লড়াই তাঁর নিজের সঙ্গে। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের সঙ্গে নয়। পরিষ্কার জানাচ্ছেন হরভজন সিংহ। বলা হচ্ছিল, হালফিলে অশ্বিনের খারাপ ফর্ম জাতীয় দলে ফেরার সম্ভাবনা উজ্জ্বল করেছে অভিজ্ঞ এই অফস্পিনারের। হরভজন কিন্তু অশ্বিন প্রসঙ্গ আদৌ পছন্দ করছেন না। তাঁর কথা, “এই এত বছর আমার একজনই প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। সেটা আমি নিজে। কখনও অশ্বিন বা অন্য কাউকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সব কিছুই নিজেকে একা একা করতে হয়। নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে আরও পরিণত হয়ে ওঠাটাই লক্ষ্য থাকে। দয়া করে আমার কথা বলার সময় অন্য দু’-চার জনের নাম তুলবেন না। আমি নিজে কিন্তু এখন যারা জাতীয় দলে খেলছে তাদের সম্পর্কে কোনও কথা বলব না।”
হরভজনের বয়স এখন তেত্রিশ। গত এক বছর জাতীয় দলের বাইরে তিনি। কিন্তু টিম ইন্ডিয়ায় ফেরার খিদে যে একটুও কমেনি তা স্পষ্ট জানিয়েছেন। এমনিতেই হাওয়ায় ভাসছে তাঁর নাম। বিশেষ করে যখন গত দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড সফরে বিশ্রী বোলিং করেছেন অশ্বিন। মনিন্দর সিংহ, নরেন্দ্র হিরওয়ানির মতো প্রাক্তনরা তো যথেচ্ছ সমালোচনা করছেন অশ্বিনের। এর মধ্যে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আবার অচিরে হরভজনকে জাতীয় দলে ফেরানোর দাবিতে সরব। তা হলে কি জাতীয় দলের হয়ে হাত ঘোরানোর সময় এসে গেল হরভজনের? আর কত দিনে আবার জাতীয় জার্সি গায়ে চাপানোর প্রত্যাশা? এ হেন প্রশ্নে ভাজ্জির জবাব একেবারে সাফসুফ, “কত দিনে ফিরব বলতে পারব না। তবে এটা বলতে পারি, আমার ক্ষেত্রে বয়সটা বাধা না। আসল ব্যাপার হচ্ছে নিজেকে উদ্বুদ্ধ করতে পারা এবং খেলাটাকে পাগলের মতো ভালবাসা।”
টেস্ট, ওয়ান ডে ও টি টোয়েন্টি। তিন ধরনের ক্রিকেট মিলিয়ে দেশের হয়ে তাঁর ঝুলিতে প্রায় সাতশোর কাছাকাছি উইকেট। যার মধ্যে টেস্টে শিকারের সংখ্যাই ৪১৩। তবু জাতীয় দল থেকে ছিটকে গিয়ে পরের পর শুধু ঘরোয়া ম্যাচ খেলে যাচ্ছেন। কোন রহস্যে তাঁর উৎসাহে ভাঁটা পড়ছে না? হরভজন বলছেন, “একশোর উপর টেস্ট খেলেছি। দু’শোর বেশি ওয়ান ডে। সত্যি তারপরও মন দিয়ে শুধু ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে যাওয়াটা খুূব কঠিন। কিন্তু রাস্তা তো দুটো। চ্যালেঞ্জটা নেওয়া অথবা সব ছেড়েছুড়ে সরে পড়া। আমি সব সময় প্রথমটার দিকে। পালাব না। এখনও পাগলের মতো খেটে যাচ্ছি। ফলও পাচ্ছি। তা ছাড়া আমার আগেও অনেকে একই পরিস্থিতে পড়েছে। তারাও আমার মতো লড়াই ছাড়েনি। আমিও ছাড়ছি না। এখন আমাকে জাতীয় দলে ডাকা না ডাকার মালিকরাই (নির্বাচকরা) ঠিক করবেন কবে ফিরব বা আদৌ ফিরব কি না।”
এমনিতে গত এক বছর ঘরোয়া ক্রিকেটে হরভজনের পারফরম্যান্স বেশ ভাল। ছ’টা প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ২২ উইকেট। বিজয় হাজারেতে এখন পর্যন্ত শিকার ৬। প্রথম দুটো রঞ্জিতে ১৭ উইকেট তোলার পরই কাঁধে চোট না পেলে, এখন জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার দৌড়ে আরও ভাল জায়গায় থাকতেন বলে মনে করছেন এই অফস্পিনার। তবে সামনে আরও টুর্নামেন্ট আছে। বিজয় হাজারে, মুস্তাক আলি এবং আইপিএল। হরভজনের প্রবল আশা, এই তিনটে টুর্নামেন্ট তাঁর টিম ইন্ডিয়ায় ফেরার রাস্তা পাকা করতে পারে।