ফেডারেশনের সভাপতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন বিনেশ ফোগাট (বাঁ দিকে), বজরং পুনিয়ারা (ডান দিকে)। ছবি: পিটিআই
তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ বেড়েই চলেছে। কুস্তিগিররা জানিয়ে দিয়েছেন, এসপার-ওসপার করে ছাড়বেন। যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই ব্রিজভূষণ শরন সিংহ জানিয়েছেন, তিনি পদত্যাগ করতে চান। তবে তার আগে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছেন জাতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি।
আগামী ২২ জানুয়ারি জরুরি ভিত্তিতে সাধারণ সভার বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানেই পদত্যাগ করতে পারেন ব্রিজভূষণ। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে মুখ খুলেছেন ব্রিজভূষণ। বলেছেন, ‘‘আমি শুনেছি দিল্লিতে আমার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে। আমি বুঝতেই পারছি না কেন এই অভিযোগ করা হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে বিনেশ অভিযোগ করেছে। কিন্তু তার আগে কি অন্য কোনও কুস্তিগির এই অভিযোগ তুলেছিল? কেউ এগিয়ে এসেছিল? হঠাৎ করে এখন কেন অভিযোগ উঠছে? সবটাই ষড়যন্ত্র। এই অপবাদ নিয়ে থাকা যায় না। দরকার পড়লে পদত্যাগ করব।’’
এই প্রসঙ্গে সরাসরি কুস্তিগিরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন ব্রিজভূষণ। তাঁর মতে, ফেডারেশনকে বলির পাঁঠা করা হচ্ছে। এমন ভাবে দেখানো হচ্ছে যে ফেডারেশন জোর করে সব কিছু করছে। তিনি বলেছেন, ‘‘কেউ ট্রায়াল দেয় না, জাতীয় স্তরে প্রতিযোগিতায় নামে না। কিন্তু তার পরেও ওদের কিছু বলা যাবে না। ফেডারেশন নিয়ম তৈরি করে। আমরা সেই নিয়ম মেনে চলি। যারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছে তারা কেউ জাতীয় স্তরে একটাও প্রতিযোগিতায় নামেনি। আমি সেটা নিয়ে কথা বলেছি বলেই আমার উপর রাগ। তাই আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।’’
নয়াদিল্লির যন্তর মন্তরে বুধবার থেকে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন কুস্তিগিররা। তাঁদের অভিযোগ, ব্রিজভূষণ একাধিক কুস্তিগিরকে যৌন নিগ্রহ করেছেন। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পদকজয়ী বিনেশ ফোগাট দাবি করেন, লখনউয়ে জাতীয় শিবিরে মহিলা কুস্তিগিরদের নিয়মিত যৌন হেনস্থা করতেন কোচেরা। এমনকী, ব্রিজভূষণের ভয় দেখিয়ে জোর করে কুস্তিগিরদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ারও চেষ্টা করতেন তাঁরা। বিনেশ যদিও জানিয়েছেন, নিজে কোনও দিন এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হননি। বিনেশের পাশে দাঁড়িয়েছেন একাধিক তারকা কুস্তিগির। এঁদের মধ্যে রয়েছেন সাক্ষী মালিক, বজরং পুনিয়ারাও। তাঁদের সঙ্গে দেখা করেছেন ববিতা ফোগাট।
বজরং বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ববিতা ফোগাট মধ্যস্থতা করতে এসেছিল। আমরা ওর সঙ্গে কথা বলব। সমস্ত বিস্তারিত ভাবে জানানো হবে ওকে। আমরা যদি দেশের জন্য লড়তে পারি, তা হলে আমরা নিজেদের জন্যেও লড়াই করতে পারি।” ববিতা কুস্তিগিরদের সঙ্গে দেখা করার পর বলেন, “আমি ওদের জানিয়েছি যে, কেন্দ্রীয় সরকার ওদের পাশে রয়েছে। আমি চেষ্টা করব যাতে আজকের মধ্যেই সব সমস্যা মিটে যায়।” ববিতা এবং তাঁর পরিবারকে নিয়েই তৈরি হয়েছিল আমির খানের ‘দঙ্গল’ ছবিটি। ববিতা এক সময় হরিয়ানার ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর ছিলেন। তিনি এর আগে টুইট করে লেখেন, “আমি আমার সতীর্থদের পাশে আছি। তোমাদের আশ্বস্ত করছি যে, এই বিষয় নিয়ে আমি সরকারের সঙ্গে কথা বলব। এবং সেই সিদ্ধান্তই নেওয়া হবে যা কুস্তিগিররা ঠিক মনে করবে।”
ইতিমধ্যেই এই ব্যাপারে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর চেয়েছে কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রক। এক বিবৃতিতে ক্রীড়া মন্ত্রক জানিয়েছে, “অলিম্পিক্স এবং কমনওয়েলথ গেমসের পদকজয়ীরা যে প্রতিবাদ করেছেন এবং জাতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি ও কোচেদের বিরুদ্ধে যে যে অভিযোগ করেছেন, তাকে মাথায় রেখে জাতীয় কুস্তি সংস্থার কাছে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। যে হেতু কুস্তিগিরদের মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারটি এর সঙ্গে জড়িত, তাই তাদের অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে মন্ত্রক। যদি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর না পাওয়া যায়, তা হলে জাতীয় কুস্তি সংস্থার বিরুদ্ধে ক্রীড়াবিধি মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”