হাঙ্গেরিতে র্যাঙ্কিং সিরিজ় প্রতিযোগিতায় বাকি দুই পদকজয়ীর সঙ্গে সঙ্গীতা ফোগট (একেবারে ডান দিকে)। ছবি: টুইটার
এশিয়ান গেমসের ট্রায়ালের আগে হাঙ্গেরিতে একটি র্যাঙ্কিং সিরিজ় প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জ জিতেছেন সঙ্গীতা ফোগট। ভারতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে যে কুস্তিগিরেরা প্রতিবাদ করছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম এই সঙ্গীতা। ব্রোঞ্জ জেতার পরে নিজের পদক সেই সব মানুষদের উদ্দেশে সঙ্গীতা উৎসর্গ করেছেন যাঁরা মহিলাদের অধিকারের জন্য লড়াই করেন।
দীর্ঘ দিন ধরে দিল্লির যন্তর মন্তরে ধর্না দেওয়ায় প্রস্তুতির পর্যাপ্ত সময় পাননি কুস্তিগির বজরং পুনিয়ার স্ত্রী সঙ্গীতা। কিন্তু তার পরেও পদক জয় আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে তাঁরা। পদক জিতে টুইটে সঙ্গীতা লিখেছেন, ‘‘আপনাদের সবার শুভেচ্ছা বার্তা আমার কাছে এসে পৌঁছেছে। এটা আমার কাছে খুব আবেগের মুহূর্ত। আপনাদের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। এই জয় শুধু আমার নয়। আপনাদের সবার।’’ টুইটে সঙ্গীতা আরও লিখেছেন, ‘‘আমি এই পদক বিশ্বের সেই সব লড়াকু মহিলাদের উৎসর্গ করছি যাঁরা মহিলাদের অধিকারের জন্য লড়াই করেন।’’
হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে ৫৯ কেজি বিভাগে ব্রোঞ্জ জিতেছেন সঙ্গীতা। অনূর্ধ্ব-২০ স্তরের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে রুপোজয়ী হাঙ্গেরির ভিক্টোরিয়া বোর্সসকে ৬-২ ফলে হারিয়ে পদক জেতেন তিনি।
গত ২৩ এপ্রিল থেকে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে দিল্লির যন্তর মন্তরে ধর্না শুরু করেন কুস্তিগিরেরা। বার বার আবেদনের পরেও সরকার তাঁদের কথা না শোনায় গত ২৮ মে নতুন সংসদ ভবন অভিযান করেন সাক্ষীরা। সেই সময় দিল্লি পুলিশ তাঁদের জোর করে আটক করে। এই ঘটনার পরে দেশের হয়ে জেতা সব পদক হরিদ্বারে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন কুস্তিগিরেরা। কিন্তু কৃষকনেতাদের হস্তক্ষেপে হরিদ্বারে গিয়েও ফিরে আসেন সাক্ষীরা। তাঁরা ৫ জুন পর্যন্ত সময়সীমা দেন কেন্দ্রকে।
এর পরেই পদক্ষেপ করে কেন্দ্র। কুস্তিগিরদের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। বৈঠকে পাঁচটি দাবি করেন কুস্তিগিরেরা। তার মধ্যে কয়েকটি দাবি মেনে নেয় কেন্দ্র। আশ্বাস দেওয়া হয় যে ১৫ জুনের মধ্যে তদন্ত শেষ করা হবে। এই আশ্বাস পেয়ে আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন কুস্তিগিরেরা। এখন এশিয়ান গেমসের ট্রায়ালের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন সঙ্গীতারা।
নাবালিকা-সহ ছয় মহিলা কুস্তিগিরকে যৌন হেনস্থা করার অভিযোগে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে মূল দু’টি মামলা দায়ের হয়েছিল। তার মধ্যে একটি ছিল ‘পকসো’ ধারায় মামলা। সেখানে অভিযোগ করা হয়েছিল যে এক নাবালিকা কুস্তিগিরকে যৌন হেনস্থা করেছেন ব্রিজভূষণ। এই ঘটনা নিয়ে কিছু দিন আগে মুখ খোলেন সেই নাবালিকা কুস্তিগিরের বাবা। তিনি জানান, মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছিল ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে। তাঁর মেয়ে একটি প্রতিযোগিতায় হেরে যাওয়ায় তিনি রেগে গিয়ে কুস্তি কর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন বলে জানিয়েছেন সেই ব্যক্তি। সেই অভিযোগের পক্ষে কোনও প্রমাণ দিল্লি পুলিশ পায়নি বলে জানিয়েছে। তারা দিল্লির পাতিয়ালা হাউস কোর্টে ৫০০ পাতার চার্জশিট পেশ করেছে। সেখানে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে পকসো ধারায় মামলা খারিজ করার আবেদন জানানো হয়েছে। এখনও সেই আবেদনের শুনানি হয়নি। মঙ্গলবার আদালতে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে ব্রিজভূষণকে।