ডি’ককদের আপত্তি, সিরিজ আপাতত বন্ধ
IPL

আইপিএলকে রক্ষার চেষ্টায় ‘ডাবল ম্যাচ’ হয়তো বাড়ছে

মুম্বইয়ে শুক্রবার ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের শীর্ষ কর্তারা আইপিএল নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন। বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং সচিব অমিত শাহ-পুত্র জয় শাহ সেই বৈঠকে মুখ্য ভূমিকা নেন।

Advertisement

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২০ ০৪:১২
Share:

ধাক্কা: বন্ধ হয়ে গেল ধোনির সিএসকে-র প্র্যাক্টিসও। ফাইল চিত্র

করোনাভাইরাসের জেরে আশঙ্কা মতোই আগামী ২৯ মার্চ শুরু হচ্ছে না আইপিএল। অন্তত ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত তা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই মুহূর্তে যা খবর, চেষ্টা হচ্ছে ১৫ এপ্রিল যদি টুর্নামেন্ট চালু করা যায়। তবে সেই ‘চেষ্টা’ নির্ভর করবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আগামী এক মাসে কতটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তার উপরে।

Advertisement

মুম্বইয়ে শুক্রবার ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের শীর্ষ কর্তারা আইপিএল নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন। বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং সচিব অমিত শাহ-পুত্র জয় শাহ সেই বৈঠকে মুখ্য ভূমিকা নেন। একটা বিকল্প সূচিও ভেবে রাখতে চাইছেন বোর্ড কর্তারা। তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

কিন্তু আইপিএল নিয়ে আলোচনার মধ্যেই ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা চলতি ওয়ান ডে সিরিজ নিয়ে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তে বসতে হয় সৌরভদের। বিভিন্ন জায়গায় যে ভাবে করোনাভাইরাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে খেলা চালানো ঠিক হবে কি না, সেই প্রশ্ন ওঠে। ফাঁকা স্টেডিয়াম করে দিলেও বিদেশে নানা খেলায় দেখা যাচ্ছে করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ছে নানা দলের মধ্যেও। ফুটবলে চেলসির ফুটবলার আক্রান্ত, আর্সেনালের কোচের পরীক্ষার ফল ‘পজিটিভ’ এসেছে, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোদের জুভেন্টাসকে তাড়া করছে ভয়, রিয়াল মাদ্রিদের পুরো দলকে বিচ্ছিন্ন রাখতে হচ্ছে। ক্রিকেটারদের মধ্যেও করোনা সন্দেহে পরীক্ষা করা শুরু হয়েছে। সারা বিশ্বে সমস্ত খেলাধুলোই কার্যত বন্ধ।

Advertisement

এমন উদ্বেগের আবহে দ্বিতীয় ওয়ান ডে খেলতে দু’দল পৌঁছয় লখনউতে। কারও কারও বেশ অশান্তি শুরু হয় কারণ উত্তর প্রদেশে অন্তত এগারো জনের করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা দু’দলকে যদিও চার্টার্ড ফ্লাইটে ভ্রমণ করানো হচ্ছিল এবং ডাক্তারি পরামর্শ মেনে বার বার হাত ধোয়ার জন্য ‘স্যানিটাইজ়ার’ও দেওয়া হয়েছিল।

সূত্রের খবর, সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা দল আপত্তি তুলতে শুরু করে সিরিজ চালিয়ে যাওয়া নিয়ে। কুইন্টন ডি’ককদের দলে অনেকে বলতে থাকেন, এই পরিস্থিতিতে সুস্থতা এবং নিরাপত্তার দিকটা সব চেয়ে জরুরি। বোর্ডের মধ্যে এক জন প্রস্তাব দেন, একটা কেন্দ্রেই দু’টো ম্যাচ করে ফেলা হোক। দর্শক যখন আসবেই না, কেন্দ্র বদল করে কী লাভ? কিন্তু সেই ঝুঁকিও আর নিতে চাননি সৌরভরা। সারা বিশ্বে যেখানে সব খেলা, সব স্টেডিয়ামের দরজা একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সেখানে ভারতীয় ক্রিকেট কী করে ব্যতিক্রমী হয়ে থাকতে পারে? দ্বিপাক্ষিক ওয়ান ডে সিরিজ বাতিলই করে দেয় বোর্ড। ঠিক হয়, পরিস্থিতি আয়ত্বে এলে সিরিজ তখন আয়োজন করার কথা ভাবা যেতে পারে। ভারতীয় ক্রিকেট দলের মধ্যে থেকে কেউ খেলা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে আপত্তি না-তুললেও সিরিজ বাতিল হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে মনে হয় না কেউ মনঃক্ষুন্ন হয়েছেন। বরং যে ভাবে বিরাট কোহালি, কে এল রাহুলদের দেখা গিয়েছে মুখাবরণ পরে বিমানবন্দরে যেতে, তাতে পরিষ্কার, উদ্বেগের রেশ ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যেও ছড়িয়েছে।

আইপিএল নিয়ে বোর্ড কর্তারা মুম্বইয়ে রাত পর্যন্ত বৈঠকে ব্যস্ত থাকেন। নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বিকল্প হিসেবে যে সব ভাবনা উঠে এসেছে, তা এ রকম— ১) সব কিছু ঠিক হয়ে গেলে একেবারে ১৫ এপ্রিলই শুরু করা যেতে পারে আইপিএল। ২) আগের সূচি অনুযায়ী, আইপিএল হচ্ছিল সাত সপ্তাহের। যদি ১৫ এপ্রিল শুরু করা যায়, তা হলে হবে পাঁচ সপ্তাহের। তাই লক্ষ্য হবে, দুই সপ্তাহের ম্যাচের ঘাটতি মেটানো। শেষের দিকে এক সপ্তাহ যোগ করে মোট ছয় সপ্তাহের করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ৩) আগের সূচিতে এক দিনে দু’টি করে ম্যাচ খুব বেশি দেওয়া হয়নি। মাত্র ছ’দিনই ছিল দু’টি করে ম্যাচ। কারণ, টিভি সম্প্রচারকদের এ নিয়ে আপত্তি ছিল। তাদের যুক্তি ছিল, বিকেলের ম্যাচে খুব বেশি টিভি দর্শক পাওয়া যায় না। যদি করোনার আতঙ্ক মিটিয়ে সত্যিই আইপিএল ১৫ এপ্রিল শুরু করা সম্ভব হয়, একই দিনে দু’টি ম্যাচের সংখ্যা বাড়িয়ে ঘাটতি মেটানো হতে পারে। ৪) বিদেশি ক্রিকেটারদের ভিসা যাতে পাওয়া যায়, তা নিয়েও অপেক্ষা করা জরুরি। বিদেশি ছাড়া বেশির ভাগ দল দুর্বল তো হয়ে হবেই, টুর্নামেন্টের জৌসুলও অর্ধেক হয়ে যাবে।

বোর্ডের দফতরে এ দিন সৌরভরা বৈঠক করেন আইপিএলের সম্প্রচারকারী চ্যানেলের কর্ণধারের সঙ্গেও। সকলে একমত যে, এখন করোনাভাইরাস নিয়ে সাবধানতাই প্রাধান্য পাওয়া উচিত। ২৯ মার্চ শুরু হয়ে ২৪ মে শেষ হচ্ছিল আইপিএল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হয়তো মে মাসের শেষ পর্যন্ত তা টানা হতে পারে। আট দলের মালিক, কর্তাদের ডাকা হয়েছে আজ, শনিবার। সেখানে তাঁদের বক্তব্য শোনা হবে। কেউ কেউ খুব বেশি পিছনে না-টানার পক্ষে মত দিতে পারেন কারণ বিদেশি ক্রিকেটারেরা দেশের হয়ে অন্য সিরিজ খেলতে যেতে পারেন। বোর্ড কর্তাদের মনোভাব দেখে মনে হচ্ছে, তাঁরা এত দূর ভাবছেনই না। আপাতত খেলা করার মতো অবস্থা নেই, তাই আইপিএল স্থগিত। বিশ্বের হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক হলে আবার দেখা যাবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement