রোনাল্ডো এবং মেসি একই রাতে গোল করা এখন আর কোনও অবাকের বিষয় নয়। প্রায় প্রতি শনি-রবিবার লা লিগায় সেটা ঘটে। তবে একই ব্যাপারটা তাঁদের নিজের নিজের দেশের জার্সিতে হলে অবাক হওয়ারই মতো!
ক্লাব ফুটবলের মেসি-রোনাল্ডো মানেই হ্যাটট্রিক, ট্রফি, স্মরণীয় সব গোল, ব্যালন ডি’অরের ছড়াছড়ি। আবার দেশের মেসি-রোনাল্ডো মানেই উল্টো ছবি। শূন্য ট্রফি ক্যাবিনেট, সমর্থকদের কটাক্ষ, ফাইনালের পর ফাইনাল হার।
কিন্তু মঙ্গলবার রাতে দেশের জার্সিতেও দুই মহাতারকা শিরোনাম ছিনিয়ে নিলেন। মেসি যেমন পেনাল্টি থেকে গোল করে আর্জেন্তিনাকে ২০১৮ বিশ্বকাপ যোগ্যতা অর্জন ম্যাচে ২-০ জেতালেন বলিভিয়ার বিরুদ্ধে। গোল করা ছাড়াও গোটা ম্যাচে বিপক্ষ ডিফেন্ডারদের নাচালেন। বার্সা জার্সিতে যেটা করে থাকেন সেই ঈশ্বরপ্রদত্ত স্কিলের নজির রেখে গেলেন। মেসির প্রতিটা দর্শনীয় মুভমেন্টই সেই রাতে বারবার রিটুইট হতে থাকে। দেশের হয়ে ৫০ গোল ক্লাবের নতুন সদস্যও হলেন এলএম টেন।
আবার মেসি গোল করবেন আর তিনি রোনাল্ডো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবেন হয় নাকি? ফিফা ফ্রেন্ডলিতে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর দেশ বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত হেড দিয়ে গোল করলেন রোনাল্ডো। কুর্তোয়া-লুকাকু-ফেলাইনিদের বিপক্ষে ২-১ জিতল সিআর সেভেনের দেশে পর্তুগাল।
যদিও দেশের জার্সিতে দুই মহাতারকা গোল করলেও স্প্যানিশ ফুটবলমহলের কাছে এটা আবার ‘এল ক্লাসিকো’-র ওয়ার্ম আপ। টুইটার জুড়ে অন্তত বার্সা-রিয়াল সমর্থকদের তাই মত। বার্সা সমর্থক যেমন টুইট করেছেন, ‘শনিবারের ক্লাসিকোতে মেসি ছাড়াও থাকছে নেইমার-সুয়ারেজ। ভুলে যেও না মাদ্রিদ।’ পাল্টা রিয়াল ভক্তের পোস্ট, ‘মেসি+নেইমার+সুয়ারেজ = রোনাল্ডো।’
মেসি-রোনাল্ডোর উজ্জ্বল রাত আবার ঢেকে যাচ্ছে ব্রাজিলের লজ্জা। যে দল রেকর্ড পাঁচ বার বিশ্বকাপ জিতেছে, তারা মঙ্গল-রাতে প্যারাগুয়ের বিরুদ্ধে ০-২ পিছিয়ে থেকে শেষ মুহূর্তে ২-২ ড্র করল। স্কোরলাইনটা হয়তো দুঙ্গার দলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বোঝাচ্ছে। কিন্তু আদতে মোটেই তা নয়। একটা বিশ্বকাপের চরম লজ্জাও হাল্কের মতো গড়পরতা ফুটবলারকে এখনও ব্রাজিল দল থেকে বের করতে পারল না! সঙ্গে আবার কোনও এত গিল নামের ডিফেন্ডার! যে চিনের মতো একটা ‘প্রতিযোগিতামূলক’ লিগে খেলেও অবাক ভাবে প্যারিস সাঁ জাঁর মারকুইনসকে রিজার্ভে বসিয়ে খেলেন দুঙ্গার ব্রাজিলে! নেইমার আর দাভিদ লুইজ তো আগের উরুগুয়ে ম্যাচে কার্ড দেখাতেই ‘বিশ্রাম’ নিয়ে নেন পরের ম্যাচে। ক্লাব ফুটবলের ‘বিজনেস এন্ড’ যে এসে পড়েছে। ব্রাজিল প্রাক বিশ্বকাপে এ রকম খেলতে থাকলে রাশিয়া পৌঁছনো হয়তো টম ক্রুজের ‘মিশন ইম্পসিবলের’ মতো হয়ে উঠবে!
একই রাতে আবার যতই ফিফা ফ্রেন্ডলি হোক না কেন, ইউরোপের দুই হেভিওয়েটের লড়াইয়ে ২১ বছরের অভিশাপমুক্ত হল জার্মানি। তাদের অন্যতম ‘বোগি-দল’ ইতালিকে ৪-১ উড়িয়ে দিল জোয়াকিম লো-র দল। আগের ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অপ্রত্যাশিত হারের রেশ মুছে জার্মানি প্রমাণ করল কেন তারা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। শুরুর থেকে শেষ একচ্ছত্র দাপট ওজিলদের। সত্যিই যেন ইতালি দলটার অবস্থা তাদের ঘরোয়া লিগের মতোই। না হলে কিছু দিন আগেই সেরি এ-তে ক্লিনশিটের রেকর্ড করা জিয়ানলুইগি বুফনও চার গোল খাচ্ছেন! যে ইতালীয় দল ডিফেন্সের জন্য বিখ্যাত বরাবর, তারা ভুলে গিয়েছে ডিফেন্সের ‘এবিসিডি’! তার উপরে ইউরোর আগে চোট পেয়ে বেরিয়ে গেলেন দলের সেরা ডিফেন্ডার লিওনার্দো বোনুচ্চি। চেলসি হয়তো এখন থেকেই ভাবছে পরের মরসুমে ইতালি কোচ আন্তোনিও কন্টেকে আনা আদৌ ঠিক সিদ্ধান্ত হল কি না!
অন্য এক হাইপ্রোফাইল ম্যাচে ইংল্যান্ড ফের ইংল্যান্ডের মেজাজেই। ব্যক্তিগত প্রতিভায় ভর্তি। কিন্তু দল হিসেবে কিছু করতে পারে না। না হলে ইউরোয় যোগ্যতা অর্জন করতে না পারা নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ১-২ হারল কী করে রয় হজসনের দল? তাও আগের ম্যাচেই বিশ্বচ্যাম্পিনদের হারানোর মনোবল সমেত!
ম্যান অব দ্য উইক অবশ্য মেসি নন। রোনাল্ডোও নন। সপ্তাহের সেরা সেই স্ট্রাইকার যিনি দেশের জার্সিতে প্রত্যাবর্তনেই করেছেন গোল। ক্লাব ফর্মটাও নিয়ে এসেছেন দেশের জার্সিতে। ব্যালন ডি’অরের শেষ তিনে তিনি ছিলেন না কারণ তাতে নাকি ফিফার বদনাম হবে। অথচ ফিফা কর্তারা নিজেরাই ফুটবল সংস্থাকে করে তুলেছেন বিতর্কিত এক মঞ্চ।
তিনি— লুইস সুয়ারেজ!
ম্যান অব দ্য উইক: লুইস সুয়ারেজ