Ravichandran Ashwin

India vs England 2021: অশ্বিন-নাটক, বল ঘুরবে কি ওভালে

রবীন্দ্র জাডেজা— যাঁকে খেলিয়ে চলেছেন বিরাট কোহালিরা, তাঁর সম্পূর্ণ সুস্থতা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

Advertisement

সুমিত ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৭:১৫
Share:

আলোচনা: প্রস্তুতির ফাঁকে কোচ শাস্ত্রী ও অশ্বিন। ভারতীয় স্পিনারের খেলা নিয়ে শুরু জল্পনা। ছবি পিটিআই।

একাত্তরের ঐতিহাসিক ওভাল জয়ের পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে দাঁড়িয়ে কে জানত এক ভারতীয় স্পিনারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্রিকেট মহল উত্তাল হবে? তিনি— অশ্বিন কি চন্দ্রোদয়ের মাঠে প্রথম একাদশে ফিরবেন?

Advertisement

এমনিতে পরিস্থিতি, পরিসংখ্যান, যুক্তি-তক্কো সবই অশ্বিনের দিকে। ভারতীয় দল পরিচালন সমিতির কোনও কোনও সদস্যও মনে করেন, তিনিই বিশ্বের সেরা স্পিনার। টেস্টে যাঁর উইকেট সংখ্যা ৪১৩, তাঁর যোগ্যতা নিয়ে চট করে কে প্রশ্ন তুলবে!

রবীন্দ্র জাডেজা— যাঁকে খেলিয়ে চলেছেন বিরাট কোহালিরা, তাঁর সম্পূর্ণ সুস্থতা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। তা ছাড়াও প্রশ্ন উঠেছে, জাডেজা যতটা না বোলিং অলরাউন্ডার, তার চেয়ে বেশি করে ব্যাটিং অলরাউন্ডার। এই মুহূর্তে বাঁ-হাতি স্পিনারের কাছ থেকে উইকেট আশা করবে না তাঁর পোষ্য ঘোড়ারাও। তা হলে ওভাল, যেখানে বরাবর স্পিনারদের মুখে হাসি ফুটেছে, যেখানে চন্দ্রশেখরের সেই ৩৮ রানে ছয় উইকেটের অমর স্পেল চূর্ণ করেছিল রে ইলিংওয়ার্থের ইংল্যান্ডকে, সেই মাঠে কী করে শুধুমাত্র জাডেজার স্পিনের উপরে ভরসা করে নামবেন কোহালিরা? তা-ও আবার হেডিংলেতে এমন উদ্বেগজনক ক্রিকেট খেলে সিরিজ ১-১ করে বসে থাকার পরে!

Advertisement

একটা হিসাব এ দিন দেখা গেল যে, ইংল্যান্ডের সব মাঠ মিলিয়ে পেসারদের সব চেয়ে করুণ পরিসংখ্যান ওভালে। তেমনই স্পিনারদের জন্য সেরা শিকারভূমিও। কিন্তু ইতিহাস যা-ই বলুক, এ বারে অন্য গন্ধ পাচ্ছেন কেউ কেউ। ওভালে আদৌ বল ঘুরবে তো? ইংল্যান্ডের ক্রিকেট মস্তিষ্করা আতিথেয়তা বাড়িয়ে দেবেন অশ্বিনদের জন্য? সাধারণত, চতুর্থ এবং পঞ্চম দিনে স্পিনারদের জন্য ‘টার্ন’ অপেক্ষা করে ওভালে। কিছু সাহায্য এ বারেও নিশ্চয়ই থাকবে। কিন্তু হেডিংলেতে বুদ্ধি করে যে ভাবে ইংল্যান্ড বাইশ গজের প্রাণবন্ত ভাব কমিয়ে দিয়ে বুমরা-শামিদের বিষদাঁত উপড়ে ফেলেছিল, তা দেখে অনেকের সন্দেহ জাগছে, খেলাটা মাঠের বাইরেও চলছে। মনে করা হচ্ছে, মাঠের নেতা যদি জো রুট হন, তা হলে তাঁকে সঙ্গত করার জন্য আরও এক জন আছেন। ডিরেক্টর অব ক্রিকেট অ্যাশলে জাইলস। প্রাক্তন বাঁ হাতি স্পিনার। যাঁকে দিয়ে ভারতে এসে সচিনের বিরুদ্ধে সেই কুখ্যাত লেগ থিয়োরি প্রয়োগ করেছিলেন নাসের হুসেন। ভারতীয় বোলিংকে অকেজো করতে পিচের ঝাঁঝ কমাও— এটা চাণক্যের চাল হয়ে থাকতে পারে। ওভালে তাঁরাই জামাই আদরে বল ঘুরতে দেবে, ভাবার কারণ আছে কি?

যদিও প্রাক-ম্যাচ গতিপ্রকৃতি কোনও ইঙ্গিত হলে অশ্বিনকে ঘিরে ওভালের প্রস্তুতিতে বাড়তি ব্যস্ততাও চোখে পড়েছে বলে শোনা গেল। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, কখনও তিনি হেড কোচ রবি শাস্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন, কখনও অধিনায়ক বিরাট কোহালির সঙ্গে আলোচনায় মগ্ন। এ সব দেখে মনে হতেই পারে, এক নম্বর স্পিনারকে আর কোল্ড স্টোরেজে ফেলে রাখা না-ও হতে পারে। তিনটে রাস্তা খোলা কোহালিদের সামনে—

এক) জাডেজার জায়গায় একমাত্র স্পিনার হিসেবে নিয়ে আসা হল অশ্বিনকে। সে ক্ষেত্রে বাকি চার পেসার যেমন ছিল, থাকল। ওভালের পিচে এই ছক ঠিক কি না, তর্ক থাকছে।

দুই) অনেক বিশেষজ্ঞের প্রেসক্রিপশন মতো, ভারতীয় দল নামল ছয় ব্যাটসম্যানে। হয় মায়াঙ্ক আগরওয়ালকে ওপেন করানো হল রোহিত শর্মার সঙ্গে। কে এল রাহুল নামলেন মাঝের দিকে। অথবা রোহিত-রাহুল ওপেন করলেন, যোগ করা হল হনুমা বিহারীকে। তখন তিন পেসারের (বুমরা, শামি, সিরাজ) সঙ্গে একমাত্র স্পিনার হিসেবে খেললেন অশ্বিন। এই ফর্মুলায় রক্তাল্পতায় ভোগা মাঝের এবং নীচের দিকের ব্যাটিংকেও চাঙ্গা করা যেতে পারে। বিশেষ করে যখন কোহালি বড় রান পাচ্ছেন না, রাহানে নিষ্প্রভ, ঋষভ অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াচ্ছেন।

তিন) যে-হেতু বিরাট কোহালি বলেছেন, ছয় ব্যাটসম্যানের থিয়োরিতে বিশ্বাস করেন না, পাঁচ বোলারেই নামলেন। কিন্তু হেডিংলেতে হতশ্রী ইশান্ত শর্মাকে বসিয়ে দুই স্পিনারে নামার সিদ্ধান্ত হল। সে ক্ষেত্রে জাডেজা ফিট থাকলে তিনি এবং অশ্বিন দু’জনেই খেললেন।

ইংল্যান্ডের অন্যান্য মাঠে যখন ব্যাটসম্যানদের ক্রমাগত সুইং, সিম বোলিংয়ের সামনে পড়ে নাভিশ্বাস ওঠে, তখন ওভাল রানের মখমল বিছিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে স্পিনারদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। সুনীল গাওস্করের সেই বিখ্যাত ২২১ ওভালেই। চতুর্থ ইনিংসে ৪৩৮ টার্গেটের সামনে ভারতীয় রান তাড়া থামে ৪২৯-৮ স্কোরে। অবিশ্বাস্য জয়ের চৌকাঠে পৌঁছেও মাত্র ৯ রানের জন্য আটকে যায় ভারত। না হলে ১৯৭১-এর ওয়াড়েকরের দলের মতো ১৯৭৯-তে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারত বেঙ্কটরাঘবনের ভারতও।

পরিসংখ্যান যদিও আতঙ্ক বাড়িয়ে বলছে, ওভালে ভারতের সাফল্য বলতে থেকে গিয়েছে সেই একাত্তরের জয় আর চন্দ্রের ভেল্কি। আর কখনও জেতেনি কোনও ভারতীয় দল। বাকি বারোটি টেস্টের মধ্যে সব হার, নয়তো ড্র। শেষ বারেও এখানে রুটের ইংল্যান্ডের কাছে কোহালিরা হেরেছেন ১১৮ রানে। শেষ তিনটি টেস্টই হেরেছে। ঐতিহাসিক বিজয় অভিযানের মাঠই যে রক্তাক্ত করে রেখেছে দুঃস্বপ্নের কাঁটায়!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement