ফের বিতর্কের সামনে ইউরোপের ফুটবলে সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা উয়েফা। শুক্রবারই এক তদন্তমূলক রিপোর্ট জনসমক্ষে এনেছে ফুটবল লিকস্ নামে একটি সংস্থা। যে রিপোর্টে বলা হয়েছে, আর্থিক বেনিয়ম ধামাচাপা দিতে প্যারিস সাঁ জারমাঁ ও ম্যাঞ্চেস্টার সিটিকে সহায়তা করেছিল উয়েফা।
জানা গিয়েছে, গত আট মাসেরও বেশি সময় ধরে আশিজন সাংবাদিক সাত কোটির বেশি তথ্যপ্রমাণ বিশ্লেষণ করে এই রিপোর্ট তৈরি করেছেন। রিপোর্টের এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘জ্ঞাতসারেই মিশেল প্লাতিনি ও ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফ্যান্টিনোর নেতৃত্বে ইউরোপের দুই ক্লাব ম্যাঞ্চেস্টার সিটি ও প্যারিস সাঁ জারমাঁ-র আর্থিক অস্বচ্ছতা ঢাকতে সাহায্য করা হয়েছিল। যার পিছনে ছিল রাজনৈতিক কারণও। এই দুই ক্লাবই ফিনান্সিয়াল ফেয়ার প্লে (এফএফপি) নিয়ম ভাঙার পরেও শাস্তি পায়নি নিয়ামক সংস্থার বদান্যতায়। যদি শাস্তি পেত তা হলে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলাই হত না পিএসজি ও ম্যান সিটির।’ উল্লেখ্য, এই দুই ক্লাবই পরিচালিত হয় মধ্যপ্রাচ্যের কাতার ও আবুধাবি থেকে।
ফুটবল লিকস্-এর রিপোর্টে আরও দাবি করা হয়েছে, গত সাত বছর ধরে কাতার ও আবুধাবি থেকে এই দুই ক্লাবে ৪.৫ বিলিয়ন ইউরো (ভারতীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ সাইত্রিশ হাজার তিনশো সাতষট্টি কোটি টাকার বেশি) ঢালা হয়েছে। যার উদ্দেশ্য ছিল, এই দুই ক্লাবের বাজেট বাড়িয়ে দেওয়া। এ ছাড়াও ফুটবল লিকস্ আঙুল তুলেছে কাতার টুরিজম অথরিটি (কিউটিএ)-র সঙ্গে পিএসজি-র পাঁচ বছরের চুক্তির দিকে। যে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী প্রতি বছর ২১৫ মিলিয়ন ইউরো (ভারতীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ এক হাজার সাতশো পঁচাশি কোটির বেশি টাকা) পেত পিএসজি।
রিপোর্টে আরও জানা গিয়েছে, চুক্তি খতিয়ে দেখতে দুই নিরপেক্ষ হিসাব পরীক্ষককে নিযুক্ত করেছিল উয়েফা। তাদের নিয়ম অনুযায়ী, ইউরোপের কোনও ক্লাবই মরসুমে তাদের যা আয় তার চেয়ে বেশি খরচ করতে পারে না। আর তিন বছরে ঘাটতি যেন তিরিশ মিলিয়ন ইউরো (২৪৯ কোটি টাকার বেশি) না ছাড়ায়।
২০১৪ সালে পিএসজি ও ম্যান সিটি দুই ক্লাবকেই ৬০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করেছিল উয়েফা। ভারতীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৪৯৮ কোটি টাকার বেশি। সঙ্গে এটাও দুই ক্লাবকে জানানো হয়েছিল, যদি তারা চুক্তি মেনে চলে তা হলে ৪০ মিলিয়ন ইউরো অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় তিনশো বত্রিশ কোটি টাকার বেশি অর্থ ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
ফরাসি তদন্তকারী এক ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, এর পরেই আসরে নামেন ফিফার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইনফ্যান্টিনো। তিনিই তখন উয়েফার মহাসচিব ছিলেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘ইনফ্যান্টিনো সরাসরি মধ্যস্থতা করেন ম্যাঞ্চেস্টার সিটির চুক্তিতে। উয়েফার আর্থিক নিয়ন্ত্রক বোর্ডের নিয়ম সরিয়ে তিনিই প্রস্তাব দেন ৬০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা না করে পিএসজি ও ম্যাঞ্চেস্টার সিটিকে জরিমানা করা হোক ২০ মিলিয়ন ইউরো (ভারতীয় মুদ্রায় একশো ছেষট্টি কোটি টাকার বেশি)।যে প্রসঙ্গে ম্যান সিটির চেয়ারম্যান খালদুন আল মুবারককে পাঠানো ইনফ্যান্টিনোর ই-মেলও উঠে এসেছে তদন্ত রিপোর্টে। এ ছাড়াও উঠে এসেছে প্রাক্তন ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজির নামও। যিনি নিজে একজন পিএসজি সমর্থক। যদিও সারকোজির প্রেস অফিসার ফরাসি ওই ওয়েবসাইটকে জানিয়েছেন, ‘‘যাদের নাম করা হচ্ছে তাদের একজন আইনজীবী হিসেবে সারকোজি কোনও পরামর্শ দেননি। পিএসজিকে কালিমালিপ্ত করতেই এই ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’’
পাশাপাশি ফিফাও এ ব্যাপারে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, ‘বিশ্ব ফুটবলের নিয়ামক সংস্থাকে কলুষিত করার একটি সংগঠিত প্রয়াস এটি। বিশেষ করে ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফ্যান্টিনো এবং মহাসচিব ফাতমা সামৌরাকে অপদস্থ করার চেষ্টা।’
ইনফ্যান্টিনোও এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘সকলকে এক সঙ্গে নিয়ে এগোবার সময় যে কোনও বিষয় পরিবর্তন করা একটি চ্যালেঞ্জ। ফিফার সংস্কারকার্য চালাতে গিয়ে আমি জানতাম বিপক্ষের কড়া প্রতিরোধের সামনাসামনি হতে হবে। কারণ এখন তাদের লাভের পথটা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’
অভিযোগ অস্বীকার করেছে পিএসজিও। তাদের ডিরেক্টর জেনারেল জাঁ ক্লদ ব্লাঁ জানিয়েছেন, ‘‘উয়েফার সঙ্গে কোনও গোপন চুক্তি হয়নি। স্বচ্ছতা নিয়েই সব কাজ
হয়েছে পিএসজিতে।’’