Cristiano Ronaldo

Messi vs Ronaldo: আগে মেসি, পিছে রোনাল্ডো, দলবদলেও দুই নায়কের নাটকীয় দৌড়

একই বছরে মেসি এবং রোনাল্ডোর ক্লাব বদল ভবিষ্যতে আর কোনওদিন দেখা যাবে বলে মনে হয় না।

Advertisement

অভীক রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২১ ১৬:৪৭
Share:

ফের মেসি-রোনাল্ডো যুদ্ধ? গ্রাফিক: সনৎ সিংহ

মাঝে মাত্র সপ্তাহদুয়েকের ব্যবধান। দুটো তোলপাড় করা ঘটনার সাক্ষী থাকল ফুটবলবিশ্ব। ছোটবেলার ক্লাব বার্সেলোনা ছেড়ে প্রেমের শহর প্যারিসে পাড়ি দিলেন লিয়োনেল মেসি। তার কয়েক দিন পরেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোও নিজের আস্তানা বদলালেন। তুরিন থেকে তিনি এখন ম্যাঞ্চেস্টার-নিবাসী, যে শহর তাঁর অতি পরিচিত। অন্যদিকে, প্যারিসও মেসির কাছে নতুন নয়। এ শহরে তাঁকে আগে বার বার আসতে হয়েছে বিশ্বসেরা ফুটবলারের পুরস্কার নিতে। কিন্তু এক সপ্তাহ আগেই যাঁর জুভেন্টাসে থাকা নিশ্চিত ছিল, সেই রোনাল্ডো রাতারাতি এ ভাবে দল বদলালেন কেন? সেটাও কি মেসিকে দেখে? জুভেন্টাসে সে ভাবে নজরে পড়বেন না ভেবেই কি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন রোনাল্ডো? শুক্রবারের পর থেকে উঠছে একের পর এক প্রশ্ন। অনুরাগীরা সেই পুরনো মেসি-রোনাল্ডো যুদ্ধের গন্ধই আবার পাচ্ছেন।

Advertisement

আন্তর্জাতিক ফুটবলে ২০২১ বিখ্যাত হয়ে থাকবে অনেক কারণে। মেসির হাতে প্রথম আন্তর্জাতিক ট্রফি ওঠা তো আছেই। পাশাপাশি একই বছরে মেসি এবং রোনাল্ডোর ক্লাব বদল ভবিষ্যতে আর কোনও দিন দেখা যাবে বলে মনে হয় না। দু’জনেই কেরিয়ারের শেষ বেলায় এসে পৌঁছেছেন। রোনাল্ডোর হাতে সময় আরও কম। কারণ তিনি বয়স অনুপাতে মেসির ‘দাদা’। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডেই হয়তো তাঁর ফুটবল জীবনের শেষ অধ্যায় লেখা হয়ে যাবে। আর্জেন্টিনীয় ফুটবলারও হয়তো তাঁর বাঁ পায়ের শিল্পকলার শেষ ছাপ রেখে যাবেন ভাস্কর্যের শহরে।

তবে একটি ব্যাপারে দু’জনের মিল রয়েছে। এ বার দু’জনের দলবদলই আকস্মিক। প্রাক্তন ক্লাব সভাপতির সঙ্গে মেসির বিবাদ থাকলেও নতুন সভাপতির সঙ্গে মেসির মধুর সম্পর্ক ছিল। চুক্তি সই প্রায় পাকা। আচমকাই জানা গেল, নিয়মের ফাঁদে বার্সেলোনা তাঁকে রাখতে পারছে না। দাবানলের মতো খবর ছড়িয়ে পড়ামাত্রই বার্সেলোনা সমর্থকদের মাথায় বাজ ভেঙে পড়ল। শেষ সাংবাদিক বৈঠকে চোখের জলে ভাসলেন মেসি। দু’দিন পরেই দেখা গেল হাসিমুখ। নতুন অনুরাগী, নতুন ভক্তদের অভ্যর্থনা সাদরে গ্রহণ করলেন। বার্সেলোনা তত দিনে অতীত।

Advertisement

তবে রোনাল্ডোর দলবদল পুরোটাই নাটকীয়তায় মোড়া। মরসুমের শুরুতে সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। সতীর্থদের সঙ্গে দিব্যি হাসিমুখে অনুশীলন করছিলেন। আচমকাই প্রথম ম্যাচের আগে কোচকে তিনি জানিয়ে দেন তাঁকে দলে না রাখতে। কারণ, এই দলে তিনি নিজের ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছেন না! রোনাল্ডোর ইচ্ছেকে অগ্রাহ্য করার সাহস কোন কোচের রয়েছে? যথারীতি প্রথম ম্যাচে দেখা গেল না তাঁকে। দ্বিতীয় ম্যাচে ফের নাটক। দ্বিতীয়ার্ধের অতিরিক্ত সময়ে জয়সূচক গোল করে জার্সি খুলে তুমুল উচ্ছ্বাস করলেন। সমর্থকদের ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন, আমি তোমাদের সঙ্গে আছি। বাধ সাধলেন রেফারি। গোল বাতিল। মুখ ঢাকলেন রোনাল্ডো। তখনও বোঝা যায়নি এটা তাঁর ইটালীয় ক্লাবের হয়ে শেষ ম্যাচ হতে চলেছে।

দল পাল্টাতে গিয়েও মেসির সঙ্গে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতা সামনে চলে এল। জুভেন্টাস ছাড়তে এতটাই উদগ্রীব ছিলেন রোনাল্ডো যে, একাধিক ক্লাবের কাছে প্রস্তাব পাঠাতে শুরু করেন। প্রথমেই প্রস্তাব যায় রিয়াল মাদ্রিদের কাছে। রিয়াল সটান খারিজ করে দেয়। মুখের উপর এই অপমান বোধহয় সহ্য হয়নি পর্তুগিজ তারকার। সটান নেটমাধ্যমে লম্বা পোস্টে জানিয়ে দিলেন, তাঁকে নিয়ে অহেতুক জলঘোলা করা হচ্ছে। এরপরেই প্রস্তাব গেল প্যারিস সঁ জঁ-র কাছে। কিন্তু মেসিকে নিয়ে তাঁদের সব স্বপ্ন পূরণ হয়ে গিয়েছে। তারাও আমল দেয়নি। বাধ্য হয়ে তিনি ম্যাঞ্চেস্টার সিটির দ্বারস্থ হলেন। কারণ রোনাল্ডোকে দেওয়ার মতো অর্থ এবং ইচ্ছে তাদের কাছেই ছিল।

ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে ছ’বছর জীবনের সোনালি সময় কাটিয়েছিলেন রোনাল্ডো। রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাসের হয়ে খেলতে এসেও ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে বীরের সম্মান পেয়েছেন। কিন্তু যে ক্লাবে তাঁকে এখনও ভগবানের মতো পুজো করা হয়, তাদেরই চিরশত্রু ক্লাবে তিনি যোগ দেবেন, এটা ভাবতে পারেননি তাঁর অতি বড় সমর্থকও। প্রতিবাদ তো ছিলই, রোনাল্ডোর জার্সিও পোড়াতে শুরু করলেন তাঁর অনুরাগীরা। শেষ মুহূর্তে যে রোনাল্ডো পুরনো ক্লাবে যোগ দিলেন তার পিছনে একটা মানুষই দায়ী, স্যর অ্যালেক্স ফার্গুসন, যাঁকে রোনাল্ডো তাঁর ‘দ্বিতীয় বাবা’ বলতে দ্বিধা করেন না।

সাফল্যের জন্য রোনাল্ডো এতটাই মরিয়া যে চিরশত্রু ক্লাবে যেতেও তিনি দু’বার ভাবেননি। তাঁর এজেন্টের মারফত নিয়মিত যোগাযোগ চালিয়ে গিয়েছেন। পেশাদারিত্ব, আবেগ ততক্ষণে ব্যাকফুটে। চোখে তখন একটাই স্বপ্ন, ভাল ক্লাবে, ভাল লিগে খেলা। জুভেন্টাসে যে তাঁর ভবিষ্যৎ নেই, সেটা গত মরসুমের শেষেই বুঝে গিয়েছিলেন রোনাল্ডো। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার জন্য তাঁকে আনা হয়েছিল ক্লাবে। কিন্তু গত তিন বছরে তার ধারেকাছে যেতে পারেনি তারা। ঠিক এই একই সমস্যায় পড়েছিলেন মেসিও। তিনি ক্লাব বদলাতেই সঙ্গে সঙ্গে ক্লাব বদলালেন রোনাল্ডোও। মুখে না বললেও তিনি যে মেসিকে ধাওয়া করছেন এটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। রোনাল্ডো ভালই জানেন, যত দিন খেলবেন, তত দিন মেসির সঙ্গে তুলনা হয়েই যাবে। তাই চ্যালেঞ্জটা হয়তো তিনি ভাল ভাবেই গ্রহণ করতে চাইছিলেন।

হবে না-ই বা কেন! এতদিন ধরে মেসির বিরুদ্ধে মাত্র দুটি পরিসংখ্যানেই এগিয়ে ছিলেন রোনাল্ডো। একটি হল আন্তর্জাতিক ট্রফি জেতা। অন্যটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার সংখ্যা। আন্তর্জাতিক ট্রফি এ বারই মেসি পেয়ে গিয়েছেন। প্যারিস সঁ জঁ-য় গিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের ক্ষেত্রেও রোনাল্ডোকে ছুঁয়ে ফেলবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া, আয়ের দিক থেকে এখনও মেসি পর্তুগিজ তারকার থেকে অনেক এগিয়ে। সেই ব্যবধান আরও বাড়বে, কারণ জুভেন্টাসের থেকে কম বেতনে রোনাল্ডো ম্যান ইউতে যোগ দিয়েছেন। এ ছাড়াও, মেসির ছ’টি ব্যালন ডি’ওর রয়েছে। রোনাল্ডোর পাঁচটি। এ বারও ব্যালন ডি’ওর জেতার দৌড়ে মেসিই এগিয়ে। ফলে এই ব্যবধানও ঘোচাতে চাইবেন রোনাল্ডো। হাতে সময় কম। তাই হয়তো প্রথম সারির একটা ভাল ক্লাবে আসা ছাড়া উপায় ছিল না তাঁর কাছে।

এখন শুধু মেসি-রোনাল্ডো যুদ্ধের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হওয়ার অপেক্ষা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement