ফাইল চিত্র।
ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকদের কাছে তাঁর বিশেষ জনপ্রিয়তা নেই। বরং নানা বিতর্কিত মন্তব্য করে ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের সমালোচনার তিরে বিদ্ধ হয়েছেন তিনি। সেই অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক টিম পেনের মুখে শোনা গিয়েছে এ বার অন্য কথা। পেন মেনে নিয়েছেন, বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানের নাম বিরাট কোহালিই।
অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ‘গিলি অ্যান্ড গস’ অনুষ্ঠানে এসে পেন বলেছেন, ‘‘কোহালি হল এমন এক জন ক্রিকেটার, যাকে আপনি সব সময় দলে চাইবেন। ও দারুণ লড়াকু। বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান।’’ তবে পেন এটাও বলেছেন, প্রতিপক্ষকে বিরক্ত করে মারতে ভারত অধিনায়কের জুড়ি নেই। অস্ট্রেলিয়ার মাঠে ২০১৮-২০১৯ সিরিজে তাঁদের দু’জনের মধ্যে যে ঝামেলা হয়েছিল, তার কথাও বলেছেন স্টিভ স্মিথদের টেস্ট দলের অধিনায়ক।
ওই অনুষ্ঠানে পেন এও বলেছেন, ‘‘কোহালির বিরুদ্ধে খেলাটা সব সময় একটা বড় পরীক্ষা। ও যতটা ভাল ক্রিকেটার, ততটাই কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী। যে সব সময় আপনাকে চাপে রেখে যাবে, বিরক্ত করে মারবে।’’ ২০১৮-২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটি থেকে কোহালির নেতৃত্বে প্রথম টেস্ট সিরিজ জিতে ফেরে ভারত। ওই সিরিজে অনেকবারই দুই অধিনায়ককে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে দেখা গিয়েছিল। কোহালি বনাম পেনের ওই দ্বৈরথ নিয়ে প্রচার মাধ্যমেও কম লেখালেখি হয়নি। যা নিয়ে পেন এখন বলেছেন, ‘‘চার বছর আগে আমার সঙ্গে ওর ঝামেলা হয়েছিল ঠিকই। তবে এটাও বলব, কোহালি হল এমন এক জন ক্রিকেটার, যাকে আমি সব সময় মনে রাখব।’’
কোহালির দলের কাছে সিরিজ হারের পরে এই বছরে অজিঙ্ক রাহানের ভারতও সেই ২-১ ফলে টেস্ট সিরিজ জিতে ফিরেছে অস্ট্রেলিয়া থেকে। যার পরে পেন অজুহাত দিয়েছিলেন, ভারতীয় দল মাঠের বাইরের জিনিস নিয়ে নাটক করে তাঁদের মনযোগ অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিল। পেনের এই মন্তব্যের পরে ফেসবুক-টুইটারে ভারতীয় সমর্থকদের ক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। যা নিয়ে অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক বলেছিলেন, ‘‘ভারতীয় সমর্থকদের আবেগটা আমি খুব পছন্দ করি। আর ওদের এই সব সমালোচনা তো আমার প্রাপ্যই।’’
পেন এও জানিয়েছেন, সে দিন তাঁর পুরো বক্তব্যকে তুলে ধরা হয়নি। অস্ট্রেলীয় টেস্ট অধিনায়কের ব্যাখ্যা, ‘‘আমি কিন্তু এও বলেছিলাম, ভারত আমাদের সব বিভাগেই উড়িয়ে দিয়েছে। যোগ্য দল হিসেবেই ওরা সিরিজ জিতেছিল। আমার বক্তব্যের এই অংশটা বাদ পড়ে যায়।’’ যোগ করেন, ‘‘এর পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতীয় সমর্থকেরা আমাকে আক্রমণ করে চলেছে। ওরা বলছে, আমি হারের অজুহাত দিচ্ছি। যাই হোক, সব কিছুই মজা হিসেবে দেখছি।’’
পুরো শক্তির দল নিয়েও চোট-আঘাতে জর্জরিত ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ হারের পরে পেনের নেতৃত্ব কাঠগড়ায় উঠেছে। তাঁর অপসারণের দাবি তুলেছেন অনেকেই। ভারতের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলীয়দের রণনীতিতে কী ভুল ছিল, তার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্টিভ ওয়ের মতো কিংবদন্তি অধিনায়ক। স্টিভ মনে করেন, ভারতের বিরুদ্ধে কোনও দ্বিতীয় পরিকল্পনা ছিল না পেনের।
স্টিভ ওয় বলেছেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়া দলে চার জন দারুণ বোলার আছে। প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, জস হেজ্লউড এবং নেথান লায়ন। যে কারণে ধরে নেওয়া হয়, এরাই বিপক্ষকে আউট করে দেবে। কিন্তু সেটা যখন না হয়, তখন ‘প্ল্যান বি’-র প্রয়োজন হয়। যেটা দেখা যাচ্ছে না।’’ ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজের উদাহরণ দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বজয়ী অধিনায়ক বলেছেন, ‘‘লায়নকে ওই সিরিজে কখনও কখনও ৩০-৪০ ওভার পর্যন্ত করতে হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে বল করলে এক জন বোলারের বিরুদ্ধে ব্যাটসম্যানদের মানিয়ে নিতে সমস্যা হয় না। আমার মনে হয়েছে, কোনও কোনও সময় লায়নকে দিয়ে টানা বেশি বল করানো হয়েছে।’’
সে ক্ষেত্রে কী করা উচিত ছিল? স্টিভের পরামর্শ, অফস্পিনার লায়নকে বিশ্রাম দিয়ে মাঝে মাঝে অনিয়মিত লেগস্পিনার মার্নাস লাবুশেনকে বোলিং দেওয়া যেতে পারত। স্টিভের কথায়, ‘‘মার্নাসকে বোলার হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় না। কিন্তু আমার মনে হয়, ও মাঝে মাঝে বল করলে লায়ন বিশ্রাম পাবে আর উইকেটও পড়তে পারে।’’