উইম্বলডন ফাইনালে জোকোভিচ। ছবি রয়টার্স
কথায় আছে, দিনের শুরুটা দেখে বলে দেওয়া যায় বাকিটা কেমন যাবে। শুক্রবারের পর থেকে ক্যামেরন নরি কি আদৌ আর সেই কথাটায় বিশ্বাস করতে পারবেন? উইম্বলডনের সেমিফাইনালে শুরুটা যে ভাবে করেছিলেন, তাতে অঘটন ঘটানোর রসদ তাঁর হাতে ছিল। তবে অভিজ্ঞতায় মার খেয়ে যাওয়ায় সেটা আর হল না। অ্যান্ডি মারের পর ব্রিটিশ খেলোয়াড় হিসাবে ঐতিহ্যশালী এই গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে ওঠা হল না তাঁর। জোকোভিচ জিতলেন ২-৬, ৬-৩, ৬-২, ৬-৪ গেমে। আগামী রবিবার উইম্বলডনের সেন্টার কোর্টে ২১তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম এবং সপ্তম উইম্বলডন ট্রফির লক্ষ্যে নামবেন জোকোভিচ। খেলবেন অস্ট্রেলিয়ার নিক কিরিয়সের বিরুদ্ধে, যাঁকে এখনও পর্যন্ত দু’টি সাক্ষাতে এক বারও হারাতে পারেননি সার্বিয়ার তারকা।
নরির সামনে ছিলেন জোকোভিচের মতো ছ’বারের উইম্বলডন জয়ী খেলোয়াড়। অন্য কেউ হলে মানসিক ভাবে পিছিয়ে থেকে নামতেন। তবে সমাজবিদ্যার ছাত্র নরি অন্য ধাতুতে গড়া। বাঁ হাতে খেলেন বলে নাদালের সঙ্গে কিছুটা সাদৃশ্য আছে। তবে খেলার মধ্যে নাদালের সঙ্গে কোনও মিল সে ভাবে খুঁজে পাওয়া গেল। অবশ্যই প্রথম সেট বাদে। প্রথম সেটে অন্য নরিকে দেখতে পাওয়া গেল। বাকি ম্যাচে যিনি রইলেন কার্যত নিষ্প্রভ। দু’একটি দর্শনীয় শট ছাড়া প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলেন কই?
সেট খোয়ানো এ বারের উইম্বলডনে নিয়ম করে ফেলেছেন জোকোভিচ। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় রাউন্ড বাদে প্রতিটি ম্যাচে অন্তত একটি হলেও সেট খুইয়েছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে ইয়ানিক সিনারের বিরুদ্ধে তো হেরেই বসেছিলেন প্রথম দু’টি সেট খুইয়ে। এ দিনও সেই অশনি সংকেত ছিল। প্রথম সার্ভিসের জোকোভিচকে ব্রেক করেন নরি। পঞ্চম গেমে আবার ব্রেক করলেন। ব্যাক হ্যান্ডে নীচু শট মেরেছিলেন। জোকোভিচ আনফোর্সড এরর করলেন। সপ্তম গেমে আবার ব্রেক। জোকোভিচকে দেখে এক সময় মনে হচ্ছিল, তিনি সত্যিই উইম্বলডন সেমিফাইনাল খেলতে নেমেছেন তো? আত্মবিশ্বাসের অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছিল তাঁর খেলায়। নরির যতটা না কৃতিত্ব, তার থেকেও বেশি চোখে পড়ছিল জোকোভিচের ভুল। ২-৫ পিছিয়ে পড়ার পর ফেরা কঠিন ছিল। পরের সার্ভ ধরে রেখে সহজেই প্রথম সেট পকেটে পুরে নিলেন নরি।
দ্বিতীয় সেটে প্রথম দিকে দু’জনেই পাল্লা দিয়ে লড়েন। জোকোভিচ এবং নরি দু’জনেই নিজেদের প্রথম তিনটি সার্ভ ধরে রাখেন। নরিকে চতুর্থ সার্ভে ভেঙে দেন জোকোভিচ। নিজের সার্ভ ধরে রেখে সেটে পকেটে পুরে ম্যাচে সমতা ফেরান। ম্যাচে ফিরে আত্মবিশ্বাস এক লাফে অনেকটাই বেড়ে যায় সার্বিয়ার তারকার। পরের দু’টি সেটে সেটা সহজেই বোঝা গেল।
ম্যাচের আগে বিজয় অমৃতরাজ বলছিলেন, নাদাল না থাকায় অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী হয়ে নামবেন জোকোভিচ। পাশাপাশি তাঁর শারীরিক সক্ষমতা, দক্ষতা, শটের বৈচিত্র্য এবং অভিজ্ঞতা, সবই তাঁকে সেমিফাইনালে এগিয়ে রাখবে। নরিকে প্রতিভাবান খেলোয়াড় হিসাবে উল্লেখ করেও অমৃতরাজ জানিয়ে দেন, জোকোভিচের সঙ্গে অন্তত এই মুহূর্তে পাল্লা দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। সেটাই দেখা গেল ম্যাচে। প্রথম সেটে নরি প্রতিভার ঝলক দেখালেও, জোকোভিচ ম্যাচে ফিরতে বেশি সময় লাগালেন না।
জোকোভিচের ছন্দ ব্যাহত করতে নরির দরকার ছিল মাথা ঠান্ডা রেখে খেলা। তবে অতিরিক্ত তাড়াহুড়ো করতে যাওয়াই কাল হল তাঁর। জোকোভিচকে যে যে অস্ত্রে ভোঁতা করতে চেয়েছিলেন, সবই ব্যুমেরাং হয়েছে। তৃতীয় সেটের শুরুতেই জোকোভিচ ব্রেক করে দেন নরিকে। পঞ্চম গেমে আবার ব্রেক করেন। ততক্ষণে তিনি পুরোপুরি ছন্দ পেয়ে গিয়েছেন। দেখে মনে হচ্ছিল, এই জোকোভিচকে বোধহয় আর কেউ আটকাতে পারবেন না। তা হয়ওনি। সহজেই নিজের পরের দু’টি সার্ভ ধরে রেখে ম্যাচ পকেটে পুরে নেন তিনি।
চতুর্থ সেটের শুরুটাও একই রকম ভাবে হয়। প্রথম গেমেই নরিকে ভেঙে এগিয়ে যান জোকোভিচ। নরির দুর্বল ব্যাকহ্যান্ড এবং ততোধিক দুর্বল ফোরহ্যান্ড জোকোভিচকে এগিয়ে দেয়। সেখান থেকে আর ব্রেক করার দরকার হয়নি। নরিকে এর পর আর ম্যাচে ফিরতে দেননি জোকোভিচ।