বিধ্বংসী বিরাট।
সময়ের ফলকে নিজেকে কিংবদন্তির পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে বিরাট কোহালি। ওর মাথার ভেতর ঢোকা তো আর সম্ভব নয়! কিন্তু তবু এটা অন্তত বোঝা যায় যে, বিরাটের মস্তিষ্ক এক কথায় ‘বিউটিফুল মাইন্ড’— যাতে কল্পনাশক্তির সঙ্গে রয়েছে শৃঙ্খলা। যার ফলে ওর মন আর দেহ একই ছন্দে চলে।
একজন বোলার ঠিক করতে পারে বলটা কী ভাবে করবে। কিন্তু কোহালি জানে সেই বলটা তার পর কোথায় যাবে। ওরা কি জানে না যে, ডিপ মিড উইকেট বা লং অন দিয়ে বল মাঠের বাইরে পাঠানো বিরাটের খুব পছন্দের? জানে না কি যে, এক্সট্রা কভারের উপর দিয়ে বল তুলে দিয়ে মাঠ পার করতে ভালবাসে বিরাট? কিন্তু সব জেনেও ওরা বিরাটকে ঠিক খাদ্য (পড়ুন রান) জুগিয়ে যায়। সব ক্যামেরাম্যান ওই জায়গাগুলোতেই দিনের সেরা ছবি পেতে এখন ভিড় করে। দর্শকরাও ম্যাচ চলাকালীন ওই ফায়ারিং জোন ফাঁকা করে দেয়।
কয়েকটা ক্যাচ ধরা হলেও বেশির ভাগ সময়ই বোলারদের মোহিত হয়ে দেখতে হয়। কোচরাও সাহায্য করতে পারে না বোলারদের। মাঠের মালিরাও পিচ খারাপ করতে পারে না। বিপক্ষ অধিনায়করা আবেদন করতে পারে আউটফিল্ডে পাঁচ জনের বেশি ফিল্ডার রাখার জন্য। এমনকী আরসিবি ডাগআউটেও ব্যাটসম্যান আগে থেকে প্যাড পরে বসে থাকে না এই সময়।
বিরানব্বইয়ের সচিন, পারথে সেঞ্চুরির পর।
ল অব অ্যাভারেজ, লেগ বিফোর উইকেট ক্রিকেটের নিয়মে রয়েছে। কিন্তু এ সবের বাইরে একটা আইপিএল মরসুমে চারটি সেঞ্চুরি করে কোহালি ক্রিকেটে আমাদের নতুন ব্যাকরণ শেখাচ্ছে।
এবি ডে’ভিলিয়ার্স বা ক্রিস গেইলকে কোনও রকম অসম্মান না করেই বলতে পারি, নিজের কাঁধে টিমকে অনেক দূর টেনে নিয়ে এসেছে বিরাট। আর সেটা আরও ভাল বোঝা যায় বিরাট আউট হলে। কারণ তখনই আরসিবি নড়বড়ে হয়ে পড়ে। তখন বিরাটের টিম যেন সম্মোহিতের মতো আচরণ করে। বিরাট আউট হওয়ার পর যে ব্যাটসম্যান ক্রিজের দিকে এগোয়, সে-ও তখন কেমন যেন স্লো মোশনে মাঠে ঢোকে।
এ রকম সাফল্যের সরণি একজন ক্রিকেটারের জীবনে বিরল। যে রকম ১৯৭৬-এ ইংল্যান্ডে ভিভ রিচার্ডস, ২০০১-এ মুরলীধরনের বিরুদ্ধে ব্রায়ান লারা, ১৯৯২-এ অস্ট্রেলিয়ার পিচে অনভিজ্ঞ সচিন তেন্ডুলকরকে মনে করায়।
কোহালি সেই সব পুরনো স্মৃতির কোলাজ ফের তুলে ধরছে। একে জিনিয়াস না বলে আর কী বলা যায়! আরসিবি প্লে অফে যাবে কি না তা জানা নেই। তবে বিরাট কোহালি কিন্তু একা হাতে এই আইপিএলটাকে আলোকিত করে তুলেছে।
(টিসিএম)