ্যাংশ যাবে তাঁর শহর সাও পাওলোর গৃহহীন শিশুদের মাথার উপর ছাদের বন্দোবস্ত করায়।
ফুটবল-আফিংয়ে বুঁদ হয়ে শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পা রাখে যে দেশ, তারা তো ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জিততে মরিয়া থাকবেই। অস্কার মানছেন, প্রত্যাশার চাপটা শ্বাসরুদ্ধকর। লুই ফিলিপ স্কোলারির টিমেও মাঝমাঠের জোয়াল তাঁর কাঁধে। কিন্তু নুয়ে পড়তে রাজি নন। বরং বলছেন, “ঘরের মাঠে খেলা বলতে কী বোঝায়, জানি। আসল হল প্লেয়ার হিসাবে নিজেদের দায়িত্বগুলো বুঝে সেগুলো ঠিকঠাক পালন করা। কোনও অবস্থাতেই চাপে ভেঙে পড়লে চলবে না।” অস্কারের সহজ যুক্তি, “দেশকে ছ’নম্বর বিশ্বকাপ দিলেও আহামরি কিছু হবে না। স্রেফ এটুকু প্রমাণ হবে যে, পেলে থেকে রোনাল্ডিনহো, আগের প্রজন্মদের মতোই কাপ জেতার ক্ষমতা আমাদেরও আছে।”
অস্কার যা-ই বলুন, আগামী ১৩ জুলাই সেলেকাওদের হাতে কাপ উঠলে চৌঁষট্টি বছর প্রাচীন ক্ষতে যন্ত্রণা-মুক্তির প্রলেপ পড়বে তাঁদের হাতেই। ব্রাজিলের আর এক তারকা ফ্রেড এ দিন বলেছেন, “ক্ষতটা সারিয়ে দিতে আমরা এ বার তৈরি।” ৬৪ বছর আগে উরুগুয়ের কাছে ফাইনাল হারার গ্লানি বয়ে ব্রাজিল কলঙ্কমোচনের আশায় কার্নিভ্যালের প্রস্তুতি নিচ্ছে ব্রাজিল ।
অস্কারের কথায়, “ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে নামার সময় আমরা বেশি আপ্লুত থাকব না দেশবাসী, বলা মুশকিল। অনুভূতির সুক্ষ্ম তারে সবাই একাত্ম হয়ে যাব। এক আবেগ, এক উত্তেজনা, এক উন্মাদনা। গৌরব। আর আশা করি, শেষটা হবে বাঁধনহারা উৎসবে।”
উৎসবের প্রার্থনায় সাম্বার দেশও!