সৌরভ মুদগল কমিটিতে ঢুকবেন কি না, জল্পনা
মুদগল দায়িত্ব পেলে কমিটিতে হয়তো সৌরভ।
দেশের সর্বোচ্চ আদালত মুদগল কমিটিকেই আইপিএল নিয়ে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দিলে তাতে কি থাকতে পারেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়?
মঙ্গলবার ভারতীয় ক্রিকেটের অলিন্দে এই মর্মে তীব্র গুজব ছড়াল। আসলে সুপ্রিম কোর্টের কাছে পাঁচ সদস্যের প্যানেল চেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মুদগল। প্রস্তাবিত প্যানেলে রয়েছেন
১) মুম্বই পুলিশের পদস্থ অফিসার।
২) চেন্নাই পুলিশের পদস্থ অফিসার।
৩) দিল্লি পুলিশের পদস্থ অফিসার।
৪) প্রাক্তন সিবিআই স্পেশ্যাল ডিরেক্টর এমএল শর্মা ও
৫) কোনও প্রাক্তন ক্রিকেটারকে যার সততা সন্দেহাতীত।
এই ক্রিকেটারের নাম সুপ্রিম কোর্টের কাছে জমা না দেওয়া হলেও জল্পনা ভেসে বেড়াচ্ছে সৌরভ বা মোহিন্দর অমরনাথের মধ্যে কাউকে ভাবা হয়েছে। দু’জনের মধ্যে সৌরভের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল।
অনেকের অবশ্য এমনও মনে হচ্ছে এখনও গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল। বিশেষ করে বোর্ডের শাসক গোষ্ঠীর। কারণ সুপ্রিম কোর্ট এখনও সরকারি ভাবে মুদগল কমিটিকে তদন্তের দায়ভার দেয়নি। এ দিন শুনানি শেষ হওয়ার পর আভাস অনুযায়ী শুক্রবারের মধ্যে তারা চূড়ান্ত রায় দেবে। এ দিনের শুনানিতে বোর্ডের আইনজীবী বারবার বলেছেন, মুদগলকে যেন দায়িত্ব না দেওয়া হয়।
এ দিকে মুদগল ইতিমধ্যেই জানিয়ে রেখেছেন তাঁর তদন্ত করতে অন্তত চার মাস সময় লাগবে। মে মাসে তদন্ত শুরু হলে চলবে অগস্ট অবধি। সেক্ষেত্রে সেপ্টেম্বরের বোর্ড নির্বাচনের ঠিক আগে তদন্তের ফল জানা যাবে।
বুধবার সুপ্রিম কোর্টে ললিত মোদীকে নিয়ে মামলারও চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হওয়ার কথা। আদালতের রায় দেওয়ার কথা রাজস্থান ক্রিকেট সংস্থার প্রধান হিসেবে মোদীর নির্বাচন বৈধ কি না? বিরোধীপক্ষ অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে রায়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। চব্বিশ ঘণ্টা আগে বোর্ড সচিবকে বরোদা ক্রিকেট সংস্থা থেকে সরিয়ে একটা ভোট বাড়িয়েছেন। মোদী যদি ছাড়পত্র পেয়ে যান সংখ্যাটা দাঁড়াবে দুইতে।
শাসকগোষ্ঠী অবশ্য রাজস্থানের ‘এম’ নন। দিল্লির ‘এম’-কে নিয়ে বেশি উত্তেজিত। তিনি মুকুল মুদগল। বোর্ডের পক্ষ থেকে এ দিন আদালতে জোরালো ভাবে বলা হয় মুদগল প্যানেলকে দায়িত্ব দেওয়া উচিত নয়। তারা মোটেও নিরপেক্ষ নয়। তা ছাড়া ইতিমধ্যে তারা সন্দেহের তালিকা জানিয়ে দিয়েছে। আর নতুন কী করবে? বোর্ডের আইনজীবী এমনও বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের কাছে মুদগল প্যানেল রিপোর্ট পেশ করার দু’দিন আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি একটি ক্রিকেট ওয়েবসাইটে সেই খবর বেরিয়ে যায়। এর থেকেই প্রমাণ প্যানেলই খবর লিক করেছে। এমন অভিসন্ধিমূলক প্যানেলকে দায়িত্ব দিলে বিচারের স্বার্থ রক্ষিত হবে না।
আইনজীবী সুন্দরম এমনও বলেন যে আদালত যখন পছন্দ অনুযায়ী একটা প্যানেল তৈরি করেই দিচ্ছে তখন শ্রীনিবাসনকে আবার বোর্ড প্রধান হিসেবে কাজ করতে দেওয়া হোক। কারণ বাইরের প্যানেল কাজ করলে তার হস্তক্ষেপ করার প্রশ্ন উঠছে না। বিচারপতি পট্টনায়েক তখন বলেন, “আপনি কি বন্ধ করা সেই খামটা পড়ে দেখেছিলেন? ব্যাপারটা মোটেও এত সহজ নয়।”
শ্রীনিবাসনের আইসিসি-যাত্রার ওপরে আদালত অবশ্য কোনও নিষেধাজ্ঞা দিতে রাজি হয়নি। আদিত্য বর্মার পক্ষে নলিনী চিদম্বরম জোরালো সওয়াল করলেও বিচারপতিরা বলেন, “এটা আমরা শুনতেই চাই না। এটা তদন্তের আওতার ভেতর পড়ছে না।” বোর্ড তদন্ত কমিটিতে এমএল শর্মার মনোনয়ন নিয়েও তীব্র আপত্তি তোলে।
এখন দেখার মুদগলের কমিটি সুপ্রিম কোর্ট অবিকৃত রেখে দেয় কি না? নাকি সম্পূর্ণ সংশোধন করে? নাকি আংশিক বদলায়?
নাটকের শেষ অঙ্ক আর সম্ভবত আটচল্লিশ ঘণ্টা দূরে। বিরোধীরা চাইছেন মুদগল দায়িত্ব পান। তা হলে তদন্ত সেপ্টেম্বর অবধি চলবে। শ্রীনিবাসন ট্যাকটিক্যালি বোর্ড নির্বাচন থেকে দূরে চলে যাবেন। আবার বোর্ড ঠিক এই স্ট্র্যাটেজিটা বুঝেই মুদগলকে চাইছে না। তাদের আতঙ্ক, আইপিএল খুঁড়তে আরও অনেক কিছু বেরিয়ে যেতে পারে।
এমন একটা পরিস্থিতি যে বিরোধীদের কাছে ‘এম’ ফর মুদগলই যেন ‘ভি’ ফর ভিকট্রি। আর শাসকগোষ্ঠী যদি মুদগলকে আটকে দিতে পারে তা হলে মোক্ষম যুদ্ধ জিতে গেল।
সাসপেন্স শেষ হচ্ছে সম্ভবত শুক্রবার। কমিটিতে সৌরভ সত্যিই বিবেচিত কি না, জানা যাবেও সে দিনই।