ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজে স্লেজিং শিরোনাম পাচ্ছে, এটা দেখে আবার অবাক হওয়ার কী আছে? কবে আর এই দু’দেশের মধ্যে ক্রিকেটীয লড়াইয়ে সৌজন্য দেখা গিয়েছে?
সেই মেলবোর্নে সুনীল গাওস্কর বনাম ডেনিস লিলির ঘটনা। যখন ব্যাটে লাগার পরেও এলবিডব্লিউ দেওয়া হল বলে সানি ম্যাচই বয়কট করে দিচ্ছিল। সঙ্গী ওপেনার চেতন চৌহানকে নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল মাঠ থেকে। অথবা ২০০১ সালের ঐতিহাসিক সিরিজে স্টিভ ওয় বনাম সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ইডেনে স্টিভকে টসের জন্য দাঁড় করিয়ে রাখল সৌরভ। তার পর গোটা সিরিজ ধরে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিই চলল।
আমার মনে হয়, দু’টো দল মুখোমুখি হলে কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে চায় না। এখন দু’টো দলের মধ্যে দক্ষতার ব্যবধান আরও কমেছে বলে বাগ্যুদ্ধের তীব্রতা আরও বেড়ে গিয়েছে। তবে নিজের ক্রিকেট জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এখনকার দিনের চেয়ে আগে অনেক বেশি স্লেজিং হতো। এখন টিভি ক্যামেরা এসে গিয়েছে। স্টাম্প মাইক্রোফোন লাগানো থাকে। খুব সহজেই মাঠে বলা কথা এই মাইক্রোফোনে ধরা পড়ে যায়। তাতে আইসিসি আচরণবিধি অনেক কঠোর হয়ে গিয়েছে। ম্যাচ রেফারি পরে শুনতে পেলেও শাস্তি দিতে পারে।
এই তো কয়েক দিন আগে ফ্যাফ ডুপ্লেসি যে বল বিকৃতির জন্য শাস্তি পেল, সেটা তো ম্যাচ চলাকালীন আম্পায়ার রিপোর্টই করতে পারেনি। টিভি-তে পরে দেখানোয় আইসিসি শাস্তি দিল। সে রকম কিছু যে কোনও সময়ে ঘটতে পারে। আমরা যখন ক্রিকেট খেলেছি, তখন টিভি ছিল না। ক্যামেরা ছিল না। স্টাম্প মাইক্রোফোন ছিল না। থাকলে তো জাভেদ মিয়াঁদাদ প্রত্যেক ম্যাচে নির্বাসিত হতো। আগেকার দিনে স্লেজিংয়ের মাস্টার বলে কেউ থাকলে, সেটা জাভেদ-ই।
আরও পড়ুন: আইসিসি-র ইঙ্গিত, শান্তি রক্ষার দায় দুই ক্যাপ্টেনের
এক বার পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে পাকিস্তানের ম্যাচ চলছিল। আমি ব্যাট করতে আসতেই স্লিপ থেকে জাভেদ কথা বলতে শুরু করে দিল। সে সব কথা স্টাম্প মাইক্রোফোনের যুগে বলা হলে নিশ্চয়ই বাচ্চাদের ক্রিকেট দেখা নিষিদ্ধ হয়ে যেত। সেই সময় জাভেদের স্লেজিংয়ে কিন্তু আমি কিছুটা হলেও প্রভাবিত হয়ে পড়লাম। দু’বার স্টান্স নিয়েও উঠে দাঁড়ালাম। আম্পায়ারকে বললাম, কথা বলছে পিছন থেকে। জাভেদ তক্ষুনি হাত নেড়ে বলতে থাকল, কে কথা বলছে! আমি তো চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছি স্লিপে ওর ক্যাচটা ধরব বলে!
এখন এ সব বলে পার পাওয়া কঠিন। সব কিছুই ম্যাচ রেফারি টিভি-তে দেখে নিতে পারবেন, শুনে নিতে পারবেন। তবে অবাক হচ্ছি, অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যমের মনোভাবে। ওদের দেখে মনে হচ্ছে, যেন অদৃশ্য ব্যাগি গ্রিন পরে আছে। বিরাট কোহালিকে সিরিজের শুরু থেকেই মাঠে আক্রমণ করছে অস্ট্রেলীয় দল। মাঠের বাইরে ওদের মিডিয়া। বিরাট ক্রিজে আসা মাত্রই তিন-চার জন অস্ট্রেলীয় ওকে ঘিরে ধরছে।
বিরাটকে এই চক্রব্যূহ থেকে বেরতে হবে। দেশের মাটিতে সিরিজ গেলে বড় একটা দাগ লেগে থাকবে। সিরিজটা যে ভাবেই হোক জিততেই হবে। বিরাটকেও রান করতে হবে। আর জয় নিশ্চিত করতে গিয়ে যদি বিরাটকে প্রতিপক্ষের দিকে তেড়ে যেতে হয়, আমার কোনও আপত্তি নেই। আরে বাবা, প্রতিপক্ষ টিমটাও তো অস্ট্রেলিয়া। আমি বিরাট হলে পরিষ্কার বলতাম, মাঠে অভব্যতা করাটা তো তোরাই শেখালি!