আনন্দ।
চৌষট্টি খোপের সাদা-কালো যুদ্ধক্ষেত্র প্রস্তুত। রাত পোহালেই কৃষ্ণ সাগর সৈকতে অলিম্পিক মিডিয়া সেন্টারে শুক্রবার দাবার বিশ্ব খেতাবি লড়াইয়ের ড্র নির্ধারণ। যে লড়াইয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ম্যাগনাস কার্লসেনের চ্যালেঞ্জার পাঁচ বারের প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারতীয় সুপার গ্র্যান্ডমাস্টার বিশ্বনাথন আনন্দ। শনিবার সাদা ঘুটিতে প্রথম গেমের প্রথম চাল দেওয়ার সৌভাগ্য কার হবে তা জানা যাবে কালই।
চুলোয় যাক সেই জানা। চূড়ান্ত দাবা-যুদ্ধের তাত্পর্যে সেটুকু তথ্য সামান্যই। সোচি এ বছরই শীতকালীন অলিম্পিক প্রত্যক্ষ করেছে। কিন্তু মাস কয়েকের মধ্যেই দাবার মতো একটা আপাদমস্তক ইন্ডোর গেম এই রুশ শহরকে যে রকম গরগরে করে তুলেছে, তাতে অনেকে মনে করছেন, নভেম্বরে এখানকার গড়পরতা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে চলতি মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত এ বার হয়তো বেশি মনে হতে পারে!
নিজের শহর চেন্নাইয়ে গত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে কার্লসেনের বিরুদ্ধে একটাও গেম জিততে না পেরে আনন্দ শেষমেশ ৩.৫-৬.৫ পয়েন্টে হেরে নিজের বিশ্ব খেতাবের মুকুট নতুন ব্রহ্মাণ্ড-চ্যাম্পিয়নের মাথায় পরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। নিজের প্রায় অর্ধেক বয়সি সেই কার্লসেনের মুখোমুখি হওয়ার প্রাক্কালে চুয়াল্লিশ বছরের চ্যালেঞ্জার আনন্দ এ বার স্বভাববিরুদ্ধ ভাবে আক্রমণাত্মক। “চেন্নাই ক্লোজড্ চ্যাপ্টার। যে চ্যাপ্টার থেকে যা শেখার শিখে বইটা বন্ধ করে দিয়েছি।”
পাল্টা কার্লসেনও কম যাচ্ছেন না। “মানসিক ভাবে ভিশির চেয়ে সুবিধেজনক জায়গায় থাকব এ বার। কারণ এ বার ওকে আরও ভাল ভাবে চিনি আমি।”
খেতাবি লড়াই ঘিরে উত্তাপ সোচিতেও। প্রস্তুতির ফাঁকে হাল্কা মেজাজে কার্লসেন নিজেই টুইট করলেন ছবি।
যদিও নাইজেল শর্টের মতো বিদগ্ধ গ্র্যান্ডমাস্টার নিজের কলামে লিখেছেন, “এ ধরনের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ রিম্যাচ আগের বারের জয়ীর ভেতর একটু হলেও নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করে। যে জন্য কাসপারভ পাঁচ বার করপোভের সঙ্গে খেতাবি লড়াইয়ের আগে মন্তব্য করেছিল, কীসের জন্য এই লোকটার বিরুদ্ধেই আমাকে আবার খেলতে হচ্ছে! কার্লসেনেরও তেমন মনে হলে অবাক হব না। এই রিম্যাচটায় কার্লসেনের অ্যাডভান্টেজ কেবল একটাই— আগের বার ও আনন্দকে হারিয়েছে। ব্যাস।”
আনন্দ বিশ্ব খেতাব হারানোর পরের বারই খেতাবি লড়াইয়ের চ্যালেঞ্জার হতে পেরেছেন, বিশ্ব দাবার সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা ফিডের নিয়মে ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্টের জয়ী হিসেবে। মাস কয়েক আগে যে টুর্নামেন্ট জিতে আনন্দের মন্তব্য ছিল, “ব্যাপারটা বাস্তবে ঘটানো আমার কাছে স্বপ্নের অতীত ছিল!”