অভিমন্যু ঈশ্বরনে। ফাইল চিত্র
বাংলা ৩৩৬ আর অভিমন্যু ঈশ্বরন ১৮৬। শনিবার হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে রঞ্জি ট্রফির ম্যাচের দ্বিতীয় দিন বাংলার স্কোরবোর্ডের ছবিটা ছিল এ রকমই। যার অর্থ, অভিমন্যুকে বাদ দিলে ব্যাটিংয়ের বেহাল অবস্থা মোটেই শোধরায়নি। ২৫ বছর বয়সি ওপেনার যা রান করেন, দলের বাকি দশ ব্যাটসম্যান মিলেও সেই রান তুলতে পারেননি। হায়দরাবাদ দিনের শেষে ২০-১। একমাত্র উইকেট অশোক ডিন্ডার।
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়েছিলেন অভিমন্যু। ভারত ‘এ’ দলের সঙ্গে। সেখানকার কঠিন পরিবেশে দু’টি চার দিনের ম্যাচ খেলেন তিনি। ওখানে সপ্তাহ দুয়েক কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের কাছ থেকে যে শিখেছেন অনেক নতুন কিছু, তা হায়দরাবাদ রওনা হওয়ার আগে আনন্দবাজার-কে বলেও গিয়েছিলেন তিনি। সেই শিক্ষা কাজে লাগিয়ে যে রঞ্জি ট্রফিতে ভাল ব্যাটিং করার চেষ্টা করবেন, সেই প্রতিশ্রুতিও দিয়ে যান। শনিবার হায়দরাবাদের রাজীব গাঁধী স্টেডিয়ামে সেই দ্রাবিড়-মন্ত্র কাজে লাগিয়েই বাংলাকে ফের লজ্জার হাত থেকে বাঁচালেন ২৩ বছর বয়সি দেহরাদুনজাত ওপেনার। দিনের শেষে বাংলার মেন্টর অরুণ লাল স্বীকার করে নেন, ‘‘অভিমন্যু ওই ইনিংসটা না খেললে তো আমাদের ব্যাটিং ফের শুয়ে পড়ত।’’ অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারিও কম চিন্তিত নন তাঁদের ব্যাটিং নিয়ে।
অভিষেক রামন ৩, সুদীপ চট্টোপাধ্যায় ৩২, মনোজ তিওয়ারি ৮, অনুষ্টুপ মজুমদার ৩২। বাংলার টপ অর্ডার ব্যাটিংয়ের যখন এই দশা, তখন অভিমন্যু একাই লড়াই করে যান। আগের দিন বৃষ্টির জন্য ৩৮ ওভার খেলা হয়। উইকেটে ভিজে ভাব ছিল যথেষ্ট। এমন উইকেটে ব্যাট করা বেশ কঠিন ছিল বলে হায়দরাবাদ থেকে এ দিন ফোনে জানান অরুণ। তার মধ্যেও ৫৭ রানে অটল ছিলেন অভিমন্যু।
শনিবার আবহাওয়া স্বাভাবিক হতে উইকেটও শুকিয়ে যায়। সন্ধ্যায় হায়দরাবাদ থেকে অভিমন্যু ফোনে বলেন, ‘‘আজ শুরুতে সেই ভিজে ভাবটা ছিল। ঘণ্টাখানেক পর থেকে উইকেট বদলে যায়। তখন আর ব্যাট করতে অসুবিধা হয়নি।’’ অথচ এই উইকেটেই কি না একের পর এক আউট হয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরে যান তাঁর সতীর্থরা! বাংলার শেষ চার উইকেট পড়ে মাত্র ১৮ রানে। যা নিয়ে বিচলিত মনোজ বলছিলেন, ‘‘অভি অসাধারণ ব্যাট করেছে। কিন্তু ওর ইনিংস বাদ দিলে আমাদের ব্যাটিং মোটেই ভাল হয়নি। এটা আমাদের শোধরাতেই হবে।’’ এটাই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান অভিমন্যুর। আগেরটা ছিল ১৫০ রানের। তবে এটাই সেরা কি না, তা নিশ্চিত নন। বলেন, ‘‘সেরা তিনে অবশ্যই থাকবে। তবে এটাই এক নম্বর কি না, বলতে পারব না।’’ ১৪ রানের জন্য ডাবল সেঞ্চুরি হাতছাড়া হওয়ায় অবশ্য আফসোস নেই তাঁর। বলেন, ‘‘দলের রানটা যে ভাল জায়গায় নিয়ে যেতে পেরেছি, এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় ব্যাপার।’’
কয়েক দিন আগেই নিউজিল্যান্ডে গিয়ে রাহুল দ্রাবিড়ের কাছ থেকে অনেক নতুন কিছু শিখে এসেছেন অভিমন্যু। সেই মন্ত্র যে কাজে লাগছে, তা স্বীকার করে অভিমন্যু বলেন, ‘‘অবশ্যই কাজে লাগছে। টেকনিকে সামান্য কিছু বদল করেই যে অনেক উন্নতি করা যায়, তা রাহুল স্যার শিখিয়েছেন। মানসিকতায় বদল আনাটাও যে বড় ব্যাপার, তাও শিখেছি ওঁর কাছ থেকে। এগুলো এখন দারুণ কাজে লাগছে।’’
কয়েক দিন আগে ভারত ‘এ’ দলের নেটে হায়দরাবাদের পেসার মহম্মদ সিরাজের মুখোমুখি হন নিউজিল্যান্ডে। ‘‘সে জন্যও ওর বিরুদ্ধে ব্যাট করতে কিছুটা সুবিধা হয়েছে’’, জানান অভিমন্যু।
দ্রাবিড়-মন্ত্র অবশ্য সারা ক্রিকেট জীবনেই কাজে লাগবে তাঁর।