আবিষ্কার: আইপিএলে নজর কাড়লেন উমরান। ফাইল চিত্র
রবিবার কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে অভিষেক ম্যাচেই দেড়শো কিলোমিটার প্রতি-ঘণ্টায় বল করার নজির গড়েছেন জম্মু ও কাশ্মীরের উমরান মালিক। প্রথম ভারতীয় পেসার হিসেবে আইপিএলে এই কীর্তি গড়লেন এমন এক জন, যাঁর নেট বোলার হিসেবেই এ বারের যাত্রা শেষ হয়ে যেতে পারত সানরাইজ়ার্স হায়দরাবাদ শিবিরে। তা যদিও হয়নি। অভিষেক ম্যাচে চার ওভারে মাত্র ২৭ রান দেন তরুণ।
বাঁ-হাতি পেসার টি নটরাজনের করোনা হওয়ার পরে কয়েক দিনের জন্য পরিবর্ত হিসেবে মূল দলে নেওয়া হয় উমরানকে। কিন্তু নেটে ডেভিড ওয়ার্নারকে এতটাই সমস্যায় ফেলেছিলেন যে, ২১ বছরের পেসারকে প্রথম একাদশে নিতে রাজি হয়ে যান অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন।
ছোটবেলা থেকেই ভারতের হয়ে ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন দেখতেন জম্মুর গুজ্জার নগরের বাসিন্দা উমরান। কিন্তু সেখানে পরিকাঠামোর অভাবে খুব একটা বেশি ক্রিকেট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল না। মাত্র একটি প্র্যাক্টিস পিচ ছিল শহরে। সেখানেই অনুশীলন করাতেন রণধীর সিংহ মানহাস। একটি টেনিস বলের ম্যাচ থেকে উমরানকে পছন্দ হয়ে যায় মানহাসের। তাঁকে ক্যাম্পে ডেকেও পাঠানো হয়। শুরুর দিকে প্র্যাক্টিসে মন বসত না ছোট্ট উমরানের। এক দিন আসতেন, তো তিন দিন চলে যেতেন টেনিস বলের ক্রিকেট খেলতে। খাটনি কম, পারিশ্রমিকও পাওয়া যেত। ১৫ বছর বয়সি কিশোরের কাছে ৫০০ টাকার মূল্য ছিল অনেক বেশি। তা ছাড়া উমরানের পরিবারের অবস্থাও খুব একটা ভাল ছিল না।
উমরানের বাবা আব্দুল রশিদ মালিক ফল বিক্রেতা। দুই মেয়ে ও এক ছেলের সংসারে ছোট থেকেই আর্থিক সাহায্য করত উমরান। রশিদের কাছে এসেই কোচ অনুরোধ করেন, তাঁর ছেলে যেন নিয়মিত প্র্যাক্টিসে আসে। সোমবার আনন্দবাজারকে রশিদ বলছিলেন, ‘‘কোচের ধমকই ওকে টেনিস বলের ক্রিকেট থেকে লাল বলের ক্রিকেটে আসতে সাহায্য করে। পড়াশোনাও ছেড়ে দেয়। দশম শ্রেণির পরীক্ষাও দেওয়া হয়নি ওর।’’ হবেই বা কী করে, তত দিনে রাজ্যের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সুযোগ পেয়ে গিয়েছেন উমরান। সেখানে খুব একটা কিছু করতে না পারলেও অনূর্ধ্ব-২৩ প্রতিযোগিতায় নজরে পড়ে যায় ইরফান পাঠান ও তৎকালীন জম্মু ও কাশ্মীরের অধিনায়ক পারভেজ় রসুলের। ইরফানরা যেখানে সিনিয়রদের প্র্যাক্টিস করাতেন, তার পাশেই চলছিল উমরানদের ম্যাচ। রসুলের কাছে তখন ইরফান জানতে চেয়েছিলেন, ছেলেটি কে? রসুল ফোনে বলছিলেন, ‘‘ইরফানের প্রশ্নের উত্তর আমার কাছেও ছিল না। কখনও দেখিইনি ওকে। তখন আব্দুল সামাদ দৌড়ে এসে ইরফান ভাইকে বলে, ও আমার বন্ধু। ওর নাম উমরান।’’ সামাদও বর্তমানে সানরাইজ়ার্স হায়দরাবাদের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ক্রিকেটার। সামাদের হাত ধরেই ইরফানের সঙ্গে প্রথম আলাপ হয় উমরানের।
জম্মু ও কাশ্মীরের নেটে উমরানের বোলিং অ্যাকশন দেখে ইরফান বুঝতে পারেন, গতি থাকলেও ক্রমাগত একই লাইন ও লেংথে বল করতে পারেন না উমরান। এমনকি সুইংও করত না তাঁর বল। রসুল বলছিলেন, ‘‘ইরফান ভাই আমাকে এসে বলেছিল, ছেলেটার মধ্যে গতি আছে। অ্যাকশন পাল্টে দিতে হবে।’’ যোগ করেন, ‘‘বল করার আগে অতিরিক্ত লাফ দিত উমরান। ওর অ্যাকশনও ছিল ‘ওপেন চেস্ট’। তাতে সুইং কম হয়। ইরফান ভাই ওকে আড়াআড়ি অ্যাকশনে বল করার নির্দেশ দিল। দেখা গেল, বল আউটসুইং করছে। তখনই বলে দিয়েছিল, ও লম্বা রেসের ঘোড়া।’’