বিশ্বকাপে আজ পর্যন্ত পাকিস্তানের কাছে তো ভারত হারেনি!
শুক্রবার রাতে আমাদের ক্যাপ্টেন শাহিদ আফ্রিদির সঙ্গে শেষ বার কথা বলার সময় প্রসঙ্গটা তুলেছিলাম। আফ্রিদি তখন আশ্বস্ত করে বলেছিল, এ বার ইডেনে একটা অন্য রকম কিছু হবে। বিশ্বকাপে ভারত-পাক ম্যাচ রিপোর্ট তোমাদের এ বার অন্য ভাবে লিখতে হবে।
চব্বিশ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই দেখছি সেই আশ্বাস কতটা ফাঁপা। সেই এক জিনিস! বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সামনে ভারত মানেই লজ্জার হারের বোঝা কাঁধে ভাঙা মন নিয়ে হোটেলে ফেরা।
বিশ্ব ওয়ান ডে আর টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে স্কোরলাইনটা ভারতের পক্ষে ১১-০ হয়ে গেল। সেই ১৯৯২ সিডনি থেকে শুরু। তার পর একে একে বেঙ্গালুরু, ম্যাঞ্চেস্টার, সেঞ্চুরিয়ন পার্ক, জোহানেসবার্গ, মোহালি, অ্যাডিলেড হয়ে শনিবার কলকাতা। বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান মানেই সেই একই ব্যর্থতার কাহিনি বারবার লিখতে হয় আমাদের।
অথচ এ বার পরিস্থিতি কিন্তু ভারতের চেয়ে পাকিস্তানের অনুকূলে ছিল। গোটা ভারতে যখন পাকিস্তানের খেলা নিয়ে উত্তেজনার চোরাস্রোত তখন ওয়েস্ট বেঙ্গলের চিফ মিনিস্টার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সৌজন্যে সেই চাপের পরিবেশ কলকাতায় পা দিয়ে পায়নি পাকিস্তান দল। বাংলাদেশকে হারিয়ে যখন চনমনে মেজাজে পাকিস্তান তখন নিউজিল্যান্ডের কাছে প্রথম ম্যাচ হেরে রীতিমতো চাপে ছিল ধোনির ভারতই। কিন্তু সেই ফায়দা আমাদের ক্যাপ্টেন তুলতে তো পারলই না। উল্টে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতে যতটা আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পেরেছিল টিমটা, তারাই ভারতের বিরুদ্ধে সম্মানের ম্যাচ হেরে ফের হয়তো নেতিয়ে পড়ল। জানি না এর পর বাকি টুর্নামেন্টে কী করবে?
অথচ পাক আওয়ামের কাছে হিরো হয়ে যাওয়ার মঞ্চ ছিল আজ আফ্রিদিদের। কিন্তু আমাদের ক্যাপ্টেন সেই মঞ্চকেই ওয়াটারলু বানিয়ে দিল। ইমরান খান, ওয়াসিম আক্রমের মতো বিখ্যাত পাক অধিনায়কেরা মাঠে বসে ম্যাচ দেখছে। ইমরান টিম হোটেলে গিয়ে পেপটক পর্যন্ত দিয়ে এল। তার পরেও ভারত ম্যাচে আফ্রিদির টিমের ঘুম ভাঙে না। একই ভুল বারবার করেই যায়। অথচ, ম্যাচের পর বিরাট কোহালি কী সুন্দর টিভিতে বলে গেল, সচিনকে গ্যালারিকে দেখেই লড়াইয়ের প্রেরণা পেয়ে গিয়েছিল ও।
আমার মতে, এটাই ফারাক গড়ে দিয়ে গেল ইডেনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের প্রথম জয়ে।
সোজা কথা, ভারতের মতো কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এত ভুল করলে ম্যাচ বার করা যায় না। বাঁ-হাতি স্পিনার ইমাদ ওয়াসিম আগের কয়েকটা ম্যাচে ভাল পারফর্ম করেছিল। পাক ক্যাপ্টেন প্রথম ভুলটা করল টিম বাছতে গিয়েই। ইমাদকে বাদ দিয়ে ও নিল পেসার মহম্মদ সামিকে। আবার সামি পরপর দু’বলে উইকেট তোলা সত্ত্বেও ওকে দু’ওভারের বেশি বল করাল না। কোনও মতেই এই ম্যাচে আফ্রিদির চার পেসার নিয়ে নামা সমর্থন করতে পারছি না। নাগপুরে যেমন ধোনি উইকেট বুঝতে ভুল করেছিল, এ দিন আমাদের ক্যাপ্টেন তেমনই ইডেনের পিচ ‘রিড’ করতে পারেনি।
পিচে তেমন কোনও জুজু ছিল না। তাও ১১৮-র বেশি তুলতে পারল না পাকিস্তান। ওভার তো কমেছিল মোটে দু’টো। মহম্মদ হাফিজ ফর্মে। সে কিনা নামছে সাত নম্বরে। এই ভুল করলে আর যার বিরুদ্ধেই হোক না কেন ভারতের বিরুদ্ধে জেতা যায় না।
বিরাট কোহালিকে দেখুন। প্রত্যেক দিন উন্নতি করে যাচ্ছে। প্রফেশনালিজম বলুন, অ্যাটিটিউড— সবেতে চ্যাম্পিয়ন। ওকে যত দেখি তত মুগ্ধ হয়ে যাই। বারবার ছেলেটা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভেলকি দেখাচ্ছে। অথচ আমাদের ক্যাপ্টেন জানেই না কী ভাবে ওকে থামাবে। না হলে ২৩-৩ হয়ে গিয়ে ভারত যখন কাঁপছে, ইমরান-আক্রমরা হলে ভারতকে এই জায়গা থেকে পিষে ফেলত। সেখানে বিরাট ওর একার ক্যারিশমায় ফের ম্যাচ বার করে নিয়ে চলে গেল।
গত পাঁচ দিনে ইডেনে সাংবাদিক, নিরাপত্তারক্ষী অনেকের সঙ্গেই ভাল মতো বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে। তাঁদের অনেকে জানতে চাইছিলেন—টুর্নামেন্টে এর পর পাকিস্তানের আর আশা রইল কি না। সোজা কথায়, ভারত ম্যাচ হারার পর পাকিস্তানের টুর্নামেন্ট জেতার আশা ক্ষীণ বলতে হবে। সামনে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড। আফ্রিদির দলকে এই সব ভুলভ্রান্তি সরিয়ে এক্সট্রা অর্ডিনারি ক্রিকেট খেলতে হবে। সেমিফাইনাল উঠতে। এর বেশি এখন কিছু ভাবতে পারছি না।