বিশ্ব ব্যাডমিন্টনের ফাইনালে উঠেছেন শ্রীকান্ত ফাইল চিত্র।
চীনের প্রাচীর ভেঙেছিলেন ২০১৪ সালে। দু’বার অলিম্পিকে সোনা জয়ী এবং পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন চীনের লিন ডানকে স্ট্রেট গেমে হারিয়েছিলেন। এ বার আর এক নজির গড়লেন ভারতের ব্যাডমিন্টন তারকা কিদাম্বি শ্রীকান্ত। ভারতের প্রথম পুরুষ ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্ব ব্যাডমিন্টনের ফাইনালে উঠেছেন তিনি। পরিবার চায়, ফাইনালে নিজের সেরাটা দিক শ্রীকান্ত। তবে তাঁরা আলাদা করে কোনও পরামর্শ দেননি তাঁকে। বাড়িতে কারও সঙ্গে খেলা নিয়ে যে কথাই হয় না ছোট ছেলের।
এ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অবশ্য ইন্দোনেশিয়ার বেশির ভাগ খেলোয়াড় অংশ নেননি। চোটের কারণে নেই গত বারের চ্যাম্পিয়ন তথা বিশ্বের দু’নম্বর কেন্টো মোমোতা। ফলে লড়াই হয়তো কিছুটা সহজ হয়েছে। তাতে অবশ্য শ্রীকান্তের সাফল্যকে কোনও অংশেই খাটো করা যায় না।
গুন্টুরের এক কৃষক পরিবার থেকে উঠে এসে বিশ্ব ব্যাডমিন্টনের ফাইনালে ওঠা সহজ ব্যাপার নয়। কেভিএস কুট্টির দুই ছেলেই ছোট থেকে ব্যাডমিন্টন খেলতেন। দাদা নন্দগোপালের সঙ্গে বাড়ির বাইরেই চলত শ্রীকান্তের খেলা। খেলার প্রতি তাঁদের আগ্রহ দেখে দুই ছেলেকে তিনি জোর করেই পাঠিয়ে দেন বিশাখাপত্তনমে অন্ধ্রপ্রদেশ স্পোর্টস অ্যাকাডেমিতে। সেখান থেকে বছর খানেক পরে নন্দগোপাল প্রথমে ভর্তি হন পুল্লেলা গোপীচন্দের অ্যাকাডেমিতে। দাদার মুখে ভাইয়ের কথা শুনে শ্রীকান্তকেও ডেকে নেন গোপী। তিনিই ঠিক করে দেন নন্দগোপাল ডাবলস ও শ্রীকান্ত সিঙ্গলস খেলবে। সেই শুরু। বাকিটা ইতিহাস।
কোচ গোপীচন্দের সঙ্গে শ্রীকান্ত ফাইল চিত্র
শ্রীকান্তের বেড়ে ওঠা নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনকে নন্দগোপাল বললেন, ‘‘আমি ২০০২ সালে খেলা শুরু করি। শ্রীকান্ত ২০০৪ সালে। দু’জনেই গোপীচন্দের ছাত্র।’’ তবে ছোটবেলায় এক বার ভাইরাল জ্বর হয়েছিল শ্রীকান্তের। শরীর খুব খারাপ হয়ে যায়। সেখান থেকে সুস্থ হয়ে ফের খেলা শুরু করেন তিনি।
বাইরের দুনিয়ার কাছে তারকা হলেও ঘরে কিন্তু তারকাসুলভ কোনও আচরণ নেই শ্রীকান্তের। নন্দগোপাল বলেন, ‘‘শ্রীকান্ত খুব সাধারণ একটা ছেলে। কোনও দিন নেটমাধ্যমে খেলার বাইরে কিছু লেখে না। কোনও বিতর্কে জড়ায় না। পার্টিতে যায় না। ওর সঙ্গে কথা বললে বুঝতে পারবেন ও কেমন ছেলে। আমরা কোনও দিন ব্যাডমিন্টন নিয়ে কথা বলি না। এমনকি এক বছরে চারটে সুপার সিরিজ জেতার পরেও তাতে কোনও বদল হয়নি।’’
বাবা-মায়ের সঙ্গে শ্রীকান্ত ফাইল চিত্র
তা হলে বাড়িতে থাকলে কী করেন দু’ভাই। দাদা নন্দগোপাল বললেন, ‘‘আমরা বাবা-মার সঙ্গে সময় কাটাই। আমাদের চারটি পোষ্য রয়েছে। এক সঙ্গে গেম খেলি।’’ বাড়িতে থাকলে অনেকটা সময় নাকি স্রেফ ঘুমিয়েই কাটিয়ে দেন শ্রীকান্ত।
কিন্তু কোর্টে সম্পূর্ণ আলাদা ছবি। অনুশীলনে কোনও খামতি রাখেন না শ্রীকান্ত। হই হুল্লোড় করে সময় নষ্ট করেন না। খুব বেশি কারও সঙ্গে দেখাও করেন না শ্রীকান্ত। কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে নিজেকে তৈরি করেন বিশ্বের প্রাক্তন এক নম্বর।
দাদা নন্দগোপালের সঙ্গে শ্রীকান্ত ফাইল চিত্র
শনিবার সেমিফাইনালে বঙ্গসন্তান লক্ষ্য সেনকে ১৭-২১, ২১-১৪, ২১-১৭ পয়েন্টে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছেন শ্রীকান্ত। রবিবার ভারতীয় সময় সন্ধেয় সিঙ্গাপুরের লোহ কিয়ান ইয়ুর বিরুদ্ধে খেলতে নামবেন তিনি। গোটা দেশের নজর সে দিকে। ইতিহাসের দোরগোড়ায় তিনি। কোর্টে নামার সময় তাঁর কানে নিশ্চয় বাজবে বাবা, মা, দাদার সেই কথা, ‘‘নিজের সেরাটা দাও। তা হলেই ....’