প্রেরণা: ক্রলির সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে দ্রাবিড়ের ভূমিকাও। ফাইল চিত্র
কেন্টের হয়ে ১৬টি ম্যাচে ১২২১ রান করেছিলেন রাহুল দ্রাবিড়। কাউন্টি খেলতে গিয়ে শুধু ক্রিকেটার হিসেবেই জনপ্রিয় হননি, তাঁর থেকে স্পিন খেলার শিল্প রপ্ত করেন প্রাক্তন ইংল্যান্ড ওপেনার রবার্ট কি। সেই রবার্ট এখন বিস্ময় প্রতিভা জ়্যাক ক্রলির কোচ। দ্রাবিড়ের শেখানো মন্ত্রে তিনি দীক্ষিত করেন তাঁর ছাত্র ক্রলিকে। যার ফল, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে ২৬৭ রান ২২ বছর বয়সি ব্যাটসম্যানের।
ক্রলি বরাবরই আগ্রাসী ব্যাটসম্যান। পেস বোলারদের সহজেই সামলে দিতেন। সমস্যায় পড়তেন স্পিনারদের বিরুদ্ধে। ২০১৭ সালে রবার্ট কি-র সঙ্গে ভারতে ট্রেনিং করতে আসেন জ়্যাক। মুম্বইয়ের গ্লোবাল ক্রিকেট স্কুলের উদ্যোগে জ়্যাকের জন্য ১৪জন স্পিনার আয়োজন করা হয়। পাঁচ দিন ধরে দিনে আট ঘণ্টা শুধুমাত্র স্পিনারদের মোকাবিলা করতে হত ইংল্যান্ডের তরুণকে। প্রথম দু’দিন মুম্বইয়েই অনুশীলন করেন ক্রলি। পরের পাঁচ দিন তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় পুণেয় দিলীপ বেঙ্গসরকর গ্রাউন্ডে।
হঠাৎ কেন এই উদ্যোগ? ইংল্যান্ড থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কলে রবার্ট কি আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘স্পিনারদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী না হলে বড় পর্যায়ে সমস্যা হয়। চেয়েছিলাম ক্রলি যেন পোক্ত ক্রিকেটার হয়ে ওঠে। তাই মুম্বইয়ে আমার বন্ধু সচিন বাজাজের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ও আমাকে নিজের অ্যাকাডেমিতে ট্রেনিং করার সুযোগ করে দেয়। প্রথম দু’দিন মুম্বইয়ে করলেও পরের পাঁচ দিন চলে যেতে হয় পুণেয়।’’
আরও পড়ুন: নেমাদের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে ইউরোপ সেরা সেই অপ্রতিরোধ্য বায়ার্ন
কতক্ষণ অনুশীলন করতেন ক্রলি? রবার্টের উত্তর, ‘‘প্রত্যেক দিন দু’বেলা চার ঘণ্টা করে। শুধু স্পিন খেলত ও। কোনও মিডিয়াম পেসার অথবা পেসার ওকে ওই সাতটি দিন বল করেনি।’’ যে ১৪জন বোলার ছিলেন, তাঁদের মধ্যে চার জন করে দু’ঘণ্টা অন্তর বল করতেন ক্রলিকে। অফস্পিনার, লেগস্পিনার এমনকি চায়নাম্যান বোলারের ব্যবস্থাও করা হয় ক্রলির জন্য। তখন থেকেই ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে রান করতে শুরু করেন তিনি। রবার্ট হয়তো বুঝে গিয়েছিলেন, তাঁর ছাত্র এক দিন ইংল্যান্ড জার্সিতে বিস্মিত করবেন ক্রিকেট ভক্তদের।
ক্রলির বিষয়ে আলোচনার মধ্যেই রবার্ট তোলেন দ্রাবিড়ের প্রসঙ্গ। তাঁর কথায়, ‘‘কেন্টে দ্রাবিড় বেশ কিছু দিন খেলেছিল। তখন আমি ওর সতীর্থ ছিলাম। ওর থেকেই শিখেছি কী ভাবে স্পিনারদের মোকাবিলা করা উচিত।’’ যোগ করেন, ‘‘সেই শিক্ষাই ক্রলিকে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ও যে উপকৃত হয়েছে তা ওর রানই বলে দিচ্ছে।’’
ক্রলিকে ভারতে নিয়ে আসার নেপথ্যে যিনি ছিলেন, সেই সচিন বাজাজ বলে দিলেন, ‘‘তখন তো জানতাম না, ও এ রকম কিছু করে ফেলবে। তবে তখন দেখেছি, ছেলেটির লড়াই করার খিদে আছে। রবার্টই আমাকে বলেছিল, এই ছেলেটিকে ও যত্ন করে তৈরি করছে। আজ সেই ক্রলি ডাবল সেঞ্চুরি করে ক্রিকেটবিশ্বের নজরে।’’
ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন হয়তো অনেকেই দেখেন। কিন্তু তার পিছনে যে কত পরিশ্রম ও নিষ্ঠা লুকিয়ে, তা জানেন সেই তারকা আর তাঁর গুরু।