ফাইনালের টিকিট পেয়ে। ছবি: এপি।
লেখার শুরুতেই সাহস করে একটা ভবিষ্যদ্বাণী করার লোভ সামলাতে পারছি না। সেন্টার কোর্টে বসে আজ দুটো সেমিফাইনাল দেখার পর মনে হচ্ছে, রবিবারও এই ফর্মে খেললে ফেডেরার ফাইনালে বিশ্বের পয়লা নম্বর জকোভিচকেও হারিয়ে দেবে।
গত এক বছর আমার অনেকগুলো লেখায় বলেছিলাম, ফেডেরারের আঠারো নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার সম্ভাবনা দেখছি না। বিশেষ করে গত বার উইম্বলডন ফাইনাল ও যখন পাঁচ সেটে টেনে নিয়ে গিয়েও জকোভিচের কাছে হারল, আমার বিশ্বাস আরও পোক্ত হয়েছিল। আর হবে না!
কিন্তু এই লেখায় আমার ভুল সরাসরি মেনে নিচ্ছি। বরং ভাবছি, নিজে একটুআধটু আন্তর্জাতিক টেনিস খেলা সত্ত্বেও কেন বুঝিনি যে, জিনিয়াস সম্পর্কে শেষ কথা বলাটা কখনই উচিত নয়! যত দিন না পর্যন্ত লোকটা র্যাকেটটা চিরকালের মতো তুলে রাখছে।
শুক্রবারের ফেডেরার যেন সেই ভিন্টেজ ফেডেরার! অনেক বছর ওকে এ রকম দুর্ধর্ষ, এত নিখুঁত খেলতে দেখিনি। ঘরের মাঠে, স্টেডিয়াম ঠাসা দর্শক সমর্থন পিছনে নিয়ে খেলা হটফেভারিট অ্যান্ডি মারেকে ৭-৫, ৭-৫, ৬-৪ হারানো আজকের ফেডেরার যেন সেই এক দশক আগের সোনার ফর্মের ফেডেরার। যখন ও টানা পাঁচ বার উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
নাকি তার চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর? উইম্বলডন চত্বর থেকে বেরিয়ে টিউব ধরতে যাওয়ার পথেও ভাবছিলাম, সেই সময়ও কি ফেডেরার এত আক্রমণাত্মক খেলত? এত ঘনঘন নেটে আসত? দুর্দান্ত সার্ভ-ভলির সঙ্গে এত বুদ্ধি করে স্লাইস শট মিশিয়ে মেগাপ্রতিদ্বন্দ্বীকে ধন্দে রাখত যে, ফেডেরারের পরের রিটার্নটার জন্য বেসলাইনে থাকব, না নেটে উঠব?
মেনে নিচ্ছি, ঘরের ছেলে মারের উপর ব্রিটিশ মিডিয়া থেকে শুরু করে সাধারণ ইংরেজ টেনিসপ্রেমীদের প্রবল চাপ ছিল। এ দেশের সবাই ধরে নিয়েছিল, মারেই ম্যাচটা জিতবে। কিন্তু এর চেয়েও তো অনেক বেশি চাপ নিয়ে মারে সাতাত্তর বছর পর প্রথম ব্রিটিশ হিসেবে উইম্বলডনে পুরুষ সিঙ্গলস চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বছর দুয়েক আগে! অলিম্পিক ফাইনালে এই সেন্টার কোর্টেই স্ট্রেট সেটে হারিয়েছিল ফেডেরারকেই!
অথচ বাস্তবে দেখলাম, মারে এ দিন অসহায় আত্মসমর্পণ করল বয়সে পাঁচ বছরের সিনিয়রের কাছে। আর এই সুপার পাওয়ার টেনিসের যুগে তেত্রিশেও ফেডেরার সুপার ফিটনেস দেখিয়ে, অল রাউন্ড টেনিস খেলে একটা ক্লাসিক জয় তুলে নিল। অবিশ্বাস্য! এক জন সত্যিকারের জিনিয়াসই পারে এ রকম মহাউজ্জ্বল প্রত্যাবর্তন ঘটাতে।
আমার মনে হয়, এ বছর ফেডেরার প্রি সিজন ট্রেনিংয়ে অনেক বেশি পা আর কোমরের স্ট্রেচিং করেছে। অগুনতি স্লাইস শট প্র্যাকটিস করেছে। ঘাসের কোর্টের আদর্শ সার্ভ-ভলি টেনিস ওর জন্মগত। কিন্তু এত ভাল ব্যাকহ্যান্ড স্লাইস মারতে, এত আগ্রাসী ভাবে নেটের সামনে উঠতে ফেডেরারকে শেষ কবে দেখেছি মনে পড়ছে না!
রয়্যাল বক্সও আজ ছিল সবচেয়ে বেশি মহাতারকায় ভরা। লেভার, বর্গ, ফার্গুসন, বেকহ্যাম, সচিন, কোহলি, অনুষ্কা— কে সেখানে নেই বসে! ঠিক তার সঙ্গেই মানানসই চোখধাঁধানো পারফরম্যান্স ফেডেরারের। নানা জগতের কিংদন্তিদের উদ্দেশ্যে যেন ওর নীরব স্টেটমেন্ট—আমাকে দেখতে এসেছ। আমাকেই দেখো। সত্যিই, আজ সেলিব্রিটি দর্শকদের সঙ্গে সেলফি তোলার হিড়িক গত কয়েক দিনের মধ্যে সবচেয়ে কম!
রজার ফেডেরারের এমনই মাহাত্ম্য!
আজ টিভিতে
(স্টার স্পোর্টস-২)
সেরেনা বনাম মুরুগুজা মেয়েদের সিঙ্গলস ফাইনাল সন্ধে সাড়ে ছ’টায়।
সেন্টার কোর্টে তৃতীয় ম্যাচে সানিয়া মির্জা নামবেন ডাবলস ফাইনালে।