অবনমনের পূর্ণগ্রাস বাঁচিয়েও প্রাধান্য সেই অমাবস্যার

সৌরাশিস লাহিড়ীর খুব ইচ্ছে করছে, ঋদ্ধিমান সাহাকে কাঁটাছেড়া করে দেখতে। তিনি দেখতে চান, ঋদ্ধিমান সত্যিই মানুষ কি না! তাঁর তো অতিমানব মনে হচ্ছে! বাংলার রঞ্জিজয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সোমবারের পর একটা ব্যাপারে দ্বিধাহীন। বাংলার সর্বকালের সেরা উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানের নাম ঋদ্ধিমান সাহা! মোটেও সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় নয়। লক্ষ্মীরতন শুক্লর মনে হচ্ছে, ঈশ্বর চেয়েছিলেন বলে বাংলা আজ বেঁচে গেল। মনে হচ্ছে, ঈশ্বরের প্রতিনিধি হয়ে তাঁর টিমের দু’জন আবির্ভূত হয়েছিলেন হোলকারে! দ্বিতীয় জন সৌরাশিস লাহিড়ী। আর প্রথম? অতি অবশ্যই ঋদ্ধিমান সাহা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:২৫
Share:

চোট নিয়েও বাংলাকে বাঁচালেন।

সৌরাশিস লাহিড়ীর খুব ইচ্ছে করছে, ঋদ্ধিমান সাহাকে কাঁটাছেড়া করে দেখতে। তিনি দেখতে চান, ঋদ্ধিমান সত্যিই মানুষ কি না! তাঁর তো অতিমানব মনে হচ্ছে!

Advertisement

বাংলার রঞ্জিজয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সোমবারের পর একটা ব্যাপারে দ্বিধাহীন। বাংলার সর্বকালের সেরা উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানের নাম ঋদ্ধিমান সাহা! মোটেও সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় নয়।

লক্ষ্মীরতন শুক্লর মনে হচ্ছে, ঈশ্বর চেয়েছিলেন বলে বাংলা আজ বেঁচে গেল। মনে হচ্ছে, ঈশ্বরের প্রতিনিধি হয়ে তাঁর টিমের দু’জন আবির্ভূত হয়েছিলেন হোলকারে! দ্বিতীয় জন সৌরাশিস লাহিড়ী। আর প্রথম? অতি অবশ্যই ঋদ্ধিমান সাহা।

Advertisement

‘কমিটমেন্ট’ বলে একটা শব্দ প্লেয়ারদের সম্পর্কে মাঝেমধ্যেই ব্যবহৃত হয়। যা তার টিমের প্রতি, ক্রিকেটের প্রতি আনুগত্যকে বোঝায়। আর এ দিনের পর বোধহয় ঋদ্ধিমান সাহার উপাধি হিসেবেও ওটা ব্যবহৃত হতে পারে মিস্টার কমিটমেন্ট।

দেশের হয়ে খেলে ফিরে আধবেলাও যদি ইনি সময় পান, কিট-টিট গুছিয়ে বাংলার জার্সিতে নেমে পড়তে দু’বার ভাবেন না। আর সেটা যে লোক দেখানো নয়, দেখে রাখল হোলকার। দেখে রাখল, বাংলাকে অবনমনের অসম্মান লড়াই থেকে টেনে তোলার তাঁর অক্লান্ত যুদ্ধে। সাড়ে তিন ঘণ্টার লড়াইয়ে।

ঋদ্ধি আর সৌরাশিস বেলা সাড়ে বারোটা থেকে পৌনে পাঁচটা পর্যন্ত না টানলে, বাংলা আজ নামতই নামত।

প্রথম জন ২৩২ বলে ৯২। আড়াইশো মিনিট ক্রিজে পার করে। দ্বিতীয় জন টানলেন ২২৯ মিনিট! সৌরাশিস লাহিড়ি বল নয়, এ দিন ব্যাটে বাঁচালেন বাংলাকে। করলেন ১৮৭ বল খেলে ৪৮।

অন্যায় হল। ঋদ্ধিমান সোমবার ৯২ করেননি। ওটা পরিস্থিতির বিচারে আড়াইশো। সৌরাশিসও সোমবার ৪৮ করেননি। ওটা পরিস্থিতির বিচারে ১৪৮। অবনমন বাঁচানোর বঙ্গ লড়াইয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় সহ আজ পর্যন্ত যে ক’টা অমর ইনিংস খেলা হয়েছে, সেই একই বোর্ডে এ দু’টোও টাঙানো থাকবে।

পরিস্থিতিকে অসহনীয় বললেও কম বলা হয়। গ্রুপ থেকে একটা টিম নামত। যেত অপমানের ‘সি’ গ্রুপে। যেখান থেকে বাঁচার লড়াইটা চলছিল তিনটে টিমের মধ্যে। বাংলা। উত্তরপ্রদেশ। জম্মু-কাশ্মীর। এ দিন খেলা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই বোঝা যায়, ওটা দু’টো টিমের মধ্যে হবে। জম্মু-কাশ্মীর এবং বাংলা। কারণ অপ্রত্যাশিত ভাবে রেলকে হারাচ্ছে গ্রুপের তলানিতে থাকা উত্তরপ্রদেশ আর অবনমন থেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। বেলা একটু বাড়তে বাংলার সমীকরণটা খুব সহজ হয়ে দাঁড়ায়। অলআউট হওয়া যাবে না। এক পয়েন্ট পেতেই হবে। নইলে অবনমন।

তখন স্কোরটা চাই? ১১১-১ থেকে ১৫৭-৫! মনোজ ক্যাচ দিয়েছেন। লক্ষ্মী বোল্ড। সুদীপ-শ্রীবত্‌স কেউ নেই।

ওখান থেকে ঋদ্ধিমানের ৯২। আঙুলে ভাঙা জায়গাটায় মাঝে মধ্যে আছড়ে পড়ছে বল। টিম ফিজিওকে মাঠে ডেকে শুশ্রূষা করে আবার স্টান্স নিতে হচ্ছে, ওই অবস্থায়। সৌরাশিস আবার ব্যাট করতে নেমে ক্রমাগত ভেবে যাচ্ছিলেন, প্রথম শ্রেণির শততম ম্যাচে আমার জন্য তা হলে অবনমন লেখা ছিল? কানে আসছিল মধ্যপ্রদেশ ফিল্ডারদের উগ্র টিটকিরি ‘ইউপি জিত গ্যয়া। অব ইয়ে লোগ হারেগা!’

“ম্যাচের পর কথা বলর ক্ষমতাও ছিল না। বাড়ির ফোনও পরে করছি বলে রেখে দিয়েছিলাম। তখন দেখি ঋদ্ধি ফুটবল খেলতে নামছে! অতিমানব বলব না?” ইনদওর থেকে ফোনে বলছিলেন সৌরাশিস। যাঁর কাছে এটা জীবনের ইনিংস যা আমৃত্যু তিনি মনে রাখবেন। আর ঋদ্ধিমানআপনি? সৌরশিসের মন্তব্য নিয়ে কী বলবেন? রসিকতা মেশানো উত্তর আসে, “ওকে জিজ্ঞেস করব কেন বললে আমাকে কাটাছেঁড়া করবে?” ঋদ্ধি বললেন, অনাবেগী থাকার অভ্যেস তাঁর ছোট বেলা থেকে। “অবনমন নিয়ে শুধু টিমমেটদের একটা কথাই বলেছিলাম। কপালে লেখা থাকবে অবনমন হবে না।” কিন্তু মুহূর্তের ভুলে আউট হলে পারতেন এতটা নির্লিপ্ত থাকতে? এ বার ঋদ্ধি, “দু’চার মিনিট ভাবতাম। মনে হত করা উচিত ছিল। তার পর আর না। যত ভাবব, তত পরের খেলায় প্রভাব পড়বে।” বাংলা শিবির শুনলেও বোধহয় আঁতকে উঠবে। কেউ কেউ তো কুসংস্কারে বাথরুমেও যাননি ঋদ্ধিদের ব্যাটিংয়ের সময়।

কিন্তু তবু দিনটা বাংলার গর্বের নয়। চরম অপমান বাঁচানোর। কারণ ঋদ্ধির এই পারফরম্যান্স যেমন বাস্তব, তেমন কয়েকটা পরিসংখ্যানও বাস্তব।

মনোজ তিওয়ারি ৮ ম্যাচ, ১৩ ইনিংস, রান ৩৯৭, গড় ২৬.৮৪। সর্বোচ্চ ৯৭। সেঞ্চুরি নেই। লক্ষ্মীরতন শুক্ল ৮ ম্যাচ ১২ ইনিংস, ৩৩৭ রান, গড় ৩৩.৭, সর্বোচ্চ ১০৫*, উইকেট ১০। অশোক দিন্দা ৮ ম্যাচ, উইকেট ২৫।

কাগজে-কলমে বাংলার সেরা তিন। আর তাঁদের পারফরম্যান্সই আসল বাংলার প্রতিচ্ছবি। যেখানে ৮ ম্যাচের পরেও একটাও জয় থাকল না। গোটা মরসুমে থাকল সাকুল্য চারটে সেঞ্চুরি ও দু’টো পাঁচ উইকেট। যা হাস্যকর। আর থাকল ঘরের মাঠে হার, বিতর্ক, সিনিয়রদের কারও কারও দায়সারা মনোভাবের অভিযোগ।

আসলে সোমবারের হোলকারে অবনমনের পূর্ণগ্রাস গ্রহণ বেঁচেছে শুধু। গোটা মরসুমের অমাবস্যা মোটেও কাটেনি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
মধ্যপ্রদেশ ৫১৪-৬ ডি:।
বাংলা ২১৯ ও ৩০৩-৮ (ঋদ্ধি ৯২, সৌরাশিশ ৪৮)।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement