প্রত্যাবর্তন। ফের ক্লাব তাঁবুতে দেবব্রত সরকার। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।
দু’শো পঁচিশ দিন পর ফের ক্লাবে এলেন তিনি। লাল-হলুদ পুষ্পস্তবক দিয়ে তাঁকে শুভেচ্ছা জানালেন ক্লাব কর্মীরা। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকারের প্রত্যাবর্তনের দিন ফুল বিছানো হল কোথায়? বরং তাঁর ক্লাবে পা রাখার দিনেই একই সঙ্গে দু’টো ঘটনা ঘটল।
এক, সিনিয়র দলের সহকারী কোচের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে সুজিত চক্রবর্তীকে পাঠিয়ে দেওয়া হল ইউথ ডেভেলপমেন্টের দায়িত্বে। ক্লাব বলে দিল, ‘‘আপাতত সহকারী কোচের প্রয়োজন নেই।’’ যা নিয়ে ক্লাবেই প্রশ্ন, তা হলে সুজিতকে সহকারী কোচের দায়িত্বে আনা হল কেন? মরসুম শেষ হতে যখন মাত্র দু’মাস বাকি তখন কেন এই তাড়াহুড়ো? তা হলে কি কোচের সঙ্গে সহকারির কাজটা এখন টেকনিক্যাল ম্যানেজারই সামলাবেন?
দ্বিতীয় ঘটনার ব্যাপ্তি আরও বড়। শিলংয়ে হারের পর ফেসবুকে ক্লাব প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন স্পনসর ইউবি গ্রুপের প্রতিনিধি অমিত সেন। যার জেরে ফের ভেসে উঠেছে ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের নাম। মঙ্গলবার রয়্যাল ওয়াহিংডোর কাছে ০-১ হারার পরই অমিতবাবু মন্তব্য করেন, ‘‘টিমের দুরবস্থা দেখে কষ্ট হচ্ছে। মর্গ্যানকে ফেরানোর সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট হয়েছে একজনের ইগো এবং দুর্বোধ্য আচরণে। আর কী হবে?’’ নাম না করলেও তাঁর মন্তব্যের তির ইস্টবেঙ্গল সচিবের দিকে কি না তা নিয়ে সকাল থেকেই জল্পনা শুরু হয়ে যায় ময়দানে। মঙ্গলবার হারার পর ক্লাব সচিব কল্যাণ মজুমদার বলেন, ‘‘এ রকম চললে আগামী বছর স্পনসর পাওয়া সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।’’ তার চব্বিশ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই স্পনসরদের প্রতিনিধির এই মন্তব্য জল্পনা আরও বাড়িয়েছে।
অমিতবাবু ফোনে ওই মন্তব্যের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘‘ক্লাব প্রশাসন নয়। লাল-হলুদের একজন আজীবন সদস্য হিসেবে ফেসবুকে এক বন্ধুর সঙ্গে আড্ডায় ওটা লিখেছিলাম। এ বার থেকে সতর্ক হতে হবে।’’ তবে সঙ্গে এটাও তিনি বলতে ভোলেননি, ‘‘মর্গ্যান চলে যাওয়ার পর কলকাতা লিগ ছাড়া সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে ক্লাবের সাফল্য কোথায়? আর্মান্দো বিদায়ের পর মর্গ্যানকে আনার জন্য এগিয়েও পেছোতে হয়েছে ক্লাব সে রকম সমথর্ন না করায়।’’
দীর্ঘ দিন পর নিজের ঘরে বসে অন্যতম শীর্ষ কর্তা দেবব্রতবাবু যদিও বললেন, ‘‘চল্লিশ বছর ক্লাব করছি। এগুলো কোনও সমস্যাই নয়। ক্লাবের সিদ্ধান্ত হয় সমষ্টিগত ভাবে।’’ তবে পরিস্থিতি এতটাও সরল নয়। এ দিন বিকেলে কর্মসমিতির বৈঠক ছিল লাল-হলুদে। সেখানে আগামী বছরের দল গঠন ও বাজেট প্রাধান্য পেলেও ইউবি প্রতিনিধির মন্তব্য নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে খবর।
তবে মিডিয়ার সামনে বিষয়টি নিয়ে লাল-হলুদের বাকি শীর্ষ কর্তারা কড়া মন্তব্য করেননি। ক্লাব সভাপতি প্রণব দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘ফেসবুকে কেউ ব্যক্তিগত ভাবে কী বলছে তা গুরুত্ব দিচ্ছি না।’’ যাঁকে উদ্দেশ্য করে অমিতবাবুর এই মন্তব্য ইস্টবেঙ্গল সচিব কল্যাণও প্রেসিডেন্টকে পাশে বসিয়ে বলেন,‘‘সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং নয়, ক্লাব করতে এসেছি। ব্যর্থ মনে করলে ক্লাব সরিয়ে দিক।’’
তবে ক্লাবের বতর্মান পরিস্থিতিতে মর্গ্যান নিয়ে স্পনসরদের প্রতিনিধির মন্তব্যে এলকোর ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা থাকছেই। ইস্টবেঙ্গলে তিন মরসুমের ইনিংসে ট্রেভর মর্গ্যান আই লিগ আনতে না পারলেও তেরোটি ডার্বির মধ্যে জেতেন ন’টা। দু’বার ফেড কাপ ও তিন বার কলকাতা লিগ জয়ী, জিতেছেন আইএফএ শিল্ডও। মেহতাবদের নিয়ে যান এএফসি কাপ কোয়ার্টার ফাইনালেও। এ বার ক্লাবের প্রধান স্পনসরদের প্রতিনিধি তাঁর পক্ষে সওয়াল করার পর আগামী মরসুমে ইস্টবেঙ্গল মাঠে ফের বাঁশি মুখে ব্রিটিশ কোচকে দেখা যাবে কি?
অন্যতম শীর্ষ কর্তা দেবব্রতবাবু বলছেন, ‘‘দু’একদিনের মধ্যেই সকালে অনুশীলনে এসে কোচ এবং ফুটবলারদের সঙ্গে আলোচনায় বসছি। পরের মরসুমে কে কোচ হবেন তা এই মরসুম শেষে সকলে মিলে আলোচনার পর ঠিক করব।’’