রোগা দোহারা চেহারা।
কিছুটা যেন ভারসাম্যহীন, টিঙটিঙে লম্বা।
এক হাত দূরে বসে থাকলে মনেই হয় না ফুটবল প্লেয়ার বলে।
তিনি টমাস মুলার কিনা বিশ্বকাপে জার্মানির উদ্বোধনী ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার নিয়ে গেলেন। বছর পাঁচেক আগে বায়ার্ন মিউনিখ ‘এ’ দলের সঙ্গে তিনিও এসেছিলেন ইস্টবেঙ্গল মাঠে খেলতে। তখনও লোকে তাঁকে চিনে ফেলেনি। কিন্তু সোমবার এমন হাই প্রোফাইল রোনাল্ডো বধের পর ব্রাজিল বিশ্বকাপের আসরে রবেনকেও ছাপিয়ে গিয়ে মুলারই সবচেয়ে বড় তারা।
সাংবাদিক সম্মেলনে খেলার পর যখন এলেন, তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, আপনি আর ক্লোজে তা হলে ঠিক করে ফেলেছেন রোনাল্ডোর গোলের রেকর্ডটা ভাঙবেনই ভাঙবেন! এতটুকু সময় না দিয়ে মুলার বললেন, “ব্যক্তিগত রেকর্ডের কথা ভেবে আমরা জার্মানরা ফুটবল খেলি না। আমাদের প্রথম লক্ষ্য শেষ ষোলোয় যাওয়া। তার পর এক এক করে চ্যাম্পিয়ন হতে চেষ্টা করা। সেটা করতে গিয়ে কারও কারও ব্যক্তিগত রেকর্ড হয়ে যায়, তা হলে সেটা ঘটনাচক্রে হল। তার জন্য আলাদা কোনও ডিজাইন চাই না।”
খেলার আগে জার্মান শিবিরে এসেছিলেন জার্মান চ্যান্সেলর। তিনি একেবারে লকার-রুম পর্যন্ত চলে এসে টিমের সঙ্গে কথা বলেন। বলেন, “এত দূর থেকে উড়ে এলাম তোমাদের জন্য। আমার দিকটা একটু ভেবো।” মুলার তাঁকে একেবারে তৃপ্ত করে দিয়েছেন।
জোয়াকিম লো-কে জিজ্ঞেস করা হল, এ রকম রোগা, প্যাংলা স্ট্রাইকার এত সম্ভ্রম সৃষ্টি করছে, এমন নমুনা আগে দেখেছেন? দেখে মনে হয় খেলায় অনেক কিছুই নেই, অথচ ডিফেন্সকে আতঙ্কে ফেলে দেয়। লো ঘাড় নাড়েন। বলেন, “সত্যি, মুলার একেবারে আনঅর্থোডক্স। ও বক্সের মধ্যে এমন অদ্ভুত অদ্ভুত মুভ করে, যার ব্যাখ্যা নেই। আগে থেকে কেউ বুঝতেও পারে না। সেই জন্য এত ভয়ঙ্কর। আর একটা কথা হল, ও যা ইচ্ছে করুক, একটা জিনিসের ওপর ফোকাস রাখে। গোল। মনে করে, গোল না পেলে সব বৃথা।”
সিআর সেভেনরা যখন রেফারিকে ভিলেন বানিয়ে তাঁকেই ম্যাচ-কাঠগড়ায় তুলছেন, মুলার তখন পরিতৃপ্তির হাওয়া এনে দিয়েছেন জার্মান শিবিরে। যিনি সুপারহিরো হিসেবে ম্যাচে বন্দিত হচ্ছিলেন, তিনি ধুয়ে গেলেন ম্যাচ থেকে। আর যাঁকে কেউ হিরো হিসেবে ধরেইনি, তিনি চলে এলেন হেডলাইনে!
মুলার কাহিনি
বয়স ২৪ উচ্চতা ৬ ফুট ১ ইঞ্চি
ওজন ৭৪ কেজি
পজিশন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার/ফরোয়ার্ড
গোল:
• বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে (২০০৮-১৪) ১৬৫ ম্যাচে ৫৮ গোল
• জার্মানির হয়ে (২০১০-১৪) ৫০ ম্যাচে ২০ গোল
বড় ম্যাচের নায়ক:
• ২০১০ বিশ্বকাপ প্রি-কোয়ার্টারে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জোড়া গোল।
• ২০১০ বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্তিনার বিরুদ্ধে ৪-০ জয়ের প্রথম গোল।
• ২০১৪ জার্মান কাপ ফাইনালে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের বিরুদ্ধে গোল।
কলকাতা কানেকশন:
২০০৯-এর ডিসেম্বরে বায়ার্ন মিউনিখ ‘এ’ দলের সঙ্গে শহরে এসে ইস্টবেঙ্গল মাঠে খেলেছিলেন। লাল-হলুদের সিনিয়র দলের বিরুদ্ধে। মুলাররা জিতেছিলেন সাত গোলে।