ফের জোকারে বিধ্বস্ত ফেডেরার। ছবি: রয়টার্স
গ্র্যান্ড স্ল্যামে জকোভিচের যে রকম জমকালো সাফল্য তাতে এখনকার জমানার টেনিসে ও অবশ্যই এক জন গ্রেটেস্ট প্লেয়ার। কোনও দিন ফরাসি ওপেন চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে তখন ওকে সর্বকালের গ্রেটেস্টদের মধ্যেও রাখতে হবে।
এ বছর উইম্বলডনের পর ইউএস ওপেন ফাইনালেও ফেডেরারকে হারিয়ে (রবিবার মাঝরাত্রের বৃষ্টিতে তিন ঘণ্টা পিছিয়ে যাওয়া চূড়ান্ত ম্যাচের স্কোরলাইন জকোভিচের পক্ষে ৬-৪, ৫-৭, ৬-৪, ৬-৪) দশ নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম পেল। আঠাশ বছর বয়স। এখনও কম করে বছর পাঁচেক টপ লেভেলে খেলবে। ফেডেরারের ১৭টা গ্র্যান্ড স্ল্যামকে যদি না-ও টপকায়, তার কাছাকাছি যাবে নিশ্চয়ই।
এর পরেও কিন্তু ঠিক যে রকমের প্রচারের আলো, ভক্তদের মাতামাতি ওর প্রাপ্য ততটা জকোভিচকে ঘিরে নেই। টেনিসে এখন ফ্যাব ফোর বলা হয় যে চারকে, সেই ফেডেরার, নাদাল এমনকী অ্যান্ডি মারেকে নিয়েও মিডিয়ার আগ্রহ বেশি। কারণ মনে হয়, জকোভিচ সার্বিয়ার মতো প্রচারে একটু পিছিয়ে থাকার দেশের প্লেয়ার বলে। আমেরিকা, ব্রিটেন তো বটেই, ও যদি স্পেন, সুইডেন, সুইৎজারল্যান্ডের প্লেয়ারও হত, তা হলে এত দিনে সেই দেশের মিডিয়া ওকে সর্বকালের সেরা টেনিস প্লেয়ারের তকমা দিয়ে দিত।
সেরিনার ক্যালেন্ডার গ্র্যান্ড স্ল্যাম হাতছাড়া হওয়া নিয়ে এত হা-হুতাশ। কিন্তু অনেকে হয়তো ভুলে যাচ্ছেন, সেরিনার চেয়েও এ বছর ক্যালেন্ডার স্ল্যাম করার কাছাকাছি এসেছে জকোভিচ। সেরিনা ২০১৫-এ তিনটে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার পাশে যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে হেরেছে সেমিফাইনালে। জকোভিচ সেখানে এ বার চারটে গ্র্যান্ড স্ল্যামেই ফাইনালে উঠে তিনটেয় চ্যাম্পিয়ন। ফরাসি ওপেন ফাইনালে যে দিন ও হেরেছিল, ওয়ারিঙ্কা অন্য গ্রহের টেনিস খেলেছিল।
জকোভিচের সেরা অস্ত্র তিনটে— ডাবল হ্যান্ডেড ব্যাকহ্যান্ড রিটার্ন। সম্ভবত সর্বকালের সেরা। ফিটনেস। কোর্ট কভারিং। এমনিতে দেখলে রোগাসোগা লাগে। নাদালের মতো পেশিবহুল লাগে না। আসলে কিন্তু প্রচণ্ড পাওয়ারফুল। দু’টো পা প্রচণ্ড শক্তিশালী। ফ্লাশিং মেডোর ফাইনালে ও যে স্পিডে কোর্টময় দৌড়েছে আর প্রায় সব শট অন্য দিনের চেয়ে ৩৫-৪০ শতাংশ বেশি পেস-এ মেরেছে, তার সামনে ফেডেরারের যাবতীয় স্ট্র্যাটেজি মাঠে মারা গিয়েছে। এমনকী দ্বিতীয় সার্ভিসে নেটের সামনে নতুন স্টাইলে ধেয়ে আসার ছকও কাজে আসেনি। আগেই বলেছিলাম, ফাইনাল যত বেশি সময় ধরে চলবে জকোভিচের জেতার সুযোগ ততই বেশি। চৌত্রিশ বছর বয়সে লম্বা র্যালির মতোই লম্বা ম্যাচ জেতাও কঠিন ফেডেরারের। জকোভিচ এমনই এক ইঞ্জিন, যেটা যত বেশি চলে ততই গরম হয়, আরও বেশি ছোটে!
বরিস বেকারের মতো হাই প্রোফাইল প্রাক্তন প্লেয়ারকে কোচ পেয়েও জকোভিচের লাভ হয়েছে। বেকারে নেটের সামনে সেই রিফ্লেক্স, জমাট ভলির প্রভাব পড়েছে শিষ্যের খেলায়। জকোভিচের সার্ভিসটাই যা ওর মতো বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরের বিচারে একটু হলেও কমা। কিন্তু তাতেও বিগ পয়েন্ট জেতার প্রথম শর্ত হিসেবে ফার্স্ট সার্ভ ভাল করার ধারাবাহিকতা ইদানীং জকোভিচের দারুণ। সেটাও আমার মতে ‘বুম বুম’ বেকারের দৃঢ় মানসিকার প্রভাব শিষ্যের উপর।