আইপিএলে ফিরলেন যুবরাজ সিংহ। কিন্তু নজর কাড়তে পারলেন না।
যুবরাজ সিংহ ক্রিকেটে ফিরল। কিন্তু মন পুরো ভরাতে পারল না।
বলছি না যে, আমি ওর থেকে দারুণ কিছু আশা করেছিলাম। প্রায় এক মাস পর ক্রিকেটে ফিরছে। সেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের আগে যে ছিটকে গিয়েছিল, তার পর ক্রিকেটে তো আর দেখা যায়নি যুবরাজকে। কামব্যাকের যুবির থেকে আমি সেঞ্চুরি-হাফসেঞ্চুরি চাইনি। চোট থেকে ফিরে ও সব সিনেমায় ঘটে। কিন্তু ভেবেছিলাম, ওর বিশাল অভিজ্ঞতার প্রয়োগ দেখব।
যা পেলাম না।
তখন শিখর ধবন ব্যাট করছেন মাঠে। আর উপ্পলের ভিআইপি স্ট্যান্ডে ধবনের স্ত্রী-পুত্র।
মেনে নিচ্ছি যে, গুজরাত লায়ন্স বনাম সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ম্যাচটা যে পিচে হল তা ভাল ব্যাটিংয়ের পক্ষে মোটেও সুবিধের নয়। আমরা, কমেন্টেটররা তো ম্যাচ শুরুর আগে বলাবলি করছিলাম যে, এখানে ১৪০ তুললে যথেষ্ট হবে। পরে দেখলাম, ১২৬ তুলতেই কালঘাম ছুটছে। শিখর ধবন দারুণ খেলে ম্যাচটা শেষ করে দিল। কিন্তু আমার বক্তব্য হল, ওটা যুবরাজও করে দিয়ে আসতে পারত।
বোলিংটা তো বেশ ভাল করল যুবরাজ। দু’ওভারে ১৩ রান, টি-টোয়েন্টিতে খারাপ কী? দু’একটা কানায় লেগে বাউন্ডারি না হলে ওটা দু’ওভারে পাঁচ-সাতে থাকত। কিন্তু ব্যাটসম্যান যুবি? সে তো মন খারাপ করে দিয়ে গেল! সানরাইজার্স অদ্ভুত একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে দেখলাম ওকে পাঁচে পাঠাচ্ছে। হাস্যকর। যে টিমে কি না ভাল ভারতীয় ব্যাটসম্যানের অভাব মিডল অর্ডারে, সেখানে কি না যুবরাজ সিংহ পাঁচে যাবে? চারে নয়?
যা-ই হোক, যা বলছিলাম। বলতে চাইছি, যে উইকেটে টাইমিং ঠিকঠাক হচ্ছে না বোঝাই যাচ্ছে, সেখানে আরও একটু উইকেটে পড়ে থাকতে পারত ও। বড় শটের দিকে না গিয়ে ‘রান আ বল’ খেলতে পারত। টার্গেট মারাত্মক কিছু ছিল না। ওভারে সাড়ে ছয় করে রাখলেই চলবে। সেখানে যে শটটা খেলে যুবি আউট হল, ওকে মানায় না। বল হাতে ২ ওভারে ১৩। ব্যাট হাতে ১৪ বলে ৫। শেষেরটা যুবরাজ সুলভ নয়, কিন্তু তবু আজ আমি ওকে বেনিফিট অব ডাউট দেব। রোজ-রোজ ও কিন্তু এ রকম খেলবে না। রোজ যুবি এতটা তাড়াহুড়ো করবে না। যত সময় যাবে, প্রতিপক্ষের চিন্তার কারণ হবে। শুধু একটাই জিনিস ওর থেকে দেখতে চাইব। নিজের বিশাল অভিজ্ঞতাকে ব্যবহার করা। সেটা করলে অর্ধেক যুদ্ধ ও জিতে থাকবে।
নিজের প্রথম আইপিএলে চমকপ্রদ বোলিং করেই চলেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। শুক্রবারের হিসেব ৪-০-১৭-২।
বৃহস্পতিবার রাতে গুজরাতের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, কেকেআরও সেটা থাকবে। মানে, রবিবারের আগে অর্ধেক যুদ্ধ জিতে থাকবে। মানসিক যুদ্ধের কথা বলছি।
কেকেআর দু’টো ম্যাচে হারার পর দু’টো ম্যাচ দারুণ জিতেছে। গুজরাত এত দিন ভাল খেলার পর আচমকা হারতে শুরু করেছে। এগুলোর প্রভাব মাঠে পড়ে। তা ছাড়া যে গুজরাতকে এত দিন হারানো অসম্ভব মনে হচ্ছিল, হঠাৎ তো তাদের বেশ কিছু ফাটল চোখে পড়ছে। যেখান দিয়ে রায়না-বধ সম্ভব। বোলিংয়ে বিশেষ সমস্যা নেই। ব্র্যাভো, ধবল কুলকার্নি, প্রবীণ কুমার— এরা ডেথেও দুর্দান্ত। কিন্তু শুনতে আশ্চর্য লাগলেও ওদের সমস্যা ব্যাটিং। টপ অর্ডার যদি রান না পায়, দেড়শো পার করতে বেশ ঝামেলায় পড়ে যায় ওরা। যে দিন ম্যাকালাম-স্মিথ খেলে দেবে, ঠিক আছে। কিন্তু যে দিন পারবে না, মিডল অর্ডার চাপে পড়ে যাবে।
আসলে সুরেশ রায়নাকে আমরা মিস্টার আইপিএল বলে জানতাম। কিন্তু এ বার ও-ই পারছে না। মিডল অর্ডারে যে ভরসাটা দিত, সেটা এ বার পারছে না রায়না। টিমও চাপে পড়ে যাচ্ছে। অ্যারন ফি়ঞ্চ ছাড়া কেউ আর থাকছে না সামাল দেওয়ার মতো। কেকেআরকে ওই ফাঁকটা দিয়েই মারতে হবে। শুরুতে যদি ম্যাকালাম-স্মিথকে তুলে নেওয়া যায়, কেকেআর বোলিংয়ের সামনে অবস্থা আরও খারাপ হবে গুজরাত মিডল অর্ডারের। এমনিতেই ইডেনে কেকেআরকে হারানো খুব কঠিন। তার উপর গুজরাতের যে সব সমস্যা দেখছি, তাতে রবিবার কেকেআর ছাড়া জয়ী হিসেবে কাউকে ভাবতে পারছি না।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: গুজরাত লায়ন্স ২০ ওভারে ১২৬-৬ (ফিঞ্চ ৫১ নঃআঃ, রায়না ২০, মুস্তাফিজুর ২-১৭, ভুবনেশ্বর কুমার ২-২৮), সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ১৯ ওভারে ১২৯-৫ (ধবন ৪৭ নঃআঃ, ওয়ার্নার ২৪, ধবল কুলকার্নি ২-১৭)
-পিটিআই, বিসিসিআই