বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পনেরোর নির্বাচনী সভার কাউন্টডাউন যত এগোচ্ছে, একজনকে নিয়ে দেখছি উত্তেজনা তত বাড়ছে। ভাববেন না শুধু মিডিয়ায় বারবার যুবরাজ সিংহ-র নামটা দেখছি বলে কথাটা বললাম। বা কোনও কোনও ক্রিকেটারকে প্রশ্নটা করতে শুনছি, বলে বলছি। জাতীয় নির্বাচকরাও তো চরম টানাপড়েনে ভুগছে যুবিকে নিয়ে। এক জাতীয় নির্বাচকের সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম, ওরা এখনও ধন্ধে যুবরাজকে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পনেরোয় নেবে, না নেবে না?
আমি নির্বাচক হলে আজ, মঙ্গলবারের বৈঠকে দ্বিতীয় বার যুবরাজকে নিয়ে ভাবতাম না। একেই রবীন্দ্র জাডেজার চোট আছে। সেখানে যুবরাজকে তো চোখ বুজে টিমে নেব। বিশেষ করে ওর সাম্প্রতিক ব্যাটিং ফর্মকে তো আগুনে বললেও কম বলা হয়। রঞ্জিতে তিন-তিনটে সেঞ্চুরি করেছে গত কয়েক দিনে। যে ফর্মে ও এখন ব্যাট করছে, তাতে নামলে আজও যুবি ম্যাচ উইনার। দ্বিতীয়ত, ওর ফিল্ডিং। যেটা আগের মতো দুর্ধর্ষ না হলেও টিমের অনেকের চেয়ে ভাল। আর আমার মতে, কোনও না কোনও একটা স্লট নিয়ে আপনাকে ফাটকা খেলতে হবে। আর এমন ভাবে সেটা খেলতে হবে, যাতে ফাটকাটা ব্যর্থ হলেও ধাক্কাটা তত জোরালো না হয়। আমি যদি বোলিং অপশন হিসেবে তিনটে পেসার, একটা অফস্পিনার আর যুবরাজকে রাখি, আর যদি এদের মধ্যে কেউ মারও খায় তা হলেও আমার কাছে একটা বিরাট, একটা রায়না থাকছে। যারা দরকারে বলটা করে দিতে পারবে। ফাটকা ব্যর্থ হলে তাই অতটা ধাক্কা লাগবে না।
দেখুন, এমনিতেই বিশ্বকাপের পনেরো জনের মধ্যে সাত-আট জনকে নিয়ে কোনও সন্দেহের জায়গা থাকতে পারে না। আমিও নিজের টিমে তাই শিখর, রাহানে, রায়না, ধোনি, রোহিত, রায়ডুর নামগুলো তাই পরপর বসিয়ে যাব। যুবরাজকে নেব, আগেই বললাম। কেউ কেউ এখানে বলতে পারেন, সব ঠিক আছে। কিন্তু রায়ডু কেন? সেখানে আমার যুক্তি, ছেলেটা গত তিনটে ওয়ান ডে সিরিজে ভাল রান করেছে। শ্রীলঙ্কা যতই কমজোরি টিম হোক, তাদের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করেছে রায়ডু। ওকে তাই আমি রাখব। তা ছাড়া রায়ডুকে টিমে রাখলে আমার হাতে একটা কাজ চালানো উইকেটকিপারও থাকল। ধোনির যদি ম্যাচের সকালে লাগে, তখন?
স্পিনার নির্বাচনে আসি। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের নির্বাচন নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। ওর সঙ্গে অক্ষর পটেলকে চাই। পরিষ্কার বলছি, আমার কাছে অক্ষর পটেল আর রবীন্দ্র জাডেজা একই ধাঁচের প্লেয়ার। যে কাজটা জাডেজা করে, সেটা অক্ষরও পারবে। তাই জাডেজাকে চোটের জন্য বিশ্বকাপে না পাওয়া গেলে খুব ক্ষতি হবে বলে মনে করি না। পেসারদের মধ্যে আবার আমি চাইব চার জনকে। শামি, ভুবনেশ্বর, ইশান্ত এবং উমেশ। বরুণ অ্যারনকে নেব না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শুধু পেস দিয়ে সব চলে না। বিশ্বকাপে তো প্রশ্নই নেই। সেখানে ইশান্ত থাকলে অস্ট্রেলিয়ার উইকেট থেকে বাড়তি বাউন্সটা বার করতে পারবে। শামির পেসের সঙ্গে সুইংটা ভাল করে সাদা বলে। উমেশের গতি যেমন, ইয়র্কারটাও তেমন ভাল দেয়। আর ভুবনেশ্বরকুমার ওয়ান ডে-তে ভারতের এক নম্বর পেসার। গতি মারাত্মক না থাকলেও শুধু বল জায়গায় রেখে সুইং করিয়ে যে উইকেট পাওয়া যেতে পারে, সেটা কিন্তু রায়ান হ্যারিস দেখাচ্ছে। আর হ্যারিস পারলে ভুবিও পারবে।
এ বার শেষ স্লটটায় আসি। আমাকে বললে, অস্ট্রেলিয়ায় আমি একজন বাড়তি ব্যাটসম্যান নিয়ে যেতাম। আর তার নামটা মনোজ তিওয়ারি হত। অস্ট্রেলিয়ায় সাম্প্রতিকে কিন্তু ভারত ‘এ’-র হয়ে ভাল পারফর্ম করে এসেছে মনোজ। শুধু তাই নয়, দেশের মাঠে যে ক’টা ঘরোয়া টুর্নামেন্ট টেলিকাস্ট হয়েছে, যেখানে জাতীয় নির্বাচকরা থেকছে, প্রত্যেকটা জায়গায় মনোজ রান করেছে। বাংলার ছেলে বলে বলছি না। যুক্তি আর ওয়ান ডে ফর্মের বিচারেই মনোজকে টিমে নেব।