যুগলবন্দি: নেমারকে নিয়ে বিশেষ প্রস্তুতি তিতের। ছবি: এএফপি।
প্রথম ম্যাচে সুইৎজ়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে এগিয়ে গিয়েও জয় হাতছাড়া হয়েছে। দু’দিন আগে অনুশীলনে গোড়ালিতে চোট পেয়ে নেমার দ্য সিলভা স্যান্টোস (জুনিয়র) মাঠ ছাড়ায় উদ্বেগ আরও বেড়েছিল ব্রাজিল শিবিরে। বুধবার দলের সেরা অস্ত্র অনুশীলনে নামলেও দ্বিতীয় ম্যাচে তাঁর খেলা নিয়ে আশঙ্কা পুরোপুরি দূর হয়নি। কোস্টা রিকার বিরুদ্ধে ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে ব্রাজিল ভক্তদের উৎকণ্ঠা দূর করে তিতে জানিয়ে দিলেন, শুক্রবার শুরু থেকেই খেলবেন নেমার।
সেন্ট পিটার্সবার্গে সাংবাদিক বৈঠকে তিতে বলেছেন, ‘‘মঙ্গলবার অনুশীলনে ডান পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা অনুভব করায় মাঠ ছেড়েছিল নেমার। কিন্তু পরের দিনই স্বাভাবিক ভাবে অনুশীলন করেছে। তাই কোস্টা রিকার বিরুদ্ধে নেমারের খেলতে সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।’’
প্রথম ম্যাচে নেমারকে চেনা ছন্দে পাওয়া যায়নি। তিনি বল ধরলেই সুইৎজ়ারল্যান্ডের ফুটবলাররা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। পুরো ম্যাচ দশ বার ফাউল করা হয়েছিল নেমারকে ম্যাচের পরে অনেকেই বলছেন, খেলার ধরন বদলানো উচিত ব্রাজিল তারকার। তিতে কিন্তু তাঁদের সঙ্গে একমত নন। তিনি বলে দিয়েছেন, ‘‘আমি কখনওই নেমারকে খেলার ধরন বদলানোর পরামর্শ দেব না। তা ছাড়া কোচ তো আর মাঠে নেমে খেলবে না।’’ এর পরেই তিতে যোগ করেছেন, ‘‘প্রায় সাড়ে তিন মাস পরে নেমার নব্বই মিনিট পুরো খেলল। পুরোপুরি ছন্দে ফেরার জন্য ওর অন্তত পাঁচটা ম্যাচ দরকার। নেমার যদি খেলতে না পারে, তা হলে সেটা দলের পক্ষে বিরাট ক্ষতি।’’ নেমারকে ছন্দে ফেরাতে যে মরিয়া তিতে, সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুশীলনেই স্পষ্ট। দেখা গিয়েছে, নেমারকে নিয়ে আলাদা ভাবে অনুশীলন করাচ্ছেন তিনি। বলছেন, ‘‘আমি কখনও চাইব না নেমারের মতো ফুটবলারকে মাঠের বাইরে রাখতে।’’
ব্রাজিল পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। এই মুহূর্তে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে দু’নম্বরে। প্রতিপক্ষ কোস্টা রিকার র্যাঙ্কিং ২৩। বিশ্বকাপে অভিষেক ১৯৯০ সালে। সেরা পারফরম্যান্স চার বছর আগে ব্রাজিল বিশ্বকাপে উরুগুয়ে ও ইতালির মতো দলকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে যোগ্যতা অর্জন করে চমকে দিয়েছিলেন কেলর নাভাসরা। যদিও ব্রাজিলের বিরুদ্ধে তাঁরা জিতেছেন মাত্র একবারই। ২০১৫ সালে। তাই অধিকাংশ ফুটবল পণ্ডিতদের মতে শুক্রবার ব্রাজিলের জয়ের সম্ভাবনাই বেশি। কিন্তু তিতে তাঁদের পূর্বাভাসকে একেবারেই গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তাঁর মতে কোস্টা রিকা ম্যাচের উপরেই নির্ভর করছে বিশ্বকাপে ব্রাজিলের ভবিষ্যৎ। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেছেন, ‘‘কোস্টা রিকাকে হাল্কা ভাবে নেওয়ার প্রশ্নই নেই। কারণ, এই ম্যাচের উপরেই নির্ভর করছে আমাদের ভবিষ্যৎ।’’ তিনি যোগ করেছেন, ‘‘সব ম্যাচেই আমরা ভাল খেলার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামি। এই ম্যাচেও তার ব্যতিক্রম হবে না। তবে আমাদের সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে।’’ জানিয়ে দিয়েছেন, কোস্টা রিকার বিরুদ্ধে প্রথম একাদশে খুব একটা পরিবর্তনের পক্ষপাতী নন তিনি। বলেছেন, ‘‘আগের ম্যাচের দলই অপরিবর্তিত রাখতে চাই।’’
কোস্টা রিকার বিরুদ্ধে ব্রাজিলকে নেতৃত্ব দেবেন থিয়াগো সিলভা। কোচের সঙ্গে তিনিও ছিলেন সাংবাদিক বৈঠকে। থিয়াগো বলেছেন, ‘‘প্রথম ম্যাচের পরেই বলেছিলাম, আমাদের উন্নতি করতে হবে। এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি তাতে সব ম্যাচই আমাদের কাছে ফাইনাল।’’ ব্রাজিল অধিনায়ক আরও বলেছেন, ‘‘নিজেদের মধ্যে আলোচনায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এই ম্যাচে সবাইকে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে।’’ ব্রাজিলকে আটকাতে সুইৎজ়ারল্যান্ডের মতো কোস্টা রিকাও রক্ষণাত্মক রণনীতি নিয়ে খেলতে পারে। থিয়াগো বলছেন, ‘‘আমরা খুব ভাল করেই জানি, কোস্টা রিকার বিরুদ্ধে কী ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে হবে। সে ভাবেই প্রস্তুতি সেরেছি। তা-ই আমরা উদ্বিগ্ন নই।’’
সেন্ট পিটার্সবার্গে ব্রাজিল বনাম কোস্টা রিকা ম্যাচকে ঘিরে উন্মাদনা। বুধবার গভীর রাতেও নেমারদের স্বাগত জানাতে ব্রাজিলের টিম হোটেলের সামনে ভিড় করেছিলেন ভক্তেরা। এ দিনও সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামের বাইরেও প্রিয় তারকাদের দেখার জন্য ভিড় জমিয়েছিলেন তাঁরা।’’
প্রায় সাড়ে তিন মাস পরে নেমার নব্বই মিনিট পুরো খেলল। পুরোপুরি ছন্দে ফেরার জন্য ওর অন্তত পাঁচটা ম্যাচ দরকার।