আনন্দবাজার এক্সক্লুসিভ

আফ্রিদির ছক্কাগুলো মোটেও ভারতকে পিছিয়ে রাখছে না

কারণ শুক্রবার নতুন ম্যাচ। নতুন দিন। ভারত-পাক ম্যাচে নাকি আগের দিন কী ঘটেছিল, সম্পূর্ণ মূল্যহীন। বললেন শেষ ওভারের ছক্কায় ভারত-পাক ম্যাচ জেতানোয় শাহিদ আফ্রিদির পূর্বপুরুষ। তিনি— জাভেদ মিয়াঁদাদ বুধবার করাচির বাড়িতে বসে আধ ঘণ্টার ফোন সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজারকে

Advertisement

গৌতম ভট্টাচার্য

ঢাকা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৪ ০২:৫০
Share:

কারণ শুক্রবার নতুন ম্যাচ। নতুন দিন। ভারত-পাক ম্যাচে নাকি আগের দিন কী ঘটেছিল, সম্পূর্ণ মূল্যহীন। বললেন শেষ ওভারের ছক্কায় ভারত-পাক ম্যাচ জেতানোয় শাহিদ আফ্রিদির পূর্বপুরুষ। তিনি— জাভেদ মিয়াঁদাদ বুধবার করাচির বাড়িতে বসে আধ ঘণ্টার ফোন সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজারকে

Advertisement

প্রশ্ন: ঢাকায় আফ্রিদির ছক্কায় সে দিন ভারত কাটা পড়ার পর পত্রপত্রিকায় সবাই নস্ট্যালজিক হয়ে পড়ে আপনাকে স্মরণ করেছে।

Advertisement

মিয়াঁদাদ: হুঁ।

প্র: হুঁ মানে কী? সবাই এত লিখল-টিখল যে, চেতন শর্মাকে আপনার খেলা ওভারটা মনে পড়ে গ্যাছে, আপনি তো কোথাও কিছু বলেননি।

মিয়াঁদাদ: বলার তেমন কিছু নেই তো। আমার কাছে দুটো ম্যাচ অনেকটা আলাদা। একটা ম্যাচে পাকিস্তান সব সময় খেলার মধ্যে ছিল। আর একটা ম্যাচে শারজায় পাকিস্তান লড়াইয়েই ছিল না। ইমরান আউট হওয়ার পর সবাই জানত, শেষ। পরে শুনেছি টিভিতে পাকিস্তানি কমেন্টেটর বলেছিল, যতক্ষণ জাভেদ আছে, আশা আছে! এই কথাটা পরে শুনে আমার দারুণ লেগেছিল, কারণ সেই নির্ভরতাটাই ছিল আমার সেরা পুরস্কার। যে পাকিস্তান টিমের ওপর দিয়ে ঝড়ঝঞ্ঝা যা-ই বয়ে যাক, জাভেদ মিয়াঁদাদ আছে মানে ঠিক উতরে দেবে। ইন্ডিয়ান টিমে যেমন ছিল গাওস্কর। ওর উইকেটটা পড়লেই আমরা বলাবলি করতাম, চলো পচাস খতম। এ বার বাকি পঞ্চাশ পার্সেন্টকে আউট করতে হবে।

প্র: শারজা ফাইনালের পরপর অদ্ভুত একটা মানসিক তেজ পেয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান। এর পর ভারতকে যেখানে পেয়েছে হারিয়েছে। ঢাকার আফ্রিদি ইনিংসও কি তেমন সুদূরপ্রসারী হতে পারে? শুক্রবার আগাম বিদ্ধ থাকতে পারে ভারত?

মিয়াঁদাদ: মনে হয় না। প্রত্যেকটা ভারত-পাক ম্যাচই নতুন দিন। নতুন পরীক্ষা। আগের দিন কী হয়েছিল সেই ইতিহাস কাজ করে না। নতুন নতুন নানা পরিস্থিতি তৈরি হয়। আর সেগুলোকে ম্যানেজ করতে হয়। এই বিশেষ দিনে যারা পরিস্থিতিগুলো বেটার ম্যানেজ করতে পারে, তারাই জেতে।

আমার কাছে সে-ই বড় প্লেয়ার যে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে নিয়মিত সেই পরিস্থিতিগুলো ম্যানেজ করতে পারে। এক দিনের বাদশা হয়ে কী হবে! আফ্রিদি একটা ম্যাচ জিতিয়ে নতুন করে বড়লোক হয়ে গ্যাছে। কিন্তু ওকে দশটা ম্যাচের মধ্যে সাতটায় খেলা কন্ট্রোল করতে হবে। তবে না প্লেয়ার হিসেবে মান্য করব।

প্র: আফ্রিদির ক্রিকেট সম্পর্কে আপনি খুব অভিভূত নন দেখছি।

মিয়াঁদাদ: আমি তো ক’দিন আগেও পাকিস্তানের ডিরেক্টর অব ক্রিকেট ছিলাম। আফ্রিদিকে নিয়ে প্রচুর মাঠে পড়ে থেকেছি। কত বুঝিয়েছি, তোর শটে এত জোর। তুই পঞ্চাশ ওভার পড়ে থাক। ওভারপিছু একটা করে ছয় মারবি। তা হলেই তোর হেসেখেলে তিনশো হয়ে যাবে।

কে শোনে কার কথা। ওর নীতি হল, চালাও। যে দিন লাগবে সে দিন ধন্য ধন্য হবে। যে দিন লাগবে না, টিম ডুবল।

ঢাকার আফ্রিদি

প্র: আপনি এই দর্শনে একমত নন?

মিয়াঁদাদ: একেবারেই না। আমি মনে করি টিমের টপ ব্যাটসম্যান হতে গেলে তোমাকে দায়িত্ব নিতে হবে। নিয়মিত ইন্ডিয়াকে হারাতে হবে।

প্র: বলছিলেন আপনার শারজা আর আফ্রিদির সে দিনের ঢাকা আলাদা। কেন?

মিয়াঁদাদ: আরে ভাই (অসহিষ্ণু গলা), আমার আমলে ওয়ান ডে ক্রিকেট এ ভাবে জেতার কোনও মডেলই ছিল না। তখন কেউ ভাবতেই পারত না শেষ ওভারে বারো-তেরো রান তাড়া করে ওয়ান ডে জেতা যায়। এখন জলভাত। আফ্রিদি যে ম্যাচ জিতিয়েছে, সেটা আজকের ক্রিকেটে হরবখ্ত হচ্ছে। ছিয়াশি সালে সেটা দেখেই লোকে রোমাঞ্চিত হয়ে পড়েছিল। দুটোর মধ্যে তুলনা কী করে হবে?

প্র: বুঝলাম।

মিয়াঁদাদ: কিছুই বোঝেননি। এই যে তেন্ডুলকর। ও কত বড় ব্যাটসম্যান সবাই জানে। কিন্তু আমার আমলের লোকেরা গাওস্করকে এক ইঞ্চি হলেও এগিয়ে রাখবে। তেন্ডুলকরের এটা দোষ নয় যে ওর আমলে সেই বোলিং ছিল না। কিন্তু ছিল না তো সত্যি কথা। প্রথম যখন লিলি-টমসনকে খেলতে যাই, আমার মনে হয়েছিল জাভেদ এ কোথায় এসে পড়লে। এর পর দেখলাম গার্নার-মার্শাল। একে তো সামনের পায়ে যাওয়া বলে কোনও ব্যাপার নেই। তার পর যদি বা একটা হুক বা পুলে বাউন্ডারি মেরে ফেললেন, বোলিং মার্কে ফেরার সময় ওরা একটা চাউনি দিত। আমি এটার নামকরণ করেছিলাম খুনে চাউনি। চারটে দানব পরপর বল করছে আর নির্বাক থেকেও প্রতি মুহূর্তে বোঝাচ্ছে, জিন্দেগি প্যায়ারি হ্যায়? তো হটো ইয়াহাঁ সে। সেই পরীক্ষায় গাওস্কর জিতেছে। বলেছে, জমিদারি আমার। আমি থাকব। তোরা চলে যাবি। আমিও তাই করেছি।

প্র: ভারত-পাক ম্যাচে ভাল খেলার রেসিপি কী?

মিয়াঁদাদ: নিজের স্নায়ুকে অবশ না হতে দেওয়ার ক্ষমতা আর ধৈর্য ধরে রাখা। আফ্রিদিকে কত বার বলেছি সব বলে চালাস কেন? ওয়েট কর না বাজে বলের জন্য। ধৈর্য ধরার কড়া মনটা ইন্দো-পাক ম্যাচে খুব জরুরি। আর একটু অ্যাক্টিং করতে পারে ভাল।

প্র: অ্যাক্টিং মানে?

মিয়াঁদাদ: মানে আগাম প্ল্যানিং রাখতে হবে কাকে পেটাব। কাকে দেখে খেলব! এ বার যাকে লুট করব বলে ঠিক করেছি তাকে অ্যাটাকে আনলে কিছুতেই বাড়তি উচ্ছ্বাস দেখাব না। বরং বডি ল্যাঙ্গোয়েজ হবে একটু চিন্তিত। যেন প্রবলেমে পড়েছি। টার্গেট হবে একে সন্তর্পণে লুট করো। যাতে ক্যাপ্টেন একে দিয়েই দশ ওভারের কোটাটা শেষ করে। তোমার মনের ভাব বুঝতে পারলে কিন্তু আগেই অ্যাটাক থেকে সরিয়ে নেবে।

প্র: আপনার সময় কোন কোন ইন্ডিয়ান বোলারের বিরুদ্ধে এই অ্যাক্টিং করতেন?

মিয়াঁদাদ: হাঃ হাঃ হাঃ। ছোড়ো ও সব বাতে। কাফি থে (আবার হাসি)।

প্র: ধোনিকে ব্যাটসম্যান আর ক্যাপ্টেন হিসেবে কেমন রেট করেন?

মিয়াঁদাদ: খুব হুঁশিয়ার ক্রিকেটার। ওয়ান ডে-টি-টোয়েন্টি মোডে তো অনবদ্য। ইন্ডিয়ান টিমে অনেকগুলো ভাল ব্যাটসম্যান আছে। আমি টিভিতে দেখি তো! ইন্ডিয়ার যা টিম, পাকিস্তানকে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। কিন্তু আপনাদের সমস্যা অন্য!

প্র: কী সমস্যা?

মিয়াঁদাদ: ভাল রাঁধুনি নেই আপনাদের। এই যে বিদেশি কোচটা মাল নিয়ে চলে যাচ্ছে, ও কীসের কোচ আমাকে বলুন তো? গাওস্কর-কপিল দেবের দেশে আমাকে বলতে চান এত কোটি মানুষের মধ্যে কারও ইন্ডিয়া কোচ হওয়ার যোগ্যতা নেই? কোচের প্ল্যানিং ঠিকমতো হলে আগের পাক ম্যাচটা আপনারা হারেন না। তার পর আর একটা চাকরি হয়েছে এখন। ভিডিও অ্যানালিস্ট। শুনলে পা থেকে মাথা অবধি জ্বলে যায়।

প্র: এত রেগে যাচ্ছেন কেন?

মিয়াঁদাদ: রাগব না! গোরারা আমাদের বেওকুফ বানিয়ে ডলার লুট করে চলে যাচ্ছে। আর সাদা কোচগুলো একটা ইম্প্রেশন দিচ্ছে যে ল্যাপটপে নাকি সব হয়। আমি বলছি না কোচ মানেই তাকে বড় প্লেয়ার হতে হবে। কিন্তু মগজটা তো থাকতে হবে! আমাদের সময় যেমন ছিল মুস্তাক মহম্মদ। দুর্ধর্ষ কিছু রেকর্ড নয় মুশির। কিন্তু ক্রিকেট ব্রেন হিসেবে খুব ভাল। আমি নিয়মিত ওঁর সঙ্গে কথা বলতাম, কোথায় ভুল হচ্ছে?

তা বলে ল্যাপটপ কালচার মানব কেন? ল্যাপটপই যদি সব হবে, তা হলে আমার মহল্লার দুটো বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়ে সারাক্ষণ ফোনে গেমস খেলে। ওদের ল্যাপটপ হাতে পাকিস্তানের জন্য ব্যাট করতে পাঠিয়ে দিলেই তো হয়। আপনাদের দেশেও নিশ্চয়ই এ রকম ছেলেপিলে আছে। ল্যাপটপ হাতে ওদেরই পিচে পাঠিয়ে দিন না!

মিয়াঁদাদের কথায়। সবিস্তার...

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement