সারদা কাণ্ডের জেরে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সিল। কবে সমস্যার সমাধান হবে কেউ জানে না। ক্লাবের এ রকম দমবন্ধ আবহ থেকে টিমকে দূরে রাখতে অনুশীলনে নেমে পড়ল দুই প্রধান।
সোমবার সকালে ফেড কাপের প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন আর্মান্দো কোলাসো এবং সুভাষ ভৌমিক। অথচ দুই টিমের মোট পঁয়ত্রিশ জন ফুটবলারই এখন আইএসএলে। ফলে ভাঙা টিম নিয়েই শুরু হল অনুশীলন।
আসলে ইডি তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘অ্যাটাচ’ করে দেওয়ায় কোনও প্রভাব যে ক্লাবে পড়েনি, এটা বোঝাতেই কর্তাদের অনুশীলনে টিম নামিয়ে দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত। টিমকে চাঙ্গা করতে অবশ্য দুই প্রধান আলাদা আলাদা রাস্তায় হাঁটলেন।
কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই ইস্টবেঙ্গল কোচ আর্মান্দো কোলাসো জানিয়ে দিলেন দলের চার নম্বর বিদেশির নাম। “অস্ট্রেলীয় ডিফেন্ডার মিলান সুসাককে আমরা নিচ্ছি। ওর টিকিট পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাড়াতাড়িই চলে আসবে।” অনুশীলনের পর বলে দিলেন লাল-হলুদের গোয়ান কোচ। পাশাপাশি তাঁর মন্তব্য, “আমি এবং টিমের সব ফুটবলারই ক্লাবের পাশে আছি। সব রকমভাবে ক্লাবকে সাহায্য করতে প্রস্তুত।” কিন্তু কোথা থেকে আসবে চতুর্থ বিদেশির টাকা? কর্তারা সেটা জানাতে পারছেন না।
মোহনবাগান কর্তারা আবার ক্লাবে মুক্ত হাওয়া আনতে অন্য পথে হেঁটেছেন। লাল-হলুদের কোনও বড় কর্তাকে এ দিন মাঠে দেখা যায়নি। তবে বহু দিন পর মোহনবাগান প্রেসিডেন্ট-সহ শীর্ষকর্তারা হাজির সাত সকালের অনুশীলনে। সোনি নর্ডি, কাতসুমিদের কোনও ‘ভয় নেই’ বলে আশ্বস্ত করার পাশাপাশি টুটু-অঞ্জনরা উত্সাহ দিলেন ভুটানের আসন্ন কিংস কাপের জন্য। যে টুর্নামেন্টে মোহনবাগানের প্রথম ম্যাচ রয়েছে ২২ নভেম্বর।
কলকাতা লিগের পর ইস্টবেঙ্গল কোচ নিজেই পুরো টিমকে ছুটি দিয়ে দিয়েছিলেন। দু’বার অনুশীলনের তারিখও পিছিয়ে দেন গোয়াতে বসেই। আর ইডি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সিল করার পর বাগান কর্তারা ‘টাকা নেই’ ধুয়ো তুলে বন্ধ করে দিয়েছিলেন অনুশীলন। সিকিম গোল্ড কাপেও দল পাঠাননি। ফলে বহু দিন পর (ইস্টবেঙ্গল প্রায় দু’মাস, মোহনবাগান প্রায় এক মাস) শুরু হল অনুশীলন। তবে দুই প্রধানেই তো ভাঙা হাট। বাগানে তবু চার বিদেশি ছিলেন মাঠে। ইস্টবেঙ্গলে তো বেশির ভাগই জুনিয়র ফুটবলার। পুরো বিদেশিহীন।
সতেরো জন ফুটবলারকে নিয়ে অনুশীলন করানোর পর আর্মান্দো জানিয়ে দেন, নতুন বিদেশি আসছেন টিমে। যাঁকে তিনি বেছেছেন সেই মিলান সুসাক অস্ট্রেলিয়ার এ-লিগে খেলেছেন। সিডনি অলিম্পিক, অ্যাডিলেড ইউনাইটেড, ব্রিসবেন রোয়ারের মতো ক্লাবে খেলেছেন। সার্বিয়ার সুপার লিগ সহ খেলেছেন ইন্দোনেশিয়ার প্রিমিয়ার লিগেও। মিলানের জীবনপঞ্জীতে চিনের সুপার লিগ এবং ইরানের প্রো লিগেও খেলার কথা বলা আছে।
তবে লাল-হলুদ কোচের এ দিনের কথা শুনে মনে হল, তিনি এই মুহূর্তে বেশি চিন্তিত আইএসএল ফেরত ফুটবলারদের নিয়ে। ২০ ডিসেম্বর আইএসএল শেষ হবে। তার পর আর্মান্দো পুরো টিম হাতে পাবেন। ফেড কাপ শুরু হচ্ছে ২৮ ডিসেম্বর। এত কম সময়ের মধ্যে পুরো টিমকে এক ছাতার তলায় এনে তাঁদের বোঝাপড়া বাড়ানো কঠিন মনে করছেন গোয়ান কোচ। “ফেড কাপের আগে সব ফুটবলারকে পাব চার দিন। এই সময়ের মধ্যে নতুন করে বোঝাপড়া তৈরি করা কঠিন। তার উপর আবার চোট-আঘাত আছে।”
বাগানে অবশ্য সোনি নর্ডি ছাড়া কেউ সাংবাদিক সম্মেলন করেননি। টিডি-কোচ কেউ না। হাইতির এই স্ট্রাইকার বললেন, “শেখ জামাল আমাকে ব্ল্যাঙ্ক চেক দিয়েছিল। তা সত্ত্বেও নিজের ফুটবল জীবনের কথা ভেবে টাকার পিছনে না দৌড়ে ভারতে খেলতে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” দেশের হয়ে খেলতে ৮ নভেম্বর হাইতি যাচ্ছেন তিনি। সোনির মতোই চমকপ্রদ মন্তব্য করেন তাঁর ক্লাব সচিব অঞ্জন মিত্রও। জানিয়ে দেন লাল-হলুদ সচিব কল্যাণ মজুমদার ইডির বিরুদ্ধে এক সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য ফোন করেছিলেন। “ইস্টবেঙ্গল আর মোহনবাগানের সমস্যাটা এক কী না সেটা আগে দেখতে হবে। আমাদের হিসেবে কোনও গরমিল নেই। যদি সমস্যাটা একরকম হত তা হলে এক সঙ্গে লড়াই করতে সমস্যা হত না।”
এখন দেখার, অনুশীলনে কোচ-ফুটবলারদের নামিয়ে দিলেও, সারদা কাণ্ডের ধাক্কায় বেসামাল দুই ক্লাব কর্তারা কবে পুরো সমস্যার সমাধান করতে পারেন।
চলছে দুই কোচের ক্লাস। সোমবার। ছবি: উত্পল সরকার