Gymnastics

অলিম্পিক্স থেকে পদক আনতে চান খেলো ইন্ডিয়ায় সাড়া ফেলা উপাসা আর প্রিয়াঙ্কা

দুই কিশোরী জিমন্যাস্ট অসমের উপাসা তালুকদার আর ত্রিপুরার প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্তের পাখির চোখ অলিম্পিকের পদক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২০ ১৩:১৮
Share:

প্রিয়াঙ্কা ও তাঁর কোচ সোমা নন্দী।

একজন জন্মগত প্রতিভা। কিন্তু এখনও খুঁজে পায়নি প্রতিভায় শাণ দিতে পারা উপযুক্ত দ্রোণাচার্যকে। অন্য জন তাঁর প্রশিক্ষকের মধ্যেই খুঁজে পেয়েছে দ্বিতীয় মা’কে। খেলো ইন্ডিয়ায় সাড়া ফেলা দুই কিশোরী জিমন্যাস্ট অসমের উপাসা তালুকদার আর ত্রিপুরার প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্তের পাখির চোখ অলিম্পিকের পদক।

Advertisement

২৮ বছর পরে জাতীয় পর্যায়ে জিমন্যাস্টিক্সে পদক এল অসমের ঝুলিতে। অল রাউন্ড শাখায় একটি ব্রোঞ্জেই অভিনন্দনের সীমা ছিল না। কিন্তু উপাসা তার পরেও রাজ্যের জন্য জিমন্যাস্টিক্স বলে রূপো এবং রোপ-এ ব্রোঞ্জ নিয়ে এল। গুয়াহাটির উলুবাড়ির বাসিন্দা ১২ বছরের উপাসা তালুকদারকে যদি একলব্য বলা হয়, তাহলে তাঁর দ্রোণাচার্য ‘ইউটিউব’।

কারণ, অসমে কেউ কখনও রিদমিক জিমন্যাস্টিক্সে নামেনি। তাই রাজ্যে নেই পরিকাঠামো, প্রশিক্ষক। বাবা নিকুঞ্জ তালুকদার ও মা শেফালি ডেকা ছোট থেকেই দেখছেন, আদরের মেয়ে নিকুর হাত-পা খুব নমনীয়। হাত ব্যস্ত থাকলে, পা দিয়েই অনায়াসে কান চুলকে নিত। জিমন্যাস্টিক প্রশিক্ষক ঘনজ্যোতি দাস উপাসার করসৎ দেখে জানান, এই মেয়ে রিদমিক জিমন্যাস্টের পক্ষে আদর্শ। গোটা উত্তর-পূর্বে কোন প্রশিক্ষক খুঁজে পাননি নিকুঞ্জবাবু।

Advertisement

খেলো ইন্ডিয়ায় সাড়া ফেলে দিয়েছে উপাসা।

শেষ পর্যন্ত ইউটিউবে ইউক্রেনের অ্যানা বেসোনোভা, একাতেরিনা সেরেব্রিয়ানস্কায়া, তামারা ইয়েরোফিয়েভা, রাশিয়ার ইরিনা চাচিনা, ইয়েভজেনিয়া কানায়েভা ও অ্যালিনা কাবায়েভারার কসরৎ, নৃত্যশৈলী, বিভঙ্গ অনুকরণ করে শুরু হয় একলব্যের সাধনা।

রাশিয়ার জিমন্যাস্টদের কায়দায় রোল, স্ট্রেচিং, বল, ক্লাব, হুপ, লিপ সব শিখে নেয় ১০ বছরের মেয়েটা। কিন্তু বলের কসরৎ, শরীরের ভারসাম্য, কোরিওগ্রাফির ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছিল। ওই ভাবেই হরিয়ানায় সিবিএসই ন্যাশনাল জিমন্যাস্টিক্সে সোনা, ক্লাব রুটিনে রুপো আসে। এরপর ২০১৭ সালের নভেম্বর জাতীয় স্কুল জিমন্যাস্টিক প্রতিযোগিতায় দু’টো সোনা ও একটি রূপো জেতে উপাসা। রাশিয়ান প্রশিক্ষক মারিনা তাকে রাশিয়ায় ডেকে পাঠান। কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে মেয়েকে দীর্ঘদিনের জন্য রাশিয়ায় পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ানো সম্ভব হয়নি। অসমের প্রশিক্ষক শিবশঙ্কর রায়ের তত্ত্বাবধানেই অনুশীলন চলছে তার। দেশের কয়েকটি প্রশিক্ষণ শিবিরে পেয়েছে খাপছাড়া প্রশিক্ষণ। দিনে চার-পাঁচ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ চালানো উপাসা আরও বেশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নিজেকে অলিম্পিকের স্তরে তুলে আনতে চায়। তার আশা শীঘ্রই উপযুক্ত একজন প্রশিক্ষক খুঁজে পাবে।

এ দিকে দীপা কর্মকারের শহর থেকে আসা বিস্ময় প্রতিভা প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত জিমন্যাস্টিক্সে অল রাউন্ড, ব্যালান্সিং বিম, ফ্লোর এক্সারসাইজ আর ভল্টিং টেবিলে চারটি সোনা পেয়েও আত্মতুষ্ট নয়। দীপার ভক্ত ১৬ বছরের মেয়েটা বরং বেশি চিন্তিত তার দুর্বলতাগুলো নিয়ে। সে বলে, “দীপাদি আমায় বলেছে ফোকাস যেন নড়ে না যায়। আনন্দে ভাসলে চলবে না। জিমন্যাস্টিক্সে সাফল্যের চাবিকাঠিই ঠান্ডা মাথা ও ইচ্ছাশক্তি।” ছোট থেকেই দুরন্ত মেয়েটাকে প্রতিবেশীর পরামর্শে বিবেকানন্দ ব্যায়ামাগারে পাঠিয়েছিলেন মা ভবানী দাশগুপ্ত। আর ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রিয়াঙ্কাকে সেখান থেকে এই পর্যায়ে তুলে এনেছেন প্রশিক্ষক সোমা নন্দী।

প্রিয়াঙ্কা বলে, হাতে ধরে সব শেখানো, বকা, ভালবাসা-সবই সোমা ম্যাডামকে ঘিরে। তিনি আমার দ্বিতীয় মা। সোমাদেবীর কাছে অবশ্য ছাত্রীর এমন সাফল্য নতুন অভিজ্ঞতা নয়। কারণ অতীতে তিনিই দীপাকে প্রশিক্ষণ দিতেন। পরে স্বামী বিশ্বেশ্বর নন্দী দীপার ভার নেন। সোমা জানান, যখন প্রিয়াঙ্কাকে প্রথম হাতে পাই তখন তেমন প্রতিভাবান মনে হয়নি। কিন্তু প্রতিভাই শেষ কথা নয়। মাথা স্থির রাখা, সব সময় নতুন কিছু শেখার ইচ্ছে, ধৈর্য, জেদই প্রিয়াঙ্কাকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement