নোভাক জোকোভিচ ও কার্লোস আলকারাজ। —ফাইল চিত্র
এক জন পুরুষদের ১ নম্বর টেনিস খেলোয়াড়। অন্য জন দু’ধাপ নীচে রয়েছেন ঠিকই, কিন্তু দীর্ঘ দিন শাসন করেছেন টেনিস বিশ্ব। এক জন নিজের দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার চেষ্টা করছেন। অন্য জনের সামনে সুযোগ ২৩তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের। শুক্রবার ফরাসি ওপেনের সেমিফাইনাল খেলতে নামছেন কার্লোস আলকারাজ ও নোভাক জোকোভিচ। প্রতিযোগিতার নিরিখে সেমিফাইনাল হলেও গুরুত্বের নিরিখে এটাই ফাইনাল। কারণ, এই সেমিফাইনাল যিনি জিতবেন, ফরাসি ওপেন জেতার সম্ভাবনা তাঁরই সব থেকে বেশি। প্রতিযোগিতার কার্যত ফাইনালে নামার আগে আলকারাজ ও জোকোভিচের মধ্যে কে এগিয়ে রয়েছেন?
এ বারের প্রতিযোগিতায় আগের পাঁচটি রাউন্ডে মাত্র একটি সেট খুইয়েছেন আলকারাজ। জোকোভিচও একটিই সেট হেরেছেন। বাকি সব ম্যাচে স্ট্রেট সেটে জিতেছেন তাঁরা। এই পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে, এ বারের প্রতিযোগিতায় কতটা দাপট রেখে খেলেছেন দু’জনে। ফলে লড়াই সমানে সমানে। সেমিফাইনালে শুধু শারীরিক লড়াই হবে না, হবে মানসিক প্রতিযোগিতা। ফিলিপে শাতিয়েঁর কোর্টে যে খেলোয়াড় ঠান্ডা মাথায় নিজের খেলা খেলতে পারবেন, তিনিই ম্যাচ বার করে দেবেন।
আলকারাজ ও জোকোভিচের বয়সের পার্থক্য অনেক। স্পেনের আলকারাজের বয়স মাত্র ২০ বছর। সার্বিয়ার জোকোভিচের বয়স ৩৬। ১৬ বছরের পার্থক্য টেনিসে অনেক বেশি। কিন্তু জোকোভিচকে দেখে সেটা বোঝা যাচ্ছে না। নিজের থেকে ছোট প্রতিদ্বন্দ্বীদের হেলায় হারিয়েছেন। তবে বয়স বেশি হওয়ার সুবিধাও পাচ্ছেন জোকার। সেটি হল অভিজ্ঞতা। এত বছর ধরে এত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলেছেন। গ্র্যান্ড স্ল্যামের সেমিফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবেন জোকোভিচ। সেই অভিজ্ঞতার বিরুদ্ধে লড়তে হবে আলকারাজকে।
জোকোভিচের শক্তি
১) সার্বিয়ার জোকোভিচের প্রধান শক্তি বেস লাইন থেকে খেলা। খুব বেশি নেটে যান না তিনি। বেস লাইন থেকে লম্বা র্যালি খেলেন। প্রতিপক্ষকে দৌড় করান।
২) জোকোভিচের সার্ভিস বেশ জোরালো।
৩) এ বারের ফরাসি ওপেনে মাঝেমধ্যে নেটের কাছে যেতে দেখা যাচ্ছে জোকারকে। হার্ড কোর্ট বা ঘাসের কোর্টে যেটা সচরাচর খেলেন না, সেই ড্রপ শট খেলতে দেখা যাচ্ছে জোকোভিচকে।
আলকারাজের শক্তি
১) বিশ্বের ১ নম্বর টেনিস তারকা আলকারাজের প্রধান শক্তি ড্রপ শট। নেট লাইন থেকে তো বটেই, বেস লাইন থেকেও অবলীলায় ড্রপ শট খেলতে পারেন তিনি।
২) আলকারাজের কোর্টের মধ্যে দৌড় খুব ভাল। দ্রুত এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে পারেন। ফলে লম্বা র্যালি খেলতে কোনও সমস্যা হয় না।
৩) দীর্ঘ সময় ধরে খেলার ক্ষমতা। বয়স কম হওয়ায় পাঁচ সেট খেলতে কোনও সমস্যা হয় না আলকারাজের।
জোকোভিচের দুর্বলতা
১) ২২টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিকের বিশেষ কিছু দুর্বলতা নেই। তবে ৩৬ বছর বয়স হওয়ায় খেলা পাঁচ সেটে গড়ালে শারীরিক ভাবে কিছুটা পিছিয়ে পড়তে পারেন তিনি।
২) নেট লাইনে যাওয়ার প্রবণতা কম জোকোভিচের। কিন্তু আলকারাজের ড্রপ শট মূলত নেট লাইনের কাছেই পড়ে। ফলে সমস্যায় পড়তে পারেন জোকোভিচ।
আলকারাজের দুর্বলতা
১) বিশ্বের ১ নম্বর হলেও গ্র্যান্ড স্ল্যামের সেমিফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা কম আলকারাজের। সেখানে অনেকটা এগিয়ে থাকবেন জোকার।
২) আলকারাজের প্রথম সার্ভিস কিছুটা সমস্যায় ফেলছে তাঁকে। দ্বিতীয় সার্ভিস থেকে পয়েন্ট পাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু সেমিফাইনালে প্রথম সার্ভিসে সমস্যা হলে চাপে পড়তে পারেন আলকারাজ।
সেমিফাইনাল নিয়ে জোকোভিচ
সেমিফাইনালে নামার আগে প্রতিপক্ষকে রাফায়েল নাদালের সঙ্গে তুলনা করেছেন জোকোভিচ। তিনি বলেছেন, “কোর্টে নিজেকে দারুণ ভাবে মেলে ধরতে পারে আলকারাজ। কোর্টের ভিতরে এবং বাইরে ও মানুষ হিসাবে দারুণ। কোর্টে ওর মতো প্রতিদ্বন্দ্বী পাওয়া মুশকিল। ওর দেশেরই একজন খেলোয়াড়ের কথা মনে পড়ে যায়, যে বাঁ হাতে খেলে।” মুখে না বললেও তিনি নাদালের কথাই বোঝাতে চেয়েছেন এখানে। জোকোভিচ স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, আলকারাজকে নিয়ে যে চর্চা হচ্ছে তিনি তার যোগ্য। তৃতীয় বাছাই খেলোয়াড়ের কথায়, “এই সাফল্যের যোগ্য জোকোভিচ। কোনও সন্দেহ নেই এতে। কঠোর পরিশ্রম করছে। সম্পূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে উঠেছে। যদি সেরা খেলোয়াড়কে হারাতে হয়, আপনাকেও সেরা হতে হবে। এ বারের ফরাসি ওপেনে ওকে হারানোই আসল চ্যালেঞ্জ। সেই ম্যাচের দিকে তাকিয়ে রয়েছি।”
সেমিফাইনাল নিয়ে আলকারাজ
অন্য দিকে আলকারাজও তৈরি জোকোভিচের বিরুদ্ধে নামতে। তিনি বলেছেন, “এই ধরনের ম্যাচই তো সবাই দেখতে চায়। সত্যি বলতে, এই ম্যাচ খেলার জন্যে এবং দেখার জন্যে মুখিয়ে থাকে সকলে। আমি মন থেকে এই ম্যাচটা খেলতে চেয়েছিলাম। আমিও বিশ্বাস করি, সেরাদের হারাতে হলে নিজেকে সেরা হতে হয়। জোকোভিচ এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়। তাই আমার কাছে কঠিন চ্যালেঞ্জ। তবে মুখিয়ে আছি এই ম্যাচে খেলার জন্যে।”
মুখোমুখি লড়াই
এর আগে এক বারই মুখোমুখি হয়েছেন জোকোভিচ ও আলকারাজ। ২০২২ সালের ৭ মে মাদ্রিদ মাস্টার্সে দু’জনের মধ্যে খেলায় জিতেছিলেন আলকারাজ (৬-৭, ৭-৫, ৭-৬)। তার আগের ম্যাচেই নাদালকে হারিয়েছিলেন আলকারাজ। দ্বিতীয় ম্যাচে কি বদলা নিতে পারবেন জোকোভিচ! না কি ২-০ এগিয়ে যাবেন আলকারাজ, সে দিকেই লক্ষ্য থাকবে ফিলিপে শাতিয়েঁর কোর্টের।
কখন খেলা, কোথায় দেখা যাবে
শুক্রবার খেলতে নামবেন জোকোভিচ ও আলকারাজ। ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৬.১৫ মিনিটে খেলা শুরু হবে। খেলা দেখা যাবে সোনি টেন-এর বিভিন্ন চ্যানেলে।